ঢাকা, রবিবার, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৯ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

তোমরা যারা বোমা মার...

ফয়সাল নাছের, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩

গ্রাম থেকে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে শহরে আসে মোবারক (ছদ্ম নাম)। কঠোর সাধনা আর পরিশ্রমে নিজেকে প্রমাণ করে  ভর্তি হয় নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

অতঃপর তার চিন্তায় আসে শহরে থাকা খাওয়া এবং অন্যান্য খরচ এর।

ইতিমধ্যে তার পরিচয় হয় অনেকের সঙ্গে। অনেকের মধ্যে একজন ছিল বাংলাদেশ এর একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের ছাত্র নেতা। নেতা মোবারককে সারা দিন তার সঙ্গে থাকতে বলে এই আশা দিয়ে- তাকে সব কিছুর একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টাতে থাকে। শুরু হয় হরতাল-অবরোধ। মোবারককে ডেকে নেতাবললেন, বোমা মারতে হবে! প্রথমে শুনে ঘাবড়ে যায় মোবারক।

বোমা ! মানে মানুষ হত্যা? সে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু কথিত বড় ভাই তাকে নানান ভয় ভীতি ও চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। অবশেষে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও স্বীকৃতি জানায় মোবারক। তাকে দিয়ে তার নেতা ছোট ছোট কিছু বোমা-ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। সফল হয় মোবারক। এখন সে একটি রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তার অগাধ বিশ্বাস দলের গঠনতন্ত্রে ও নীতিতে। আজ তার নেতা তাকে দিয়ে একটি বড় কাজ করানোর চিন্তা করছেন। পেট্রোল বোমা ছুঁড়বেন তাকে দিয়ে। ডাক আসে মোবারকের। সঙ্গে তাকে দেওয়া হয় রানা (ছদ্মনাম) নামের একজন সহকারী।
মোবারকঃ রানা তুই কই?
রানাঃ আমি উত্তরা।
মোবারকঃ কি করস?
রানাঃ পেট্রোল লোড করি।                                                          মোবারকঃ কুইক কর, বাড্ডায় আছি, তাড়াতাড়ি আয়।
রানাঃ  হ মামা আইতাসি। ওয়েট কর একটু।
              এক ঘন্টা পর...
মোবারকঃ কিরে মামা এতক্ষণ লাগাইলি?
রানাঃ আরে বেটা বুঝস না? সব জায়গায় তো পুলিশ।
মোবারকঃ ওকে, বোতল কয়টা আনছস?
রানাঃ তিনটা আছে।
মোবারকঃ ওকে চলবে।
   
১৫ মিনিট পর...
রানাঃ দোস্ত একটা সিএনজি আইতাসে
মোবারকঃ পজিশনে যা।
 তুই বাইক স্টার্ট দে।
রানাঃ হ্যাঁ , দিতেসি।
অতঃপর চোখের পলকে ভস্মীভূত হয়ে গেল
একটি সিএনজি। বাইকে উঠে পগারপার।

মোবারকঃ কিরে মামা, কেমন দিলাম?
রানাঃ একদম ফাটাফাটি মামা, পারফেক্ট টাইমিং।

এমন সময় ফোন এল রানার,
রানা তুই কই?
জি আম্মা, আমি বাসায় আইতাসি।
বাবারে সর্বনাশ হইয়া গেসে,
বাড্ডায় তোর বাবার সিএনজিতে পেট্রোল বোমা মারসে, তুই
তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিকেলে আয়,
আমরা সবাই আছি।
জলদি আয় বাবা, পারলে হাজার
পাঁচেক টাকা নিয়া আসিস...
ফোন কেটে গেল...
হতভম্ব রানার মুখে নেমে এলো পাতালপুরীর নিস্তব্ধতা।
পরিশেষে, তোমাদের বলছি, তোমরা যারা বোমা মেরে প্রতিদিন ঝলসিয়ে দাও যাদের তারা হয়ত কারও বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন অথবা কোন বাবা-মায়ের সন্তান। হতে পারে তোমাদের ছোড়া বোমার আঘাতে রানার মতো ঝলসে যেতে পারে তোমাদেরই বাবা, মা, ভাই কিংবা বোন। যদি সত্যিই এমন হয় তবে কি করবে তোমরা তা দেখতে খুব ইচ্ছে করছে...

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।