ঢাকা, রবিবার, ২০ আশ্বিন ১৪৩১, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রাজনীতি ও গণতন্ত্র

ব্যক্তি নয়, সংবিধানের সংশোধন হোক গণমুখী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৩
ব্যক্তি নয়, সংবিধানের সংশোধন হোক গণমুখী

প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায় কোথাও না কোথাও রাজনৈতিক হানাহানির খবর। কেন এতো হিংসা, কেন এতো বিদ্বেষ, কেন এতো অস্থিরতা রাজনৈতিক অঙ্গনে?

রাজনৈতিক অঙ্গনে আজ যে হানাহানি তার মূল কারণ নিহিত আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থার ভেতরে, নির্বাচনী ব্যবস্থার পরিবর্তনই রাজনৈতিক জিঘাংসার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে।



যারা রাজনীতি করেন তারা কি কখনো এ নিয়ে ভেবেছেন কিংবা এর কারণ অনুষন্ধানের চেষ্টা করেছেন?

আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা কখনো দেশ, জাতি, জনগণের কথা ভেবেছেন বলে মনে হয় না। যদি ভাবতেন তা হলে তারা এমন অস্থিরতার মধ্যে দেশকে, দেশের আপামর জনসাধারণকে ফেলতে পারতেন না। আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের দেশের নেতারা শুধু তাদের নিজেদের কথা, তাদের দলের কথাই ভাবেন, দেশের জনগণ তাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়ার হাতিয়ার মাত্র, আর কিছুই নয়।

আমাদের দেশে বর্তমানে যে নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, তাকে উন্নত বিশ্বে (unitary representation) একক প্রতিনিধিত্বের নির্বাচন পদ্ধতি বলে অর্থাৎ একটি নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থী থাকেন যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই পদ্ধতিতে প্রতিটি প্রার্থী জানেন তিনি নির্বাচিত হলে ক্ষমতায় যাবেন, ফলে সেই নির্বাচনে জেতার জন্য প্রতিটি প্রার্থী কালো টাকা পেশীশক্তি ব্যবহার করেন। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য প্রতিটি প্রার্থী তার সর্ব শক্তি ব্যয় করেন। শুরু হয় এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা, শুরু হয় খুন-জখম।

প্রতিদ্বন্দ্বিকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটা প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। তা ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের প্রার্থীর জয় পরাজয়কে দলের জয় পরাজয় মনে করে থাকে।

যদিও আমাদের দেশের কোনো নির্বাচনেই কিন্তু দলের পরাজয় হয় না, পরাজয় হয়ে থাকে দলীয় প্রার্থীর। কারণ আমাদের দেশে কখনো কোনো নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার ভোটারদের কাছে প্রেরণ করেন না, তাদের নির্বাচনী ইস্তেহার তাদের বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন। ফলে ভোটাররা কখনোই রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার দেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিচার বিশ্লেষণ করার কোনো সুযোগ পান না।

কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা এই কথাটা কখনোই ভেবে দেখেননি, দেখতে চাননি। প্রতিটি নির্বাচনের পরে কোনো রাজনৈতিক দল কখনোই তাদের প্রার্থীদের পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধান করেননি। নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে না গেলেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনেন। এই ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের চরিত্র প্রায় এক।

আওয়ামী লীগই বলুন, আর বিএনপি-ই বলুন সবাই তখন একই কথা বলেন। কখনো কি কোনো রাজনৈতিক নেতা ভেবেছেন কেন তার দলের মনোনীত প্রার্থী পরাজিত হলো?

একটি দলের মনোনীত প্রার্থীর পরাজয়ের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সব চাইতে উল্লেখযোগ্য কারণটি হল প্রার্থীটির ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি, তার এলাকার মানুষ তার সম্পর্কে কি ভাবেন তা অনেকাংশে নির্বাচনে জয় পরাজয় নির্ধারণে বিশেষ একটি ভূমিকা রাখে।

রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি দলের প্রার্থীর ভাবমূর্তি নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে একটি বিশেষ ভূমিকা রেখে থাকে। উন্নত দেশগুলোতে নির্বাচনের জয় পরাজয় নির্ধারণ হয় রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার ওপর ভিত্তি করে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের ভাবমূর্তি এবং প্রার্থীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

আমাদের দেশে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়, যদি সেই পদ্ধতির পরিবর্তন না হলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না। আমাদের এই নির্বাচন পদ্ধতিতেই পরিবর্তন আনতে হবে। বর্তমানের এই একক প্রতিনিধিত্তের (unitary representation) বদলে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্তের (proportionate representation) পদ্ধতির প্রচলন করতে হবে।

আমাদের দেশে স্বাধীনতার পর থেকে কোনো দিনই কোনো সরকার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেনি, নিম্নে বর্ণিত কিছু নির্বাচনী ফলাফলই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

১৯৭০’র নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার ৫৭.৬৯% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যার মধ্যে ৮৯% ভোট আওয়ামী লীগ এর মনোনীত প্রার্থীরা ৮৯.০০% ভোট পায় যা মোট ভোটারের ৫১.৩৪%।

১৯৭৩ এর নির্বাচনে ৫৩.৫৪% ভোটার ভোট প্রদান করেন যার মধ্যে আওয়ামী লীগ এর মনোনীত প্রার্থীরা ৭৩.২% ভোট পান যা, মোট ভোটারের ৩৯.১৯%।

১৯৭৯ নির্বাচনে  ৫১.৩০% ভোটার ভোট প্রদান করেন যার মধ্যে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা  ৪১.২০% ভোট পান, যা মোট ভোটারের ২১.১৩%, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ২৪.৫০% ভোট পান যা মোট ভোটারের ১২.৫৬%।

এছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগ এর প্রার্থীরা পান ১০.১০% ভোট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল এর প্রার্থীরা ৪.৮%, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (মিজান) ২.৮০% এবং ন্যাপ (মোজাফফর)পায় ২০% ভোট।

১৯৮৬ নির্বাচনে ৬০.৩১% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৬৪.৪৪% ভোট পান, যা মোট ভোটারের ৩৮.৮৬%। আওয়ামী লীগ এর প্রার্থীরা ২৬.১৫% ভোট পান যা মোট ভোটারের ১৫.৭৭%।

১৯৮৮ সালের নির্বাচনে মোট ভোটারের ৫৪.৯৩% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। যার মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৬৪.৪৪% যা মোট ভোটারের ৩৫.৩৯%, সম্মিলিত বিরোধী দল ১২.৬৩% যা মোট ভোটারের ৬.৯৩% ভোট এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পান ১৩.৫০% ভোট যা মোট ভোটারের ৭.৪১ %।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার ৫৫.৪০% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যার মধ্যে বি এন পির মনোনীত প্রার্থীরা ৩০.৮০%ভোট পায়, যা মোট ভোটারের ১৭.০৬% ভোট, আওয়ামী লীগ এর মনোনীত প্রার্থীরা ৩০.১০% যা মোট ভোটারের ১৬.৬৭% ভোট, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা ১১.৯২% ভোট পায় যা মোট ভোটারের ৬.৬০% ভোট, জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থীরা ১২.২০% যা মোট ভোটারের ৬.৭৫% ভোট।  

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার ৭৪.১৫% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যার মধ্যে বিএনপি ৩৩.৬০% ভোট পায়, যা মোট ভোটারের ২৪.৯১%, আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৩৭.৪৪% যা মোট ভোটারের ২৭.৭৬%, জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থীরা ১৬.৪০% ভোট পায়, যা মোট ভোটারের ১২.১৬%, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ৮.৬১% ভোট পায়, যা মোট ভোটারের ৬.৩৮% ভোট।  

২০০১ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার ৭৪.৯৬% ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যার মধ্যে বিএনপি ৪১.৪০% যা মোট ভোটারের ৩১.০৩%, আওয়ামী লীগ এর প্রার্থীরা ৪০.০২% যা মোট ভোটারের ২৯.৯৯% ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা ৭.২২% যা মোট ভোটারের ৫.৪১% ভোট, জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা ৪.২৮% যা ছিলো মোট ভোটারের ৩.২০%।  

২০০৮ সালের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যার ৮০.০৫% (যা বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে বিরল ঘটনা) ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন যার মধ্যে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট প্রার্থীরা ৩৩.২০% ভোট পান যা কিনা মোট ভোটারের ২৬.৫৭%। আওয়ামী লীগ এর নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রার্থীরা ৪৯.০০% ভোট পান, যা মোট ভোটারের ৩৯.২২%। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৪.৯০% ভোট পান, যা মোট ভোটারের ৩.৯২% ভোট।

উপরে উল্লেখিত বিবরণে একটি কথা স্পষ্ট যে বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই কোনো সরকার দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে নাই। সব সময়ই সব সরকার দেশের একটি ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করেছে ফলে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের যেমন কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না, তেমনি দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে তাদের কোনো দায়বদ্ধতাও তারা অনুভব করেননি। তাই সব সময় সব সরকার শুধু নিজেদের স্বার্থই দেখেছে, দেশের স্বার্থ, দেশের মানুষের স্বার্থ তাদের কাছে খুব একটা গুরুত্ব পায়নি।

সব সময়ই সব সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন হয়েছে, সরকারের প্রায় সব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয়েছে, কারণ বিরোধী দল সব সময়ই সরকার বিরোধী প্রতিবাদ আন্দোলন করার সুযোগ পেয়েছে।

যদি সরকার দেশের ৭০-৮০% জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করতো তাহলে কোনো ভাবেই এমনটি হতো না। সরকার বিরোধী কোনো প্রতিবাদ কিংবা কোনো আন্দোলন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতো না, বিরোধী দলও কখনোই বলতে পারতো না যে, সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নেই।

দেশের বর্তমান এই অপ-রাজনীতির বেড়াজাল থেকে আমাদের এখুনি বের হয়ে আসতে হবে। আর সেজন্য সংবিধানে গণমুখী বেশ কিছু বৈপ্লবিক সংশোধনী আনতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে সরকার পরিচালনা ব্যবস্থায়, নির্বাচন পদ্ধতিতে, বিচার ব্যবস্থায়। সর্বোপরি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায়। আর তাহলেই দেশে একটি সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি কর‍া সম্ভব। দেশে শান্তি ফিরে আসবে, কায়েম হবে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ধারার।

বর্তমানের সংঘাতের রাজনীতি থেকে চিরস্থায়ী উত্তরনের কিছু পদক্ষেপ দেওয়া যেতে পারে-      
১। সরকার পরিচালনা ব্যবস্থায়, দেশে সরকার গঠন করার জন্য দুই তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। এর ফলে সব সময়ই সরকার গঠন করার জন্য সমমনা দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হবে। দেশে সব সময়ই প্রতিষ্ঠিত হবে একটি নির্বাচিত জাতীয় সরকার।

২। সংবিধান সংশোধনের জন্য ৮০% সংসদ সদস্যের সমর্থন প্রয়োজন হবে। যাতে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা কোনো সরকার তাদের ইচ্ছামতো সংবিধান কাটাছেঁড়া করতে না পারে।

৩। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের বিধান সংযোজন করতে হবে। যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল শুধুমাত্র সংসদের কাছে জবাবদিহি করবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কউন্সিলের অধিনস্ত থাকবে দেশের বিচার ব্যবস্থা, বিচারকদের নিয়োগ, বদলী, পদোন্নতি এবং বরখাস্তের ক্ষমতা থাকবে। যদিও তাদের সব কর্মকাণ্ড সংসদ কর্তৃক অনুমোদন সাপেক্ষ হতে হবে।

৪। ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। যে কোনো ধরনের ঋণ প্রদানের জন্য একটি ‘ঋণ প্রদান বিভাগ’ সৃষ্টি করতে হবে। যেই বিভাগ সারা দেশের সব ব্যাংকের সব ঋণ প্রস্তাব বিবেচনা করে মঞ্জুর করবে। যার ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ এর টাকা ছাড় করবে।  

৫। একক নির্বাচন পদ্ধতির স্থলে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির প্রবর্তন করতে হবে।

আমাদের দেশে সংবিধানে বর্তমান প্রচলিত ধারার নির্বাচন পদ্ধতির পরিবর্তে আমাদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্তের বিধান সংযোজন করতে হবে। এই পদ্ধতির নির্বাচনে কোনো দলেরই কোনো প্রার্থী থাকবে না। দেশের জনগণ ভোট দেবে দলের কর্মসূচি দেখে, দলের প্রতীক চিহ্নে।

নির্বাচনী ব্যালট পেপারে থাকবে শুধু দলের নাম এবং প্রতীক। যে দল বা জোট যত শতাংশ  ভোট পাবে সংসদে তাদের দলের তত শতাংশ সংসদ সদস্য সেই দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন। দলের পক্ষে কারা সংসদে প্রতিনিধিত্ব করবেন তা নির্ধারিত হবে দলের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি দ্বারা। তখন সব দলই চাইবে দলের মধ্য থেকে সব চাইতে যোগ্যতম ব্যক্তিটি সংসদে তাদের দলের প্রতিনিধিত্ব করুক। ফলসরূপ দেশ একটি যোগ্য সংসদ পাবে।

এখানে একটি কথা উল্লেখ না করলেই নয়, যেহেতু এলাকা ভিত্তিক কোনো প্রার্থী থাকবে না, সেহেতু কোনো এলাকাতেই কোনো প্রার্থী তার কালো টাকা কিংবা পেশীশক্তি ব্যবহার করার জন্য উতলা হবেন না বলেই হয়। ফলে নির্বাচনী সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে।  

আমাদের দেশের বর্তমান নির্বাচন পদ্ধতিতে সংসদে সবসময় সংখ্যালঘিষ্ঠ জনসমর্থিত সরকার কায়েম থাকে ফলে সরকার বিরোধী বৃহৎ জনগোষ্ঠী সবসময়ই সরকারের সব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এবং বিরোধী দলও সরকার বিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ, সরকার বিরোধী আন্দোলন করার সুযোগ পেয়ে যায়। পাশাপাশি বিরোধী দল বারবার বলার সুযোগ পায় যে এই সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই, এই সরকার গণ বিচ্ছিন্ন সরকার, এই সরকারের ওপর দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কোনো সমর্থন নেই। যদিও ভোটের আনুপাতিক হারে বিরোধী দলের ওপরও বৃহৎ জনগণের সমর্থন নেই। পরিবর্তিত ব্যবস্থায় নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদে সমমনা দলগুলো জোট বেঁধেই সরকার গঠন করতে বাধ্য হবে। আর দেশ পাবে একটি গ্রহণযোগ্য বৃহৎ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী নির্বাচিত জাতীয় সরকার।

৬। যেসব রাজনৈতিক দল সংসদ নির্বাচনে কমপক্ষে ৫% ভোট না পাবে, সেই রাজনৈতিক দল দেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারবে না। আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলের সঠিক সংখ্যা কতো তা কেউ বলতে পারবে বলে মনে হয় না।

এমন অনেক রাজনৈতিক দল আছে যাদের কোনো কমিটি নেই, বিভাগীয় পর্যায়ে কোনো কমিটি নেই, নেই কোনো অফিস। তার পরেও তারা একটি রাজনৈতিক দল। এই সব প্যাড সর্বস্ব রাজনৈতিক দলের সংখ্যা সংবিধানে এই সংশোধনীটি আনা হলে বাহুলাংশে কমবে এবং রাজনৈতিক দলের নামে চাঁদাবাজী, তদবিরবাজী, টেন্ডারবাজী বন্ধ হবে।     

আমরা দেশের মানুষ আজ রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের কাছে জানতে চাই, কেন আপনারা বারবার সংবিধান কাটাছেঁড়া করেছেন, আর সংবিধানকে মহান সংবিধান বলে চিৎকারও করেছেন। দেশ, জাতি, জনগণ আপনাদের এই ভণ্ড রাজনীতির হাত থেকে মুক্তি চায়। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাদের কাছে জনগণের এখন একটাই দাবী, এখনো সময় আছে এই নোংরা-পচাঁ রাজনীতির ঘৃণ্য বলয় থেকে বের হয়ে আসুন। ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থের কথা ভুলে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য একবার অন্তত সম্মিলিতভাবে সংবিধান সংশোধন করে সংবিধানকে একটি গণমুখী রূপ দেন।     

‍রাজনৈতিক নেতা, সুধী সমাজ, বুদ্ধিজীবীসহ দেশপ্রেমিক জনগণের কাছে আকুল আবেদন আসুন আমরা সর্ব সম্মতিক্রমে সংবিধানে গণমুখী কিছু সংশোধনী সংযোজন করার জন্য সরকার এবং বিরোধী দলের ওপর চাপ সৃষ্টি করি। এবং ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলকে বাধ্য করি সংবিধানকে সংশোধন করতে শুধু মাত্র তাহলেই আমরা আমাদের আগামী ভবিষ্যৎ বংশধরদেরকে উপহার দিতে পারবো একটি সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ।  

আমাদের দেশের এই পচাঁগলা রাজনীতি এবং রাজনৈতিক নেতৃতে থাকা এই ভণ্ড প্রতারক বর্ণচোরাদের হাত থেকে দেশ ও দেশের রাজনীতিকে মুক্ত করার জন্য এখুনি ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ।

তথ্য সূত্র: Indemnity Ordinance 1975, being Ordinance No. 50 of 1975 which was ratified in the 5th amendment in 9 July 1979.

লেখক: সাইদুল ইসলাম মন্টু
পিএইচডি গবেষক, কার্টীন বিশ্ববিদ্যালয়, পার্থ, পশ্চিম অস্ট্রেলিয়া   
ই মেইল: [email protected]                

বাংলাদেশ সময়: ১২৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৩
এসএটি/জিসিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।