ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ম্যাডাম তো একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন!

জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৩
ম্যাডাম তো একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন!

মেলবোর্ন: প্রতি বছর ১৫ আগস্ট এলেই দেশে অদ্ভুত একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়। একদিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যার শোকের আবহ, অন্যদিকে জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী নেত্রীর জন্মদিনের উল্লাস।


 
কে না জানে ১৯৭৫ সালের এই দিনে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে কি বীভত্স ঘটনা ঘটেছিল! কে না জানে কি নির্মম পৈশাচিকতার শিকার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার। কে না জানে অন্ধকার রাতে কাপুরুষোচিত আক্রমণ চালিয়ে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেয়া হয়েছিল ৩২ নম্বরের বাড়িটিতে। কে না জানে গুলির আঘাতে মানুষের সাথে বাড়ির দেয়ালগুলোও ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল।
 
যাঁর হাত ধরে আজ আমরা স্বাধীন দেশে শ্বাস নিতে পারছি, কে না জানে ৩২ নম্বর বাড়ির প্রথম তলার সিঁড়ির মাঝখানে বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে নিথর পড়ে ছিলেন চেক লুঙ্গি ও সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত বঙ্গবন্ধু। প্রধান বেডরুমে বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় বড় দুই ভাবীর মাঝে পড়েছিল ছোট্ট শিশু শেখ রাসেলের লাশ। ঠিক সেই রুমের সামনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু পত্নী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। এ যেন সন্তানকে আগলে রাখার জন্য মায়ের আত্মদান! অথচ মায়ের লাশের উপর দিয়েই নির্বিকারে হেঁটে হায়েনারা কেড়ে নিয়েছিল ছোট্ট রাসেলকে। সেদিনেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসেরসহ আরো অনেককেই।  
 
বঙ্গবন্ধু পরিবারের নির্মম হত্যাযজ্ঞের এই ট্রাজিক ঘটনায় কেউ কেউ হয়ত এখন আর দুঃখিত হয় না। এন্টি-আওয়ামীলীগ কিংবা শুধুই এন্টি-হাসিনা হবার কারণে এই দিনটিকে কেউ কেউ হয়ত সমর্থনও করে থাকেন! কিন্তু সেই সমর্থন যে এত নগ্নভাবে হতে পারে তা দেশবাসী প্রথম পরিলক্ষিত করে ১৯৯৬ সালের পর।
 
কথিত আছে যে, তত্কালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ যে সময় থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোকদিবস পালনের ঘোষণা দেয়, ঠিক সেসময় থেকে হঠা‍ৎ করেই দেশবাসী জানতে পারে যে বিএনপি চেয়ারপার্সনের খালেদা জিয়ার জন্মদিনও নাকি ১৫ আগস্ট!!

মানুষের জন্মদিন ১৫ আগস্ট হতেই পারে। জন্মদিন পালনের কালচার যেহেতু মুসলিম অধ্যুষিত এই দেশটিতে খুবই প্রকট কাজেই একজন ব্যক্তি ইচ্ছে করলেই তার জন্মদিন পালন করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে তখনি যখন রাজনীতির অঙ্গনে ১৯৮১ সাল থেকে দাপিয়ে বেড়ানো, জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমাদের অতি প্রিয় ম্যাডাম জিয়া অতি ঘটা করে হঠাৎ করেই তার জন্মদিনকে স্হানান্তরিত করে ১৫ আগস্ট পালন করা শুরু করেন। যদিও তাঁর জন্মদিন নিয়ে অনেক কথাই দলিল দস্তাবেজসহ চালু আছে, সেসব কথা না হয় আলোচনার বাইরেই রাখলাম। ধরেই নিলাম যে তাঁর জন্মদিন ১৫ আগস্ট।
 
দলের চাটুকারেরা ম্যাডামের বয়সের সাথে মিলিয়ে বাহারি রঙের কেক কেটে, হাত তালি দিয়ে যখন হৈ হুল্লোড় করে জন্মদিন পালন করে, সেই দিনটি সমগ্র জাতির জন্য ঘোষিত একটি শোক দিবস!! শোক দিবসের সাথে সাথে আসলে ম্যাডামের জন্মদিন পালন জাতির জন্য ‘শক’ দিবসেও পরিণত হচ্ছিল।
 
আজ যখন পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখি যে, ম্যাডাম তাঁর কথিত জন্মদিন আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করবেন না, রাত ১২টার পর তাঁর গুলশান কার্যালয়ে ৬৯ পাউন্ডের ঢাউস আকারের ক্রিম দেয়া কেকটি ম্যাডাম কাটবেন না, সত্যি আনন্দিত হয়েছি।
 
যদিও খালেদা জিয়ার প্রেসসচিব কারণ হিসেবে বলেছেন যে, জামায়াতের হরতালের কারণে এবার কেক কাটাকাটির আনুষ্ঠানিকতা হবে না। তারপরও আমরা আনন্দিত যে, এবার জন্মদিনে ম্যাডাম কেক কাটছেন না। মন থেকে কামনা করি প্রতিবছর ১৪ আগস্ট রাতে যেন জামায়াতের হরতাল থাকে, অন্তত জামায়াতের হরতালের অজুহাতে দেশবাসী জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিনের হৈ হুল্লোড় থেকে বেঁচে যাবে।
 
যে যাই বলুক জন্মদিন পালনে ম্যাডাম বিরত আছেন, জাতীয় শোক দিবসে দেখতে হচ্ছে না চাটুকারদের হাততালি, উল্লাস। কট্টর বিএনপি সমর্থকেরাও বোধহয় এবার নিদারুণ লজ্জার হাত থেকে রক্ষা পেল।
 
যে কারণেই হোক জন্মদিন পালনে বিরত থাকার এই সিদ্ধান্তে ম্যাডামকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। আন্তরিকভাবেই চাই, জাতীয় শোক দিবসে ম্যাডামের কথিত ‘জন্মদিন পালন বিরতি’ চালু থাকুক আগামী দিনগুলোতে।

zeniaজিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

 

 

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।