ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রাজনীতিতে জয়ের যোগদান ও জনগণের প্রত্যাশা

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১১৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৩
রাজনীতিতে জয়ের যোগদান ও জনগণের প্রত্যাশা

বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা খুব বেশি নয়। দু’বেলা দু’মুঠো ডালভাত খেয়ে ও মোটা কাপড় পরে শান্তিতে বসবাস করতে চায়।

সন্ত্রাস, দুর্নীতি, হরতাল মুক্ত নিরাপদ স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পন্ন সমাজ ব্যবস্থা চায়।

নাগরিক হিসেবে একটি রাষ্ট্র বা সরকারের কাছে জনগণের এ প্রত্যাশা মোটেও অমূলক নয়। যে রাষ্ট্র জনগণের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ, কিংবা রাষ্ট্রের ক্রিয়াকলাপে যদি জনপ্রত্যশা প্রতিফলিত না হয় তাহলে সে রাষ্ট্রের সার্থকতা কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকার ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

সরকার যেহেতু রাষ্ট্র পরিচালনা করেন সেহেতু রাষ্ট্রের সব সফলতা-ব্যর্থতা স্বাভাবিকভাবেই সরকারের উপর ন্যস্ত হয়। বিরোধী দলের উপর সরকার ব্যর্থতার দায় চাপাবার চেষ্টা করতে পারে বটে, কিন্তু এতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

কথায় বলে, কাজ দিয়ে কাজী। তাছাড়া যে যেমন কাজ করে তার ফল তাকে পেতেই হয়। খুব বেশি দূরের ইতিহাসে যাওয়ার দরকার নেই। বর্তমান বিরোধী দল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা তাদের স্বীয় অস্তিত্বের কথা ভুলে গিয়ে দেশটিকে “হাওয়া ভবন” ভিত্তিক দুর্নীতির একটি রামরাজ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু আজ হাওয়া ভবন হাওয়ায় উড়ছে। এবং পুরো দলকে হাড়ে হাড়ে এর মাশুল দিতে হচ্ছে।

ক্ষমতাসীন বিএনপির অরাজকতায় মানুষ যখন দিশেহারা তখন শীতার্ত বনে বসন্তের আভা ছড়িয়ে দিতে মানুষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিল। দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন পেয়ে শেখ হাসিনা হাসতে হাসতে জোট সরকার গঠন করলেন। মানুষ অনেকটা হাফ ছেড়ে বাঁচল। শেখের মেয়ে আবারো ক্ষমতা পেয়েছে। এবার দেশকে আর পেছনের দিকে তাকাতে হবে না!

কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। বসন্তের ফুলে ফুলে গ্রীষ্মের বারুদ জ্বালিয়ে জনগণের সামনে আবির্ভূত হল পদ্মাসেতু, ডেস্টিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, হলমার্ক ও শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারী। শুধু তাই নয় কিছু কিছু মন্ত্রীর ব্যর্থতা ও চটাং চটাং কথার পাশাপাশি বেরিয়ে এল “কালো বিড়াল” সমেত প্রাণী। সাগর রুনির হত্যাকারীকে ধরার জন্য আটচল্লিশ ঘণ্টার খেলা মানুষ দেখেছে। ইলিয়াসের গুম কাহিনী এখনো মানুষের মুখে মুখে। বস্তুত যে আশা-উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস নিয়ে মানুষ আওয়ামী লীগ ও তার জোটকে ভোট দিয়ে ক্ষমতার মসনদে বসিয়েছিল বাস্তবে তারা তার কিছুই দেখতে পায়নি। সরকার জনগণের প্রত্যাশা প্রতিফলনে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি দেশের পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি আর বিএনপির সিরিজ বিজয় তাই প্রমাণ করে।

বিএনপিকে মানুষ খুব বেশি ভালবেসে ভোট দিয়েছে তা কিন্তু নয়। সরকারের মতো বিএনপিরও বিরোধী দল হিসেবে জনগণের কাছে কিছু কমিটমেন্ট ছিল যেগুলোর ধারে কাছেও তারা যায়নি।

বরং ক্ষমতার মসনদে পৌঁছার সিঁড়িটাকে পাকাপোক্ত করার জন্য যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে গলা মিলানো কিংবা ধর্মকে বাণিজ্যিকীকরণে লিপ্ত এমন দলগুলোর সঙ্গে নিজেদের সখ্য বলিষ্ঠ করাসহ হেন কাজ নেই যে তারা করতে পিছপা হয়েছে। এরপরও জনগণ বিএনপিকে ভোট দিয়ে প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগ তথা বর্তমান সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ অভিব্যক্তিই প্রকাশ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার ইতিহাসে তাঁর নামটি স্বর্ণাক্ষরে লেখানোর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেন নি। দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে সরকার গঠন করেও জনগণের আশা-আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।

পরিবর্তনের কথা বলা হলেও কিছু সুবিধাবাদীর ভাগ্যের পরিবর্তন ছাড়া দেশ বা জাতির বিশেষ কোন পরিবর্তন তারা ঘটাতে পারেন নি। এ ব্যর্থতার জন্য দায়ী কে? এক শ্রেণির চাটুকার বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক বা আমলা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল পথে পরিচালিত করেন, এ ধরনের কানাঘুসা বাজারে থাকলেও প্রকৃত হিতাকাঙ্খী ও দেশপ্রেমিকরা সরকার পরিচালনায় তাঁর ভুলভ্রান্তিগুলো ঠিকই আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী তাদের কথায় কান না দিয়ে উল্টো কড়া সমালোচনা করেছেন। আজ এ কথা বলতেই হয়, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু মন্ত্রী বা সরকার প্রধান সেহেতু দেশের সাফল্য যেমন তাকে সর্বাধিক প্রসংশিত করে তোলে, তেমনি ব্যর্থতার বেলাতেও তাকেই সব দায়ভার বহন করতে হবে সর্বাগ্রে।  

দুই
রমজানের প্রায় শেষ পর্যায়ে আমার বাসায় ঘরোয়া পরিবেশে ছোটখাটো ইফতার পার্টি আয়োজন করেছিলাম। কয়েকজন বাঙালি একসঙ্গে মিলিত হলে অতি সহজেই যেন রাজনৈতিক আলোচনার ঝড় ওঠে। ওইদিনও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।   ইফতার ও নামাজ শেষে আলোচনার এক পর্যায়ে রাজনীতিতে সদ্য যোগ দেওয়া সজিব ওয়াজেদ জয়ের প্রসঙ্গ চলে আসে। বিভিন্ন ইফতার পার্টি বা টিভি চ্যানেলগুলোতে সাক্ষাতকার দিতে গিয়ে পুরনো সুরে যে ভাঙা রেকর্ড তিনি বাজিয়েছেন তা তাদের অনেককেই আশাহত করেছে বলে প্রতিক্রিয়ায় জানান।

বঙ্গবন্ধু দৌহিত্র সজিব ওয়াজেদ জয় একজন হার্ভার্ড পড়ুয়া আধুনিক মনস্ক ডিজিটাল তারকা।

রাজনীতিতে তাঁর সক্রিয় যোগদান এক নতুন মেরুকরণ বলে আমি মনে করি। তার মতো প্রযুক্তিবিদ তরুণ ও তারুণ্যের মডেল হিসেবে কাজ করে বাংলাদেশের রাজনীতি বদলে দেবেন সেটাই স্বাভাবিক।

ছোটবেলা থেকেই তিনি রয়েছেন উন্নত বিশ্বে। খুব কাছে থেকে অবলোকন করতে সক্ষম হয়েছেন আধুনিক ও উন্নত বিশ্বের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল। তাই তার পদচারণায় বাংলাদেশের পচাগলা তথা অসুস্থ রাজনীতি সুস্থ ধারায় ফিরে আসবে বলে আমরা ধারণা করেছিলাম। কিন্তু তিনি দলে যোগ দিয়েই পূর্বসূরীদের ভাষায় গৎবাঁধা কথা বলেছেন যা আমার মতো অনেককেই হতবাক করেছে।

তাই সজীব ওয়াজেদ জয়কে মিনতি করে বলতে চাই, আপনার চারপাশে যেসব বসন্তের কোকিল ঘুর ঘুর করছে, ওরা সারাক্ষণ মোসাহেবিপনা ও চাটুকারিতায় ব্যস্ত। আপনার নানু ভাইয়ের আমলেও ওরা ছিল, আপনার মা’র শাসনামলেও ওদের অস্তিত্ব বিদ্যমান। মিথ্যে তোষামোদে প্রীত করে তুলে ওরা আপনাকেও বিভ্রান্ত করে ছাড়বে। তাই ওদের মুখস্ত বুলি দিয়ে নয়, বরং নিজেকে নিজের মতো পরিচালিত করুন।

শুদ্ধ পরিবেশে যা দেখেছেন, শুনেছেন, শিখেছেন- তার আলোকে নিজেকে জাতির সামনে প্রতিভাত করুন। দেখবেন, মানুষ আপনাকে মাথায় নিয়ে নাচতে শুরু করেছে।

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল: আয়ারল্যান্ড প্রবাসী লেখক, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০১৩
জেডএম/আরআইএস/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।