৫ জানুয়ারি, ২০১৪-র জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। এতোদিন নির্বাচন হবে কি হবে না, এ নিয়ে যে সংশয় ছিল, আজ তার অবসান হলো।
দেখুন, নির্বাচন হওয়াটা কতোটা জরুরি ছিল সে বিষয়টি এড়িয়ে যারা নির্বাচন করাটা সঠিক হয়নি বলে মতামত দিয়ে থাকেন তাদের কথা হচ্ছে, জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পায় নি। কথা সত্য, কিন্তু কেন একটি বড় রাজনৈতিক দলের সমর্থকগোষ্ঠী ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলো না, তা তারা সেই রাজনৈতিক দলটির কাছে যদি প্রশ্ন করেন তাহলে তারা কী সদুত্তর দেবেন? জানি, সমর্থকগোষ্ঠীর ভেতর যারা ভোকাল তারা বলবেন, এজন্যও সরকার দায়ী। আবার আওয়ামী লীগের জোরালো সমর্থকরা দোষ চাপাবেন সম্পূর্ণই বিপক্ষের ঘাড়ে। কিন্তু এই দোষাদোষীর ভেতর থেকে নির্বাচন-পদ্ধতিকে উদ্ধারের বিষয়টি এই মুহূর্তে জোরালোভাবে আলোচনা হওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। ‘হ্যাঁ-না’ ভোট কিংবা একা-একা নির্বাচনের যে নজির এদেশে সৃষ্টি হয়েছিল, ২০০৮ সালের নির্বাচন সেসব কালিমাকে সরিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি উচ্চতায় নিয়ে এসেছিল। আজকের নির্বাচন হয়তো নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্থাগুলিকে কোনো বদনাম এনে দেবে না; কিন্তু নির্বাচনকে ঘিরে ঘটা সহিংসতা গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করবে। যদিও আমার ব্যাখ্যা একটু ভিন্ন রকম। আমি মনে করি যে, এই সহিংসতা বা হত্যাকাণ্ড এবং অগ্নিসংযোগ আসলে নির্বাচন বন্ধ করার জন্য, প্রার্থীদের স্বাভাবিক রাজনৈতিক সন্ত্রাস হিসেবে একে দেখার সুযোগ নেই। এটা বাংলাদেশে নতুন এবং এর প্রভাবও আগামীতে আমাদের ভয়ঙ্করভাবে সইতে হবে। নির্বাচনী সহিংসতার এই নতুনতর রূপ (নতুন এ কারণে যে, ১৯৯৬ সালের একদলীয় নির্বাচনেও এভাবে ভোটকেন্দ্র পোড়ানো কিংবা হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে দেখি নি আমরা) আমাদের সামনের দিনগুলির ভয়াবহতার ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
এবার আসা যাক, আজকের নির্বাচনে কোন্ পক্ষ কী পেলো আর কী হারালো তার একটা নিজস্ব ব্যাখ্যায়। আগেই বলেছি যে, এই ব্যাখ্যা সম্পূর্ণই আমার নিজস্ব বিশ্লেষণপ্রসূত। এর সঙ্গে হয়তো অনেকেরই মতের মিল হবে না কিন্তু আমাদের অসহিষ্ণু সমাজব্যবস্থায়, অন্যের মতামতের মূল্য দেয়ার বিষয়টি যেভাবে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে তাতে এটা অমূলক নয় যে, অনেকেই এই লেখাকে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করবেন। তাতেও কোনো অসুবিধে নেই; কিন্তু মতের অমিল হলেই যে তাকে আঘাত করতে হবে এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসাটা খুউব জরুরি। আমি মোটা দাগে আজকের নির্বাচনে সব পক্ষের অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি।
সরকার
সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপদ্ধতি বাদ দিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে একটি সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন। যেহেতু বিএনপি-জামায়াত জোট এই সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেয়নি সেহেতু ‘সর্বদলীয় সরকার’ না বলে আমরা একে ‘নির্বাচনকালীন বহুদলীয় সরকার’ আখ্যা দিয়ে আলোচনা করতে পারি। এই বহুদলীয় সরকারের সমালোচনা করতে চাইলে বহু সমালোচনাই করা যাবে। কিন্তু নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিকল্প এই সরকারের সামনে ছিল কি না তা নিয়েও আমাদের কথা বলা দরকার। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা বা গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখতে এই সরকারের পক্ষে নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কিছু ছিল বলে মনে করার কোনো কারণ নেই, বিজ্ঞজনেরা তা যতোই বলুন না কেন। শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে ১ মিনিটেই সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে তত্ত্ব প্রচারকারীরা বিকল্প কোনো পথ না বাতলেই এই তত্ত্ব দিয়েছেন। বলাই বাহুল্য, সেটি তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও শেখ হাসিনার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার কোনো কারণ নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনের ফলাফল থেকেই যদি বলি তাহলে বলতেই হবে যে, ২৩০টি আসন লাভকারী দল কী করে ৩০টি আসন লাভকারী দলের নির্দেশ মানবে? ফলে, নির্বাচনকালীন সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথই বেছে নিয়েছে। তাই আজকের নির্বাচনের ভেতর দিয়ে এই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব শেষ হলো। কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো আমরা এই সরকারের কাছ থেকে নতুন সরকারকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে দেখবো। এখানেই তাদের দায় শেষ।
নির্বাচন কমিশন
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যেভাবে গঠিত হয়েছে অর্থাৎ একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে, তা এদেশে নজিরবিহীন। খালেদা জিয়াও নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অতএব, এই নির্বাচন কমিশনকে বিএনপি আজকে অবৈধ বললেও মানুষ তা মানবে না। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো, এই নির্বাচন কমিশনেরই বা খুব বেশি কিছু করার ছিল কি না, আজকের নির্বাচন অনুষ্ঠান করা ছাড়া? বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতর কারা নির্বাচনে আসবে আর কারা আসবে না, তার দায়-দায়িত্ব কি কোনো ভাবেই নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া যায়? আমার মনে হয় দেওয়া যায় না। নির্বাচন কমিশনের কাজ সঠিক সময়ে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। এই দায়টা অনেকটাই টেকনিক্যাল। এবং সে কাজটি এই নির্বাচন কমিশন যে সঠিকভাবে করতে পেরেছে সেকথা এর নিন্দুকদেরও স্বীকার করতে হবে। যেসব সহিংসতা, হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে তার দায় নির্বাচন কমিশনের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবেন অনেকেই; কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা থাকলেও সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতার কথাটি আমাদের অজানা থাকার কথা নয়। বাংলাদেশের মতো দেশে নির্বাচন কখনোই সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ হয়নি কোনোদিনই। তাই ঘটে যাওয়া সহিংসতার দায় নির্বাচন কমিশনের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক শক্তির, বিশেষ করে যারা নির্বাচন ঠেকাতে চেয়েছে তাদের। আগের মতো ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট চুরি করে জাল ভোট দেয়া ইত্যাদির জন্য আজকের সহিংসতা যে হয়নি তা একটি শিশুও জানে। আগেই বলেছি, এই সহিংসতার রূপ ও চরিত্র ভিন্ন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তাদের ওপর আসা “সময়ের প্রয়োজন” তাদের মতো করে সামলানোর চেষ্টা করেছে, কতোটুকু সফল হয়েছে তা বিচারের ভার দেশবাসীর। এর বেশি নির্বাচন কমিশনের করার কিছু ছিল কি না, সে সিদ্ধান্তও দেশের মানুষই নেবে।
আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল
দেশের ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, যাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের চরিত্র ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত। নির্বাচন বর্জনের ইতিহাস দলটির নেই-ই বলতে গেলে। স্বৈরশাসকের অধীনেও দলটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। আর এখন তো দলটি দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে একটি জোটের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেছে। দায়িত্ব পালনকালে তাদের ভুলভ্রান্তি ও দোষগুণ নিয়ে যথেষ্ট আলোচনা করা যায়। কিন্তু সময় শেষে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাইরে আওয়ামী লীগের ভূমিকাকে আমরা কীভাবে দেখবো? মানে আওয়ামী লীগের সামনে বিকল্প আর কী পথ খোলা ছিল? হ্যাঁ, আমরা বলতেই পারি যে, আওয়ামী লীগ প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনে আনতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু বিরোধী দলকে আওয়ামী লীগ যে সংসদেও আনতে পারেনি বিগত পাঁচ বছর ধরে সেকথাওতো আমাদের বলতে হবে, তাই না? এখন প্রশ্ন হলো, একটি রাজনৈতিক দলকে সংসদে কিংবা নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আরেকটি রাজনৈতিক দল কীভাবে নেবে? কোন্ লোভনীয় বস্তু দিয়ে তাদের উৎসাহিত করবে? একমাত্র স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই কি বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে আসতে পারতো? আপনার কি মনে হয়? আমার মনে হয়, পারতো না। অতএব, আওয়ামী লীগের সামনে নির্বাচন ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল বলে আমি মনে করি না। কিন্তু এখন নির্বাচন তো হলো? তারপর? এরই মধ্যে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার কথা শুনিয়েছেন খোদ্ শেখ হাসিনাই। তার মানে আবার নতুন আলোচনা-খেলা আমরা দেখবো। কিন্তু আলোচনা শুরুর আগেই তো অনির্দিষ্টকালের জন্য আজকে আবার ৪৮ ঘন্টার হরতাল ডেকে বসে আছে বিএনপি। এখন কী হবে আলোচনার? এখন যদি শেখ হাসিনা বলেন যে, আলোচনা শুরুর আগে সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, হরতাল-অবরোধ বন্ধ করতে হবে এবং আলোচনা চলাকালে অর্থাৎ কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে যদি একটিও মানুষ মারা যায় তাহলে আলোচনা-প্রক্রিয়া তৎক্ষণাৎ বন্ধ করা হবে, তখন? আমরা তখন কি শেখ হাসিনাকে দোষ দিতে পারবো? আরো একটু দূরবর্তী প্রশ্নও জাগে মনে, তা হলো, দল হিসেবে আওয়ামী লীগও যদি তুচ্ছ কোনো কারণ দেখিয়ে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়? মানে ভবিষ্যতে আর কি, তখন? তাহলে কি আর কোনোদিনও এদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে না? ভাবুন, প্লিজ, ভাবনাটা জরুরি।
বিএনপি
খালেদা জিয়ার আপোসহীন ইমেজ এবার কি কিছুটা ক্ষুন্ন হলো? এরকম একটি প্রশ্ন এখন তার দলের ভেতরও অনেকের মুখে মুখে। এর কারণ, আপোসহীনতার ইমেজ ধরে রাখার জন্য যে আন্দোলনের নেতৃত্ব তিনি এতোদিন দিলেন তাতো আসলে জমে নি। নির্বাচন তো হলোই, তা যেমনই হোক না কেন। আমরা জানি যে, নির্বাচনের পক্ষের লোকেরা একে খুব ভালো নির্বাচন হিসেবে প্রমাণ করবেন আর বিরোধীরা একে যাচ্ছেতাই একটি নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করবেন। এর কোনোটিই যদিও সত্য নয়। কিন্তু নির্বাচন হয়েছে এবং এটি ঠেকানোর জন্য যে লাশের সারি ক্রমশ দীর্ঘতর হয়েছে তার দায় কিন্তু পুরোটাই বেগম জিয়ার ওপরেই গিয়ে পড়েছে। আর সবচেয়ে যে বিষয়টি দেশে-বিদেশে আলোচিত হচ্ছে তাহলো, একটি নিষিদ্ধ ও সন্ত্রাসী রাজনৈতিক শক্তির ভেতর খালেদা জিয়া ও তার দলের পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি। আজকের নির্বাচন এটি আসলে স্ট্যাম্প করে দিয়েছে প্রমাণ হিসেবে। নির্বাচনে লোক সমাগম হয় নি, কিন্তু কারচুপি হয়নি, এটি নির্বাচন কমিশনের সাফল্য; নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এটি সরকার ও আওয়ামী লীগের সাফল্য। কিন্তু নির্বাচনী সহিংসতায় যে ১৪ জন মারা গেছে এর দায় পুরোটাই খালেদা জিয়ার। এবং তিনি এটি করেছেন জামায়াতকে দিয়েই। আগামীতে যে সময়ই নির্বাচন হোক না কেন, আর বিএনপি তাতে অংশ নিলেই এই ১৪ লাশের (আসলে আরো বেশি, নির্বাচনকে ঘিরে আসলে লাশের সংখ্যা প্রায় হাজারে পৌঁছুবে) স্মৃতি খালেদা জিয়াকে তাড়া করবে। আরেকটি কথা, নির্বাচন শেষ না হতেই আবারও সহিংসতার যে আহ্বান বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হলো তাতে ওপরে যে আলোচনার কথা তুলেছি তা ভেস্তেই যাবে বলে মনে হচ্ছে। ২০০৯ সাল থেকেই শান্তিতে থাকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিএনপি-জামায়াত বর্তমান সরকারকে আসলেই শান্তিতে থাকতে দেয় নি; এরপর যেকোনো মূল্যে নির্বাচন ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েও পারে নি -- এই সমূহ ব্যর্থতার স্মৃতি নিয়ে যদি নতুন সরকার আরো কঠোর হয় তাহলে দেশটার কী হবে তা একবার বিএনপিনেত্রীকে ভেবে দেখবার অনুরোধ জানাবো। যেহেতু জামায়াত-বিএনপির কারণেই দেশে সবচেয়ে বেশি অশান্তি এ যাবত সৃষ্টি হয়েছে সেহেতু আবেদনটা খালেদা জিয়ার কাছেই জানাতে হবে। দেশে শান্তি চাইলে এবার একটু “কম আপোসহীন” হতে হবে, তাই না?
জাতীয় পার্টি
দলটি সম্পর্কে যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। নাইতে নামবো কিন্তু চুল ভেজাবো না -- গত পাঁচ বছরে এই চরিত্র নিয়েই কাটিয়ে দিয়ে শেষ সময়ে এসে যে নাটক দলটির প্রধান করেছেন তাতে এর ভবিষ্যতও ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এদেরকে টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে বড় দু’টি দল এবং কিছু প্রেশার গ্রুপ। জানি না, কতোদিন এভাবে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা সম্ভব হবে? এর শেষ তো একদিন না একদিন হবেই। আমার বিশ্বাস, আজকের নির্বাচনের পরেই এই শেষ হওয়ার প্রক্রিয়া আরো গতিমান হবে।
জামায়াত ইসলামী
একটি নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে ছিল না কিন্তু আজকের নির্বাচনে প্রমাণিত হলো যে, বিএনপি নামক একটি বড় দল আসলে নিজেদের ভুলেই জামায়াতে ইসলামীর বি-টিমে পরিণত হয়েছে। হয়তো আগামীতে যেকোনো নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণও নিশ্চিত করবে জামায়াত, যদিও তখন হয়তো দলটি তার এই নাম রাখতে পারবে কি না সন্দেহ আছে। যেভাবে চাপ আসছে তা নতুন সরকারকে হয়তো জামায়াতের বিরুদ্ধে আরো কঠোর করে তুলবে। তাতে বিএনপিই হয়তো লাভবান হবে কিন্তু এই যে বিএনপির ‘মুক্তিযোদ্ধার দল’ হিসেবে চরিত্রের বিপর্যয় ঘটলো এটি কাটানো দলটির জন্য মুশকিলই হবে। আগামীতে অর্থায়নেও ঘাটতি আসতে বাধ্য, ফলে বিএনপির ভেতর জামায়াতকে ত্যাগ করার দাবি আরো জোরালো হবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জামায়াতের ভবিষ্যৎ এদেশে কী দাঁড়াবে, তার আলামত দেখা গেলেও সিদ্ধান্ত দেওয়ার সময় এখনও আসে নি। তবে একটি কথা বলে যাই, জামায়াতকে নিয়ে তরুণ প্রজন্মের অবস্থান কিন্তু খুবই পরিষ্কার। এই পরিষ্কার অবস্থানটি যদি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বুঝতে না পারে তাহলে রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
সবকথার শেষ কথা হলো জনগণ। জনগণ কী চায়? শান্তি শান্তি এবং শান্তি। জনগণ রাজনৈতিক অস্থিরতায় অস্বাভাবিক মৃত্যু চায় না, কাজ করে ঘরে ফেরার নিরাপত্তা চায়। আর এটুকু নিশ্চিত করতে আগামীকাল যে দল বা যে পক্ষ আগে তাদের “ইগো” নামাতে পারবে, আগামী দিনে জনগণ তাদেরই মাথায় করে নাচবে। দেখা যাক, আওয়ামী লীগ না বিএনপি, কারা এই কাজটি আগে শুরু করে।
মাসুদা ভাট্টি: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৩
সম্পাদনা: জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর