ঢাকা: দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যোগাযোগের অন্যতম রুট দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট এলাকার যানজট নিরসনে এখন প্রয়োজন উন্নতমানের নতুন ফেরি ও ড্রেজার। দীর্ঘদিনের পুরোনো ফেরি ও ড্রেজার দিয়ে নৌপথ সচল রাখতে গলদঘর্ম হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
কিছুদিন ধরে নাব্যতা সংকটের কারণে ফেরিতে যানবাহন পারাপার মারাত্বকভাবে ব্যহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়। এ কারণেও বিআইডব্লিউটিসির রাজস্ব আয় কম হয়েছে অন্তত ১০ কোটি টাকা।
একজন সংবাদকর্মী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ফেরি ও লঞ্চ চলাচলসহ ঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক খবর সংগ্রহ করতে আমি অনেক সময় ঘাটে অবস্থান করেছি।
এবারও নাব্যতা সংকটের কারণে ডুবোচরে ফেরি আটকা ও চলাচল বন্ধ হওয়ার খবর পাঠককে জানাতে অনেক বার ঘাটে গিয়েছি। সার্বক্ষণিক ঘাট পরিস্থিতির তাজা খবর দিতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘাটে অবস্থান করেছি।
প্রতিবেদন তৈরি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতামত তুলে ধরতে কথা বলেছি অনেক উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে। আবার কথা হয়েছে ঘাটে অবস্থানকারী যাত্রী ও যানবাহন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গেও।
নাব্যতা সংকট নিরসনে ফেরি চলাচল ব্যহত হওয়ায় নদীর গভীরতা বাড়াতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লউটিএ) ডুবোচের ফেরি আটকা পড়ার পরের দিন থেকেই দৌলতদিয়ার ৩ নম্বর ফেরিঘাট এলাকায় ড্রেজার দিয়ে পলি অপসারণের কাজ শুরু করে।
বর্ষার শেষ দিকে এসেও নদীতে প্রচণ্ড স্রোত। স্রোতের কারণে উজান থেকে নেমে আসা পলি ও বালু পড়ে ভরাট হওয়া চ্যানেল খনন অনেক কষ্টসাধ্য ও ব্যয় বহুল ব্যাপার। নদীর গভীরতা বাড়াতে তবু করতে হবে খনন। খনন কাজ করতে এখানে ব্যবহৃত ড্রেজারগুলো কাজ করতে পারে সর্বোচ্চ ২ নটিক্যাল স্রোতের মধ্যে।
পর্যবেক্ষণ শেষে বাংলাদেশ নদী গবেষণা ইনস্টিটউট এর পর্যবেক্ষক দলের প্রধান মমিনুল হক জানিয়েছেন, এই এলাকায় এখন স্রোতের গতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ নটিক্যাল মাইল। তীব্র স্রোতের কারণে খনন এলাকায় ড্রেজার স্থাপন করা অনেক কঠিন হয়েছে।
যে কারণে বিআইডব্লিউটিএ তাদের ড্রেজার দিয়ে ভালোভাবে কাজ করতে পারছে না। কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে টাগবোট দিয়ে ড্রেজারকে ঠেকিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে। স্রোতের অত্যধিক গতির কাছে হার মেনেছে খনন কাজ। সারাদিন খনন করে রাতে বন্ধ করে আবার সকালে শুরুর সময় দেখা গেছে একই অবস্থায় নদীর তলদেশ।
যে কারণে আগের মত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি ফেরি চলাচল। নদী থাকলে স্রোত থাকবে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ কারণে আমার মনে হয়েছে খনন করে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি করে ফেরি চালাতে আরও শক্তিশালী ড্রেজার প্রয়োজন।
তবে গভীরতা ঠিক আছে দাবি করে বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা বলেন, আমাদের খনন করা চ্যানেলের বাইরে ফেরি আটকা পড়ার দায় আমাদের না।
দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে চলাচলকারী ফেরিগুলোর অধিকাংশই ২০-২৫ বছরের পুরোনো। যে কারণে বয়সের ভারে যানবান নিয়ে চলতে গিয়ে হোঁচট খায় বার বার। যানবাহন বোঝাই করে ফেরি দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ছাড়া ও আসার সময় দৌলতদিয়ার চ্যানেলে স্রোতের কাছে হার মানে।
চ্যানেলের গভীরতা কমবেশি যাই থাক, ফেরিগুলো স্রোতের ধাক্কায় পাশের ডুবোচরে গিয়ে আটকা পড়ে। একই সঙ্গে যে সব ফেরি ডুবোচরে আটকা পড়ে সেগুলো উদ্ধারের জন্যও নেই কোন শক্তিশালী ইন্ল্যান্ড ট্রাক। যা দিয়ে আটকা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করা যাবে ফেরিগুলো।
ফেরির ইঞ্জিনের শক্তি কম অথবা চালানোর গতি কম থাকায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ফেরি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনেকেই প্রকাশ্যে না বললেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এখন এই নৌপথের জন্য আরও শক্তিশালী ফেরি প্রযোজন। না হলে চ্যানেলের গভীরতা যাই হোক স্রোতের কারণে চ্যানেল থেকে বাইরে যাবে ফেরি। নদী পাড়ি দিতে আটকা পড়বে বার বার। তাই ঘাট সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক ও যানবাহন চালক-মালিকদের দাবি, এখন প্রয়োজন আধুনিক ও অনেক শক্তিশালী এবং প্রযুক্তির ফেরি ও ড্রেজার।
তা হলেই স্রোতে খনন কাজ ও ফেরি চলাচলে কোন সমস্যা হবে না। আগের মতই স্বাভাবিক থাকবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা।
অনলাইন ও কাগুজে সংবাদপত্র এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাছে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটের গুরুত্ব কিছুদিন আগেও এতটা ছিলনা। সংবাদকর্মীদের খবর প্রকাশে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক মানুষের যাতায়াত ও ভোগান্তির কারণে ঘাট এখন একটি গুরুত্বপুর্ন স্থান। প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় এখন ঘরে বসেই চলছে অনেক কাজ। তেমনি মফস্বলের সাংবাদিকতাও এখন অনেক আধুনিক। তাই সেকেন্ডেই খবর পৌছে যাচ্ছে সারাদেশে।
বিশেষ করে ইন্টারনেটের যুগে শুধু পাঠক সমাজ নয়। মিডিয়া হাউজগুলো বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত অনলাইন সংবাদপত্রগুলোর দিকে এখন তাকিয়ে থাকে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে ক্লিক করলেই চলে আসে চোখের সামনে পুরো দুনিয়া।
শাহেদ আলী ইরশাদ: গোয়ালন্দ উপজেলা করেসপন্ডেট, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৩
জেডএম/জিসিপি