একটি কল্প দৃশ্য দিয়ে লেখাটি শুরু করা যাক। ধরুন পরিবারে সবার সঙ্গে আপনার ঝগড়া হয়েছে।
এবারে আসা যাক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির সম্ভাব্য একটি প্রস্তাবনায়। তাদের প্রস্তাবনায় অন্যান্য দেশ সম্পর্কেও বলা আছে। তবে আমরা বাংলাদেশ বিষয়ে একটু দৃষ্টিপাত করি। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের আইসিসির পূর্ণ সদস্য পদ থাকবে। থাকবে টেস্ট মর্যাদাও। তবু টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ খেলবে আইসিসি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপে। এই টুর্নামেন্টে আইসিসির সহযোগী দেশগুলো খেলবে। যে চ্যাম্পিয়ন হবে, সে চ্যালেঞ্জ টেস্ট সিরিজ খেলবে ওই সময় টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের আটে থাকা দলের বিপক্ষে।
এই চ্যালেঞ্জ সিরিজে জিতলে বাংলাদেশ খেলতে পারবে একটা পূর্ণাঙ্গ টেষ্ট। হারলে আবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ খেলতে হবে। র্যাঙ্কিং এ ৯ এবং ১০ নম্বরের দল গুলোর জন্য এটা প্রযোজ্য। অর্থাৎ বর্তমান ৠাংঙ্কিং অনুযায়ী জিম্বাবুয়ে আর বাংলাদেশের উপরই এই খড়গ নেমে আসবে। যদিও প্রস্তাবনা দেখে মনে হয়েছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত ছাড়া টেস্ট খেলুড়ে বাকি দেশগুলোর কোনটিই আসলে নিরাপদ নয়।
ধরুন ছেলে চতুর্থ শ্রেণিতে ফেল করায় তাকে তৃতীয় শ্রেণিতে ডিমোশন দেয়া হল! তাহলে অবস্থাটা কেমন দাঁড়াবে? তাঁকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠতে দেয়া না হোক অন্তত চতুর্থ শ্রেণিতে তো আরেকবার পড়ার সুযোগ দেয়া উচিত। তা না করে যদি তৃতীয় শ্রেণিতে নামিয়ে দেয়া হয় তাহলে বিষয়টি মোটেই ভালো দেখায় না।
আর বাংলাদেশের বেলায় তো এটি আরও খাটে না। আমার মনে আছে, সেবার যখন আমরা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হই; সেকি আনন্দ দেশ জুড়ে। এর পর প্রথম বার বিশ্বকাপে গিয়ে পাকিস্তানকে হারিয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস আর একটু একটু করে সামনে এগুনো। এসবই তো আমাদের চোখের সামনে দেখা। আমাদের মুশফিক এইতো সেদিন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কারই মাটিতে ডাবল সেঞ্চুরি করলেন, আর নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশের মটিতে পর পর দুই ওয়ানডে সিরিজে বাংলাওয়াশ তো এই বাংলাদেশ দলই করেছে।
এ ছাড়া সাকিব তো রয়েছেই। এতো সব অর্জনের পর নিশ্চয়ই বলা যায় না, একটা দল তাঁদের সক্ষমতা দেখাতে পারেনি কিংবা ওই চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার যে উদাহরণ দিয়েছি সেটি আদৌ আমাদের এই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ক্ষেত্রে খাটে বলে অন্তত মনে হয় না।
অথচ দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে আইসিসির প্রস্তাব যদি অন্যান্য দেশগুলোর ভোটে পাশ হয়ে যায় তাহলে চতুর্থ শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠা তো দূরে থাক, উল্টো বাংলাদেশকে তৃতীয় শ্রেণিতে নামিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে!
আইসিসির সম্ভাব্য প্রস্তাব পাশ হবে কিনা তা হয়তো কিছু দিন পর জানা যাবে। তবে এটি ভোটে যাওয়ার আগেই হয়তো আইসিসি আর তিন পরাক্রমশালী দেশ যারা নিজেরাই এই আইন করতে চাচ্ছে; ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের ক্রিকেট বোর্ডকে আমরা ই-মেইল বা পত্রের মাধ্যমে ক্রিকেটে আমাদের অগ্রগতি, আবাগে ও ভালোবাসা জানান দিতে পারি। এতে করে হয়তো তাঁরা তাঁদের প্রস্তাবনা নিয়ে দ্বিতীয় বার ভাববার অবকাশ পাবে।
এই মুহূর্তে আইসিসিকে কি লেখা যেতে পারে তার একটা খসড়া আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা। একটা প্রশ্নই নাহয় ওদের করা যাক। বলা যাক, ‘তোমারা কি জানো কোন দেশের মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা, এমনকি কয়েক দিন লাইনে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট খেলার টিকেট সংগ্রহ করে? এর পরও যদি টিকেট না পায় এতটুকু মনঃক্ষুণ্ণ না হয়ে দিগুণ উৎসাহে নিজ দলকে সমর্থন দিয়ে যায়? যদি না জেনে থাকো তাহলে জেনে নিও দেশটি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। ’
আইসিসিকে ই-মেইল করতে চাইলে- [email protected]
ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে ই-মেইল করতে হলে- [email protected] , [email protected]
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডেকে ই-মেইল করতে হলে- [email protected] / [email protected]
এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড বা অন্যান্য দেশের ক্রিকেট বোর্ডের ফেস বুক পেজেও ম্যাসেজ দিয়ে তাদের জানান দেয়া যেতে পারে। আসুন সবাই এই তার বার্তা পাঠিয়ে ক্রিকেটের প্রতি আমাদের ভালোবাসা জানান দেই।
আমিনুল ইসলাম: সহকারী অধ্যাপক, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ২২৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৪