ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

নির্বাচন ও ইতিবাচক বাংলাদেশ

এমদাদুল হক তুহিন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৪
নির্বাচন ও ইতিবাচক বাংলাদেশ

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি মুহূর্তেই যেমন তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন শঙ্কা, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়া দেখছে বিশ্ব। এক দিকে সাফল্যের জোয়ার, অন্যদিকে একাত্তরে পরাজিতদের বীর্যজাত নরপশুদের নৃশংসতা!

ব্যর্থতার  দিকে সরকারের এমপি-মন্ত্রীদের দুর্নীতি, অন্যদিকে ইতিবাচক দিকে সরকারদলীয় এমপিকেই দেশে প্রথমবারের মতো জেলে প্রেরণের উদাহরণ।

বছরের শুরুতেই পাঠ্যপুস্তক বিতরণের বিশ্ব রেকর্ড, ছোট্ট শিশুদের মুখে কী অনাবিল প্রাপ্তির হাসি!

শিক্ষা ক্ষেত্রে সর্বাত্মক উন্নয়নের মাঝেও নেতিবাচক যে দিকটি সবকিছুর সামনে চলে আসে তাকে অবজ্ঞা করে এর থেকে শিক্ষা না নিলে শিশুদেরকেও দুর্নীতি শেখানো হবে। পরীক্ষার আগেই সাজেশনের নাম করে যারা ছেলেমেয়েগুলোকে দু’নম্বরি পন্থা শিখিয়ে দিলো তাদের ক্ষমা করতে পারি না কোনোভাবেই।

বাংলাদেশে প্রথম বারের মত তৈরি হচ্ছে মানব-বিহীন ড্রোন। এপ্রিলেই উড়বে, শাবির শিক্ষক হিসাবে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের অবদান রয়েছে এখানেও। ইতিবাচক হিসেবে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত। কিন্তু আজকেই শোনা গেল আবার অবরোধের মাঝে ৪৮ ঘণ্টার হরতাল। যে কোন উপায়ে নির্বাচন ঠেকানো। নির্বাচন নিয়ে সঠিক কথাটি বলতে গেলেই আমাকে একটি পক্ষ অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখার কোন সুযোগ নেই।

যে ভুল করছে তাকে ভুল বলতেই হবে, যে ইতিবাচক দিকে রয়েছে সেটা বরঞ্চ তার সাফল্য। নিরপেক্ষতা শুধু মুখের বুলি। পৃথিবীতে কেউ কোনো দিন নিরপেক্ষ হতে পারে নি এবং কোনো দিন নিরপেক্ষ অবস্থান রেখে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারবে না। যদি পারতো তাহলে প্রথমেই আমাদের মিডিয়াগুলো নিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নিরপেক্ষ না হয়ে বরং প্রেস ক্লাবের মত স্থানে একটি দলের হয়ে দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টায় মিটিং মিছিল করতে সাহস পায় এ দেশের স্বাধীনতা বিরোধীরা!

পাঠক লক্ষ্য করে দেখবেন, যখন এখানে স্বাধীনতা বিরোধী শব্দটি চলে এসেছে তখনই হয়ত অনেকের গায়ে চুলকানি শুরু হয়েছে যে, আমি নিশ্চিত করেই আওয়ামীপন্থি। কিন্তু বাস্তবতা শুধু বাস্তবিক জ্ঞান। আওয়ামী পক্ষ যদি কোন ভুল করে এবং আমি যদি আঙুল তুলে তা ধরিয়ে দিতে না পারি তাহলে আমি সুনাগরিক হব কী করে?

কথাটি কিন্তু আমার জন্যে নয়। সুনাগরিক তারাই যারা আধুনিক সমাজের সুশীল। কিন্তু সুশিলতা বর্তমানে একটি ট্র্যাডিশন মাত্র। সে দিকে না গিয়ে মূল দিকে চোখ বোলালে দেখা যায়, যখন দেশের সর্বত্র স্বাধীনতাবিরোধীরা উঠেপড়ে লেগেছে একটি দলের ছায়ার আড়ালে, তখন তারা কী করে চুপ করে থাকেন? ভোট কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হল! তখনো তারা চুপসে গেলেন।

লক্ষ্য রাখা উচিৎ, ভোট কেন্দ্রগুলো এক একটি স্কুল। এখানে পাঠদান করা হয়, যদি কিছু শিখতে হয় তাহলে বিএনপিকে এখানে এসে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। একাত্তরের মত আগুন জ্বালিয়ে নয়। আগুন জ্বালানোর পরিণতি পূর্বেও যেমন ভালো হয় নি, এখনো ভালো হবে না তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। কিন্তু কারা এই আগুন জ্বালাচ্ছে? বিএনপি মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলেও  জনগণ ঠিকই জেনে গেছে আগুনের পেছনের রহস্য কী?

শুধু একটি পরগাছার জন্যে বিএনপির এত দরদ, দেখলেই কেমন জানি গায়ে জ্বালা উঠে তরুণ প্রজন্মের। প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলীয় নেতা  খালেদা জিয়াকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে টেলিফোন করেছিলেন তখন যদি তিনি সংলাপে বসতেন এবং হরতাল প্রত্যাহার করে নিতেন তাহলে আজকে বিএনপিকে এই অবস্থায় পড়তে হত না। বরং জনগণের ভোটের জোয়ারে তাদেরই নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি ছিল। বিএনপি পদে পদে ভুল করেছে, কারণ তারা যে সাপ পুষে আসছিল সেই সাপই প্রতিনিয়ত তাদের ছোবল মারছে।

আজ বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ ভোট দিতে পারছে না, আমি নিজেও ভোট দেওয়ার অধিকার হারিয়েছি। কারণ, এখানকার সংসদ সদস্য বিনা প্রতিযোগিতায় নির্বাচিত। কিন্তু আমাদের এই ভোট হরণ করে নেওয়ার জন্যে কে বা কারা দায়ী? আওয়ামী লীগ? বিএনপি? জামায়াত? নির্বাচন কমিশন? সহজভাবে চিন্তা করে দেখলেই বুঝা যাবে, কেন বিএনপি নির্বাচনে এলো না? কেন আমরা ভোট দিতে পারছি না? শুধু একটি পরগাছা জামায়াতের এজেন্ডার জন্যে। আর তা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। শুধু এই ইস্যুতেই আজকের এই নির্বাচনের মাধ্যমে পালা বদল। যেহেতু বিএনপি জামায়াতের জন্যে নির্বাচনে এলো না এবং আমার মত অনেকেই ভোট দিতে পারছে না তাই এর দায়ভার পরগাছা জামায়াত তথাপি বিএনপিরই। এর দায়ভার কি বিএনপি কোন দিন এড়াতে পারবে? অন্যদিকে আওয়ামী লীগও যে সব ক্ষেত্রে ছাড় দিতে প্রস্তুত ছিল না তা অস্বীকার করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তো অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই করছে আওয়ামী লীগ, আর সেই রসদ যোগাচ্ছে মুক্তিকামী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি প্রজন্ম।

৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন। যেসব স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে সব স্থানের নিরাপত্তাসহ দেশের প্রায় প্রতিটি স্থানেই সেনাবাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। সে সব এলাকার প্রতিটি জনগণকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন পরগাছারা কোন সুযোগ অবলম্বন করতে না পারে। নির্বাচনে প্রতিটি জনগণকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা আপনার নিজস্ব অধিকার। এই অধিকার কেউ হরণ করে নিতে পারে না। যেটুকু আছে সে অধিকার প্রয়োগ করুণ। নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু উপায়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারকে যেতে সাহায্য করুণ। আওয়ামী লীগকে অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে ৫৫-৫০% ভোট কাস্ট হয়। নতুবা এই নির্বাচন মূল্যহীন হয়ে পড়তে পারে। তাই এই মুহূর্তে প্রতিটি জনগণকে শঙ্কামুক্ত করে অবাধে ভোট প্রদান করতে সাহায্য করার দিকে মনোনিবেশ করুণ।

নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার পর জনগণের দাবি বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ যেন পূর্ববর্তী ভুল শুধরে নতুন আঙ্গিকে দেশের উন্নয়নে কাজ করে সেই আশাবাদ দেশের প্রায় প্রতিটি জনগণের। যদি এই পাঁচ বছরে আওয়ামী সরকার যে ভুলগুলো করেছিল তা না করত তাহলে আওয়ামীলীগকে এই শঙ্কার মধ্যে পড়তে হত না বলেই আমার অভিমত।

দেশের উন্নয়ন ও ইতিবাচকতার লক্ষ্যে বাংলার সব জনগণ এক হবে এই আশাবাদ প্রতিটি সত্যিকারের বাঙালির। কেউ চায় না নতুন করে পেট্রোল বোমায়  ঝলসে যাক সাধারণ জনতা, ভোট কেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার নাম করে শিশুদের শিক্ষা কেন্দ্রগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হোক। সবার মনে বরং একটাই প্রত্যাশা সাতক্ষীরার মত আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একত্রিত হয়ে প্রতিরোধ করবে অপশক্তিকে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধার্মিক ও নন ধার্মিক উভয়েই শাবিপ্রির মত তৈরি করবে নতুন নতুন ড্রোন আর তা ব্যবহৃত হবে মানবতার তরে।

ইতিবাচক বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে বিশ্ব মডেল হয়ে, প্রতিটি দেশ শিক্ষা নেবে এই মডেল তত্ত্ব থেকে। একাত্তরের অসমাপ্ত কাজগুলো আমাদের যার যার নিজস্ব কাঁধে তুলে নিতে এতো অপারগতা কেন? ইতিহাস থেকে শিক্ষা যারা নেয় নি, তারা বারবারই মার খেয়েছে অতীতে। ভবিষ্যতেও সুনিশ্চিত মার খাবে।

নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার গঠনের পর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট পাল্টে গিয়ে চতুর্দিকে শুধু ইতিবাচকতার ও উন্নয়নের জোয়ার বইবে এটাই হোক সর্বাত্মক প্রচেষ্টা।

এমদাদুল হক তুহিন: ব্লগার ও কবি, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ২২৪৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।