ভোটের ধূলিঝড় শুরু হয়েছে। ধূলো এসে নাকে মুখে লাগছে ভোটারদের।
পূর্বাভাস আসছে জানুয়ারি’র মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। বিভিন্ন সমঝোতার দাওয়াই’র ফলে নির্বাচন জুন অবধি গড়াতে পারে। এমন পূর্বাভাসও দিচ্ছেন কেউ কেউ রাজনৈতিক সংকটের নিম্নচাপ দেখে। তবে ভোট চাওয়া কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মী সবাই এখন ভোটারদের দরজামুখি। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন প্রক্রিয়া বা কার অধীনে নির্বাচন হবে এনিয়ে গলার আওয়াজটা চড়িয়ে রাখলেও, তারাও ভোটারদের দরজায় কড়া নাড়ছেন। ভোটারদের কাছে পৌঁছতে এবারের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই গণমাধ্যম’কে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইবে।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এতো সংখ্যক গণমাধ্যম কখনোই বাংলাদেশে সক্রিয় ছিল না। বিশেষ করে টেলিভিশন এবং অনলাইন ভোটের প্রচারের নতুন সংস্করণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। দেশে অনলাইনের এক প্রকার বিস্ফোরণ ঘটেছে। জাতীয়ভাবে দুই-তিনটি মূলধারার অনলাইন পত্রিকা ছাড়াও, জেলা পর্যায়েও রয়েছে অনলাইন পত্রিকা। বেশির ভাগ অনলাইন পত্রিকাই পেশাদারী ঢঙে চলছে না। কোন কোনটি ব্যক্তির পকেট নির্ভর। এসব অনলাইন পত্রিকা রাজনৈতিক দলের তো বটেই, প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যাবে এককভাবে কোন প্রার্থীর পক্ষেই ঢোল পেটাচ্ছে। এই জাতীয় অনলাইনকে হিসেবের বাইরে রেখে বলতে হবে, যারা বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম, বিডিনিউজের মতো এরকম দুই-তিনটি অনলাইনকেই পেশাদারী আচরণ দেখাতে হবে পাঠকের সামনে।
এবার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান লক্ষ্য হবে টেলিভিশন। বেসরকারি টেলিভিশনকে কতোটা সময় আদায় করে নিতে পারে বা দখলে রাখতে পারে চলবে তার প্রতিযোগিতা। এখানে চলবে বলাটা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। বলা দরকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। দর্শক সাক্ষী বিরোধী দলের আন্দোলন রাজপথের চেয়ে এবার টেলিভিশন পর্দাতেই সীমিত ছিল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। বিভিন্ন কাগুজে সংগঠনের নামে সভা-সেমিনার করে তারা টিভি ক্যামেরায় এসেছে সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা। সরকারি দলও পিছিয়ে থাকেনি, তারাও একই পদ্ধতিতে রকমারী সংগঠন তৈরি করে মুখর ছিল টেলিভিশন সংবাদে। আর টকশোকে তো বলা যায়, সভা-সমাবেশের মিনিপ্যাক সংস্করণ। অনেক নেতা-কর্মীকেই গত সাড়ে চার বছরে টকশোর বাইরে রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি।
যদি বেরকারি চ্যানেলগুলো একযোগে সিদ্ধান্ত নিতো যে, কাগুজে কোন সংগঠনের কভারেজ তারা করবে না, তাহলে কোন দলই প্রেসক্লাব-রিপোর্টার্স ইউনিট কেন্দ্রিক সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে পার পেত না।
ভোট যতো এগিয়ে আসছে, টেলিভিশন দখলের চেষ্টায় ততোটাই মেতে উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। কেউ প্রকাশ্যে, কেউ আড়ালে। সরকারি দল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ছাড়াও তাদের সময়কালে লাইসেন্স দেয়া টেলিভিশনগুলোর কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা আদায়ের চেষ্টা করবে। বিএনপিও চাইবে তাদের সময়ে লাইসেন্সপ্রাপ্তদের ব্যবহার করতে। এই মুহূর্তের পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে, এক-দুইটি টেলিভিশন ছাড়া বাকীরা উদার কৃতজ্ঞতা দেখাতে গড়িমসি করছে। বা উদারহস্ত হতে চাচ্ছে না। কারণ তারা পেশাদার সাংবাদিকতাই করতে চাচ্ছে। নির্বাচনের আগে কোন একটি পক্ষের মুখপাত্র হতে রাজি নয়। সেটাই সংগত, কারণ দর্শকরা যদি বুঝতে পারে টেলিভিশনটি একটি পক্ষের নির্বাচনী প্রচারণার যন্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে তবে টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট) এ ধ্বস নামবে। হারাতে হবে বিজ্ঞাপণ। এমনিতেই বাজার খারাপ!
এই বাস্তবতার মাঝেও অতীতে পত্রিকার অনুকরণে টেলিভিশনগুলো কোন কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের দূর্বলতা দেখাবে। নিজ নিজ কৌশল প্রয়োগ করে। এখানেই চ্যানেলগুলোকে দেখাতে হবে মুন্সীয়ানা। বোকাবাক্স দেখেন বলে দর্শকরাও বোকা তা ভাবলে চলবে না। যতোই দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্য সেকেন্ড-ইঞ্চির ফিতায় মেপে প্রচার করা হোক, দুইজনের সভা-সমাবেশ যতোই সরাসরি সম্প্রচার করা হোক না কেনো, ছবি ও শব্দের ব্যবহার দেখেও দর্শকরা মুহূর্তেই বুঝে যাবেন, চ্যানেলটির দূর্বলতা কোন প্রার্থীও দলের প্রতি।
তাই যারা ভেবে বসে আছেন, নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে সবার বক্তব্য সমানভাবে প্রচার করবো, তাতেই কর্ম শেষ তা হবে না। কারো জনসভায় ওয়াইউ সর্ট ব্যবহার করে ব্যাপক জনসমাগম দেখানো হবে। আর জনসভার মিড ওয়াইড সর্ট দেখানো হবে, তা মোটেও নিরপেক্ষতার নিদর্শন হবে না। এই সময়টায় টকশোর স্টুডিও বেশ উত্তপ্ত থাকবে। সেখানেও অতিথি নির্বাচনে পক্ষ-বিপক্ষের সাম্য ও সঞ্চালকের পক্ষপাতহীন ভূমিকা রাখা ফরজ হবে। এই মূহুর্তে যা দেখা যাচ্ছে তাতে সব টেলিভিশনকেই এক প্রকার সিদ্ধান্তহীনতা এবং সংশয়ের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। কাকে কতোটা সময় দেয়া দরকার। তা নিয়েও দ্বিধা কাজ করছে টেলিভিশনগুলোতে। এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠা যাবে যতো দ্রুত, ততো শিগগিরই টেলিভিশনগুলো নিরপেক্ষতার সড়কের দেখা পাবে।
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৮ ঘণ্টা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩
এমআইএইচ/এডিএ/জেডএম/জিসিপি