ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আমার ভোট দেশের ভবিষ্যত

আবুল কালাম আজাদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩
আমার ভোট দেশের ভবিষ্যত

ঢাকা: দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে শুরু হয়েছে তরুণ ও প্রথম ভোটারদের সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান- ‘আমার ভোট দেশের ভবিষ্যত’।

পাশাপাশি অগ্রসর চিন্তার তরুণ ও প্রথম ভোটারদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চলছে সমাজের সবচাইতে পিছিয়ে পড়া অংশ শহরের বস্তিবাসী ভোটারদের মধ্যে ‘আমার ভোট আমি দেবো, জেনে শুনে বুঝে দেবো’ শীর্ষক প্রচারাভিযান।



প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম ভিত্তি হলো নির্বাচন। নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের পক্ষে কাজ করেন। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আইন ও বিভিন্ন বিষয়ে নীতি (পলিসি) প্রস্তুত করেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা করেন। আমরা যদি সঠিক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি নির্বাচন করতে ব্যর্থ হই, তাহলে দেশ পিছিয়ে যাবে।

ফলে, প্রতিনিধিত্বশীল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটার তথা নাগরিকদের ভূমিকা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ। ভোটাররাই শেষ পর্যন্ত নির্ধারণ করবেন কে বা কারা, কীভাবে দেশ চালাবেন? এ কাজে তরুণ সমাজ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন।

ভোট ব্যবস্থায় তরুণ ভোটারদের ভূমিকা সব সময়ই তাই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ, তরুণেরা সমাজের সবচাইতে সচেতন ও সক্রিয় অংশ। তরুণদের সিদ্ধান্ত ও সক্রিয়তা দেশের ভবিষ্যত নির্মাণে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করে।

ইতোপূর্বে বাংলাদেশের প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ভোটাররা নির্বাচনে নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষভাবে বিগত ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম ও তরুণ ভোটাররা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। সে কারণে প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে তরুণদের ইস্যুগুলোকে বিশেষভাবে জোর দিয়েছিল।

বর্তমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী, দেশে মোট ভোটার ৯ কোটি ২৯ হাজার ৮৫২ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৪ কোটি  ৫৯ লাখ ২৭ হাজার ৯৮১ জন ও পুরুষ ভোটার ৪ কোটি ৬২ লাখ ১ হাজার ৫৭১ জন। উল্লেখ্য, এদের মধ্যে প্রথম ভোটার ৭০ লাখ ১৭ হাজার ৫২১ জন যা মোট ভোটারের প্রায় ৮ ভাগ। ফলে, আগামী নির্বাচনেও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সরকার গঠনে তরুণ সমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।  

ভোটার সচেতনতামূলক প্রচারাভিযানে তরুণেরা বেশ কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-

১. নির্বাচনী অলিম্পিয়াড আয়োজন। এসব অলিম্পিয়াড হবে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। অংশগ্রহণ করবেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ভোটার তরুণ বন্ধুরা। এ সব অলিম্পিয়াডে বিজয়ী বন্ধুদের জন্য থাকছে বিভিন্ন রকম আকর্ষণীয় পুরস্কার। এছাড়া অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক প্রতিযোগীর জন্য থাকছে রিস্টব্যান্ড।

২. ভোটার সচেতনতা প্রচারাভিযান। তরুণ বন্ধুদের জন্য এটি নতুন ও আকর্ষণীয় কাজ। সমাজের সবচাইতে পিছিয়ে পড়া বস্তিবাসী ও বস্তির আশেপাশের ভোটারদের সচেতন করার দায়িত্ব নিচ্ছে তরুণেরা। সমাজের এই মানুষগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার মাধ্যমে তারা সমাজের একটি অনালোকিত অংশকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। এই প্রচারাভিযানে উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে- পোস্টার, স্টিকার। এছাড়া অংশগ্রহণকারীদের দেখানো হচ্ছে ভোটার সচেতনতার ওপর নির্মাণ করা একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি।

মাঠ পর্যায়ে এই সব প্রচারাভিযানের পাশাপাশি অনলাইনেও চলছে ভোটার সচেতনতা প্রচার কার্যক্রম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে তরুণদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে ভোটার সচেতনতা কার্যক্রমে।

এই ফেসবুক গ্রুপ পেজের মাধ্যমে তরুণরা পারস্পরিক তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে নিজেদেরকে তথ্য সমৃদ্ধ করছেন। নির্বাচন বিষয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক তথ্য শেয়ার করছেন। তরুণদের ভূমিকা শেয়ার করছেন। স্থানীয় ভোটারদের বিভিন্ন তথ্য ও গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য শেয়ার করছেন। কার্যক্রমের ছবি এবং ভিডিও শেয়ার করছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে নিজেদের মধ্যে সুস্থ ও কার্যকর বিতর্ক গড়ে তুলছেন।

এসব প্রচারাভিযানের মাধ্যমে তরুণরা আজীবনের জন্য ভোটারের মনরাজ্যে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে দিচ্ছেন, যা ভোটারদের ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করছে। এছাড়া প্রচারাভিযানে অংশ নেওয়া তরুণ বন্ধুরা ভোটারকে ভাবতে বলছেন-

প্রার্থী কি সৎ ও যোগ্য?
প্রার্থীর দলের নীতি-আদর্শ কি জনকল্যাণমুখী?
প্রার্থীর দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি কি জনগণের উপকারে আসবে?

তরুণরা তাদের ভোটার সচেতনতা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভোটারদের মধ্যে আত্মজিজ্ঞাসা তৈরি করছে। ভোটারকে ভোট দেওয়ার আগে নিজেকে প্রশ্ন করতে অনুরোধ করছেন, তারা কি

-    টাকার বিনিময়ে ভোট দিচ্ছেন?
-    কারো চাপে পড়ে ভোট দিচ্ছেন?
-    অন্ধবিশ্বাস থেকে ভোট দিচ্ছেন?

সর্বোপরি এই প্রচারাভিযানের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে তোলা; যাতে কর ভোটার সব রকম প্রভাবমুক্ত হয়ে যৌক্তিকভাবে, জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিয়ে সৎ ও যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেন।

দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের এই ভোটার সচেতনতামূলক কার্যক্রমে দেশের সব সচেতন তরুণ যুক্ত হয়ে নির্বাচনকে কার্যকর ও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে- এ আমাদের প্রত্যাশা।

আবুল কালাম আজাদ, প্রোগ্রাম অফিসার, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট,
ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।