ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

‘ট্যাটু কালচার’ ছড়ানোর আগেই নিষিদ্ধ হোক

জিনিয়া জাহিদ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩
‘ট্যাটু কালচার’ ছড়ানোর আগেই নিষিদ্ধ হোক

পশ্চিমা দেশগুলোতে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট-বড় উল্কি বা ট্যাটু আঁকার প্রবণতা এখন মহামারীর মত ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তায় বেরুলেই কিম্ভূতাকার ড্রাগন, নারী মুখ, সাপ, ব্যাঙ, বিচ্ছুসহ হিবিজিবি বিভিন্ন ধরনের ট্যাটু আঁকা নারী-পুরুষ দেখা যায়।

যৌবনে আঁটসাট শরীরে আঁকা ট্যাটু যে বৃদ্ধ বয়সের ঝুলন্ত চামড়ায় কি বিভত্স লাগে, তা যারা দেখেনি তারা কখনই তা অনুধাবন করতে পারবে না।

পশ্চিমাদের অনুকরণে খুব ধীরে হলেও ইদানিং আমাদের দেশের তরুণসমাজে এই বিষাক্ত সংস্কৃতি ডালপালা মেলে আগাছার মত বিস্তৃত হচ্ছে। নিজেকে স্মার্ট করার নেশায়, বন্ধুদের মাঝে নিজেকে স্বতন্ত্র করার আশায় তরুণরা ক্ষতিকর এই সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে।
 
ট্যাটু বা উল্কি আঁকানো যে ক্ষতিকর তা এখন সর্বজনবিদিত। স্থায়ী ট্যাটু বা উল্কি করতে যে রঙ ব্যবহার করা হয়, তা নিখুঁতভাবে চামড়ায় বসে যায়, আর তা আজীবন থেকে যায় শরীরে। বিদ্যুৎচালিত মাথায় যন্ত্রের অত্যন্ত সূক্ষ্ম একটি সুঁই দিয়ে চামড়ার ভেতরে রঙ প্রবেশ করানো হয়। আর এই রঙের মধ্যে থাকে শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর একটি রসায়নিক পদার্থ৷ এই রসায়নিক পদার্থ চামড়ার একেবারে ভেতরে প্রবেশ করে৷

যেহেতু এই উল্কি সারাজীবন শরীরে থাকবে তাই এই রসায়নিক পদার্থও সারাজীবন শরীরে থেকে যাবে৷ সম্প্রতি গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের কারণে বিভিন্ন ধরনের অসুখ, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে৷
 
পশ্চিমা দেশগুলো যখন ট্যাটুর ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে গবেষণা করে সচেতন হওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে, তখন জেনেবুঝেও এই ক্ষতিকর ফ্যাশন আমাদের দেশে পপুলার করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
 
পত্র-পত্রিকাতেও ট্যাটু কালচার নিয়ে লেখা হচ্ছে। কোথায় করা যায়, খরচ কেমন জাতীয় সংবাদ পরিবেশন করে ট্যাটুর মত ক্ষতিকর ফ্যাশনকে প্রমোট করা হচ্ছে! স্বাভাবিকভাবেই ট্যাটু নিয়ে কৌতুহল থেকেই তরুণদের মাঝে এই ট্যাটু করার আগ্রহ জন্ম নেবে।

ফ্যাশনের কাঙাল আমাদের দেশের তরুণরা শরীরের মধ্যে সুচ দিয়ে আজীবনের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ঢুকিয়ে নেবে। একজনের শরীরের রোগ সুচের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়বে অন্যের শরীরে। হেপাটাইটিস-বি, সি, টিউবারকিউলোসিস, এমনকি এইডসের মত রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। তারুণ্যের নেশায় বিভোর তরুণরা না জেনেই এই বিপদের সম্মুখীন হবে।
 
উল্কি করা নিয়ে ধর্মীয় বিধি নিষেধের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। কিন্তু যে প্রিয় শরীরকে আকর্ষণীয় করে তুলবার জন্য ট্যাটু করার মত এই কষ্টকর অনুভূতির স্বাদ নেয়া, সেই প্রিয় শরীরটাই একদিন মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।  
 
বাংলাদেশে যেখানে খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে সবাই, সেখানে ট্যাটুর জন্য ব্যবহৃত সুই, ক্ষতিকর রঙ যে নিয়ন্ত্রণ করা একসময় অসম্ভব ব্যাপার হয়ে পড়বে তা সহজেই অনুমেয়।
 
কাশির ঔষধ প্রতিকারে ফেনসিডিল বা বিষন্নতার জন্য ইয়াবা যেমন গুটি গুটি পায়ে এসে এখন মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, এই ট্যাটুও একদিন সমাজে বিষবাষ্পের মত ছড়িয়ে পড়বে। তাই ছড়িয়ে পড়ার আগেই একে রুখে দেয়া দরকার। এখনি যদি এসব ট্যাটু পার্লারগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ সরকারি পর্যায়ে না নেয়া হয়, তবে একসময় বিউটি পার্লারের মতই অলিগলিতে গজিয়ে উঠবে এই ট্যাটু পার্লার। ট্যাটু পার্লার গজিয়ে ওঠার আগেই আইন করে একে নিষিদ্ধ করে দেয়া দরকার।  

আজকের তরুণরাই আমাদের একদিন উপহার দেবে সমৃদ্ধ দেশ। এভাবে বিজাতীয় ক্ষতিকর ফ্যাশনে আমরা তাদের হারিয়ে যেতে দিতে পারি না। তাই এই বিষয়ে তাদেরকে নিরুত্সাহিত করার দায়িত্ব নেয়া দরকার।
 
আপাত স্মার্ট হবার আশায় শরীরে ট্যাটু না করিয়ে শিক্ষা-স্বভাবে-মননে স্মার্ট হবার চেষ্টা করা উচিত সবার। তাই ট্যাটুর ন্যায় ক্ষতিকর কালচার সরকারি উদ্যোগেই নিষিদ্ধ করতে হবে। আর তা করতে হবে এখনই।
zinia-zahid
জিনিয়া জাহিদ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।