শনিবার বিকেল। ছোটবোনের সঙ্গে বসে চা খাচ্ছি হলের সামনের ক্যাফেতে।
চায়ে কয়েক চুমুক পড়তে না পড়তেই হঠাৎ বিচলিত হয়ে উঠলো আমার আদরের বোন। আমাকে তাগাদা দিয়ে বললো- আপু ওঠ, বড় আপুরা আসছে। আমাকে গালিগালাজ করবে। নানাভাবে হেনস্থা করবে।
প্রথমে বিভ্রান্ত হলেও একটু পর ঠিকই বুঝে যাই, র্যাগিংয়ের ভয় পাচ্ছে আমার বোন।
নতুন পরিবেশে যাতে সহজে নিজেকে মানিয়ে নেয়া যায় তাই র্যাগিং রীতির প্রচলন হয় শিক্ষাঙ্গণে। কিন্তু এখন তা পরিণত হয়েছে অত্যাচারে। বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে নবাগতদের জন্য এখন এটা আতঙ্কেরই অপর নাম বটে।
বাবা-মা ছেড়ে এসে আমার বোন অচেনা পরিবেশে এমনিতেই মানসিকভাবে খানিকটা অসহায়, তার ওপর যুক্ত হয়েছে র্যাগিং এর যন্ত্রণা। তার আরো ক’জন সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলে জানলাম, এখানকার বড় আপুরা রীতিমত প্রহসন চালাচ্ছে নতুন আসা ছাত্রীদের ওপর। কিন্তু তারা ভয়ে মুখ ফুটে কিছুই বলতে পারছে না।
শীতের রাতে রুম থেকে বের করে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের ছবি তুলে নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তীতে তা আপলোড করা হচ্ছে ফেসবুকে।
নতুন মেয়েদের রান্না করার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ডাইনিং বা ক্যাফেটরিয়াতেই খেতে হয় তাদের। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। কোন বড় আপু থাকলে তারা খেতে পারবে না। আর যদি কেউ খাওয়া শুরু করে থাকে তাকে খাওয়া শেষ করতে হবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। দোতালায় গ্যাস সংযোগ থাকা সত্ত্বেও এই মেয়েগুলো সেখানে খাওয়ার জন্য পানি গরম করতে পারবে না, প্রয়োজন অনুযায়ী বাথরুম ব্যবহার করতে পারবে না।
হল প্রশাসন সব কিছু জানার পরও নীরব ভুমিকা পালন করছে। কিসের প্রভাবে? কার ভয়ে?
তাহলে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে আসা এই মেয়েগুলো কোথায় যাবে? তারা কি শিখছে, আর তারাইবা অন্যদের সঙ্গে ভবিষ্যতে কি করবে?
আর যারা এসব করছে তাদের নৈতিক শিক্ষাটাইবা কেমন?
প্রশাসন কি একটু চিন্তা করবেন?
নুসরাত নিতু: মার্চেন্ট ব্যাংকার
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০১৪
মুক্তমত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ছাত্রী হলে র্যাগিং যন্ত্রণা
নুসরাত নিতু, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
![ছাত্রী হলে র্যাগিং যন্ত্রণা](public/uploads/2014/02/09/Ragging_bg_510081454.jpg)
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।