বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অন্যতম অভিভাবক মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের জন্মদিন আজ। ব্যক্তিজীবনে তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ, পদার্থবিদ, লেখক, কলামিস্ট।
ভাষা আন্দোলনের বছর ও ডিসেম্বর মাসে জন্ম তার। জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা জাফর স্যার চার দেয়ালে আবদ্ধ না হয়ে বরং যে কোনো আন্দোলন ও সংগ্রামে তরুণ প্রজন্মের পাশে এসে দাঁড়িয়ে সাহস যুগিয়েছেন। সেই সাহসে উজ্জীবিত হয়ে সাহসী শক্তি নিয়ে কলঙ্ক মোচনের ধাপেও জাফর স্যারের অবদান প্রশংসনীয় ও অনস্বীকার্য।
ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া রাজাকারদের ফাঁসির দাবিতে গণমানুষের গণদাবিতে সম্মতি জানিয়ে সশরীরে উপস্থিত হন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে। তীব্র আশা জাগানিয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে প্রশংসার স্রোতে ভাসিয়ে দেন তিনি। আকাশ বাতাসকে সাক্ষী রেখে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ইতিহাসের পাতায় লিখে থাকার মতোই।
গণজাগরণ মঞ্চ যখন তরুণ প্রজন্মের তীব্র দাবি থেকে কিছুটা সরে আসে, তখন রুমি স্কোয়াড নামে একটি সংগঠনের আবির্ভাব হয়। রুমি স্কোয়াডের চেতনাময় ছেলে-মেয়েগুলো ফাঁসির দাবিতে অনশনে বসে। যদিও গণজাগরণ ও রুমি স্কোয়াডের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন, কিন্তু তারা চাচ্ছিল মঞ্চের নেতৃত্বে থাকা বড় ভাইয়ারা যেন আরও কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করেন। জামায়াত-শিবির নির্মূলের লক্ষ্যে এদেশের গুটি কয়েক অন্ধ ছাড়া সবাই একমত। সময়ে দাবিতে তখন তাদের অনশন দীর্ঘ হয়ে উঠছিল। আর সে সময়ের তরুণ সমাজের পিতাতুল্য অভিভাবক পাশে এসে দাঁড়িয়ে অনশন ভাঙান।
১৬ ডিসেম্বরের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও স্যারের উপস্থিতি ছিল তরুণ প্রজন্মের সঙ্গেই। বাংলানিউজের মুক্তমতে প্রকাশিত স্যারের লেখা ‘সাদাসিধে কথা: গ্লানি মুক্তির বাংলাদেশ’ পড়ে স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা কত গুণে বেড়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়। বিশেষ করে ৩ ও ৪ নম্বর প্যারার প্রতিটি অংশ। শত সহস্র বছর বাঙালি হৃদয়ে স্যারের মতো করেই বেঁচে থাকুক পাকিস্তানের প্রতি ঘৃণা ও ধিক্কার। বিজয় দিবসে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় স্যারের হৃদয় থেকে যে আবেগ প্রকাশিত হয়েছে প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে সেই আবেগ বেঁচে থাকুক পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত।
সত্যি কথা বলতে কি স্যারকে নিয়ে লিখতে গিয়ে লিখতে পারছি না। ক্ষুদ্র মনের আবেগ দিয়ে সাস্ট থেকে স্যারের সাময়িক সময়ের জন্য বিদায় নেওয়ার পর কিছুটা কবিতার মতো করে "ফিরে এসো, স্যার" নামে একটা লেখা লিখেছিলাম, যা বাংলানিউজে প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু আজ একটুও মন খুলে লিখতে পারছি না।
শুধু এইটুকুই বলতে ইচ্ছে করে, যে একবার স্যারের সংস্পর্শ পেয়েছেন বা একবার সামনে থেকে স্যারের কোনো কথা শুনেছেন সেই ব্যক্তিটি জীবদ্দশায় আর কোনো ব্যক্তি স্যার সমতুল্য অনুসরণীয় মডেল হয়ে উঠতে পারবেন না। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক সময়ের জন্য স্যার অব্যাহতি নিলে প্রজন্মের প্রতিটি সন্তান যে প্রতিক্রিয়া দেখায়, বাংলাদেশের কোননো ব্যক্তির পদত্যাগের পর এ প্রতিক্রিয়া দেখেছে কিনা বর্তমান প্রজন্মের জানা নেই! তা সম্ভব হয়েছে স্যারের সততা, জ্ঞানের আলো, ৭১-এর চেতনা বিলিয়ে দেওয়ার মহৎ গুণের কারণেই।
বাংলাদেশের গর্ব, তারুণ্যের দিক নির্দেশক, সাহসী সৈনিক, মহান শিক্ষকের মনে ও কাজে যে আলো আছে সেই আলো প্রতিটি অন্ধকারের মানুষের মনে যদি প্রবেশ করানো যেত তাহলে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতো বহুদূর। হয়তো প্রবেশ করার যে পক্রিয়া শুরু হয়েছে তা থেমে যাবে না কার্য সম্পাদনের আগেই।
জন্মদিনে স্যারের সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি। পরিবার-পরিজন নিয়ে আগামীর পথ চলা হোক সুন্দর ও আনন্দময়য়। জন্মদিনে স্যারের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
শুভ জন্মদিন, প্রিয় জাফর স্যার
অনেক দিন বেঁচে থাকুন আলোক নির্দেশক হয়ে।
এমদাদুল হক তুহিন : ব্লগার ও কবি
[email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৩