ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

রাজনীতিতে আ’লীগ একক এবং একা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩
রাজনীতিতে আ’লীগ একক এবং একা

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা দেখে একটা গানই ঘুরে ফিরে মনে আসছে, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে। একলা চল, একলা চল, একলা চল রে।

’ গানটিকে ঘুরিয়ে গাওয়া যায়, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা নির্বাচন কর রে।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির নির্বাচন থেকে সরে আসায় অনেক রাজনীতি বিশ্লেষককে আওয়ামী লীগের বন্ধুহীন হবার আশংকা প্রকাশ করতে দেখেছি। প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং সেই সঙ্গে এখন জাতীয় পার্টির সম্পৃক্ততাহীনতায় আসন্ন নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও নানা প্রশ্ন বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে।

সর্বদলীয় সরকারের নামে মূলত আওয়ামী ঘরানার বাইরে জাতীয় পার্টিকে টেনে এনে আওয়ামী শিবিরে দু’দিন আগেও উল্লাস প্রকাশ দেখেছি। মহাউত্সবে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিরোধীদল এলে আসুক, না এলে নাই- এমন একটা অহমিকাভাব আওয়ামী নেতাদের মাঝে প্রকটভাবেই দেখা দিয়েছে।

এরশাদ হঠাৎ পল্টি খেয়ে উল্টোদৌড় দেয়ায় দু’দিন আগের উল্লসিত আওয়ামী লীগ শিবিরে বর্তমানে হতাশা, অন্যদিকে দু’দিন আগের হতাশ বিরোধী শিবিরে বর্তমানে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যাচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সর্বদলীয় গাল-গপ্পের ব্যানারে একক নির্বাচনের বাড়া ভাতে জাতীয় পার্টি কি তবে ছাই দিয়ে ডিগবাজি দিল? আওয়ামী লীগের হিসেবে কিছুটা হলেও গড়মিল তো হলই। এখন দেখা যাক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাকূল কি উপদেশ দিয়ে এই পরিস্থিতি সামলে নেবার ব্যবস্থা করেন?

কথায় কথায় আওয়ামী নেতারা বলছেন, বিরোধীদলকে দেয়া সংলাপের দাওয়াত তো বহালই আছে। ওরা এলেই সংলাপ হবে। কিন্তু সংলাপ, সমঝোতা যাই বলি না কেন, সেসব করার কোনো সদিচ্ছা তো দুই দলের কারো মাঝেই দেখা যাচ্ছে না।

বিরোধীদল যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে পুরান ফর্মুলা ‘অবরোধের’ সঙ্গে নিউ এডিশন হিসেবে পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে সরকার হটানোর আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত। অন্যদিকে সরকারিদল ইচ্ছেমত বিরোধী শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে আলোচনার পথ প্রায় রুদ্ধ করে দিয়েছে। আর ৫ জানুয়ারি তো সন্নিকটে, আলোচনার সময়ই বা কই?

বস্ত্রমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী তো স্পষ্টই বলে দিয়েছেন যে, বিরোধীদলের সঙ্গে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়, নির্বাচন হবেই হবে। ব্যাস ল্যাঠা চুকে গেল। তাহলে বিদেশি কূটনীতিকরাইবা কেন চিঠিপত্র হাতে নিয়ে আসছে, আর কেনইবা ভারতে গিয়ে এদেশের নেতারা দাদাদের পায়ে পড়ছে? এসব নাটকের অর্থ কি?  

বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ছোটখাটো দলগুলো ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কতখানি গ্রহনযোগ্য হবে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। খেলার মাঠে যদি প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকে তবে কি সেই খেলাকে খেলা বলা যায়? আওয়ামী লীগ নির্বাচনে কার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে? নিজেদের দলের মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র্য প্রাথীদের সঙ্গে? সে তো যেই লাউ, সেই কদু। একই গাছ থেকেই উত্পাদিত সবজি।  

এ কথা অনস্বীকার্য যে, রাজনৈতিক ময়দানে বরাবরই আওয়ামী লীগ বন্ধুহীন। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক কৌশলের কারণে ছোটখাটো দলগুলোর সঙ্গে জোট বাঁধলেও, সেই জোটগুলো কখনোই আওয়ামী লীগের কোনো সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করা তো দূরের কথা, আওয়ামী লীগের কোনো রাজনৈতিক অভিলাসকেই বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ এদের নিয়ে যতোটা না লাভবান হয়েছে, তার চেয়ে বেশি এসব চুনোপুটি দল উল্টা আওয়ামী লীগেরই ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী হয়ে হাড় জিরজিরে শরীরে কিছুটা মাংস লাগিয়ে নিতে পেরেছে।

বলতে দ্বিধা নেই, মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী অসাম্প্রদায়িক আওয়ামী লীগ আর বর্তমানের ক্ষমতালিপ্সু আওয়ামী লীগের মধ্যে আদর্শগত চেতনার যোজন যোজন ফারাক। লুটেরা দল বলে খ্যাত বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই আওয়ামী লীগও কি গণতন্ত্র লুট করার পাঁয়তারা করছে না?

এভাবে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং সেই সঙ্গে জাতীয় পার্টি না এলে ৫ জানিয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে অবশ্যই নিরপেক্ষতার তকমা দেয়া যাবে না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বলে পরিচিত দলটির কাছে কি তবে এভাবেই অনেক কষ্টে অর্জিত গণতন্ত্র লুণ্ঠিত হবে? আওয়ামী লীগ কি একক নির্বাচন করে একাই থেকে যাবে ক্ষমতায়?

বাংলাদেশ সময়: ০৮২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।