ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি মেশানো উচিত হবে কিনা এই নিয়ে সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ আলোচনা চলছে। বিশেষ করে এশিয়া কাপ চলাকালে বাংলাদেশি নাগরিক বেশ কিছু দর্শকের পাকিস্তান ও ভারত প্রীতি দেখে এই নিয়ে আলোচনা বেশ একটা জমে উঠেছে।
অনেককেই বলতে শোনা যায় খেলার সাথে রাজনীতি মেশানো ঠিক না। আমরা আসলে ভুলে যাই সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক বিষয়গুলো যেমন রাজনীতির সাথে জড়িত ঠিক তেমনি খেলাধুলাও এর বাহিরের কোন বিষয় না। এই যেমন ক্রিকেটেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দুই রাজনীতিরই প্রভাব রয়েছে।
একটা বিশাল সময় জুড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারেনি। দেশটি লম্বা একটা সময় ধরে নিষেধাজ্ঞার কবলে ছিলো। আর এর কারণ হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি; সেখানে ওই সময়ে বর্ণবাদ প্রচলিত ছিল আর এই বর্ণবাদের কারণ দেখিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা থেকে বহিষ্কার করা হয়। পাকিস্তানে বর্তমানে আন্তর্জাতিক কোন ক্রিকেট খেলা হয় না, এর কারণ সেখানকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক অস্থিরতা!
এতো গেলো দেশগুলোর জাতীয় রাজনীতির একটা প্রভাব। আন্তর্জাতিক রাজনীতিও যে কোথাও কম যায় না, সেটি দেখা যায় ভারত ও পাকিস্তান এক দেশ আরেক দেশে একটা দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে যায়নি। আর এর কারণ হচ্ছে, দেশ দুইটির মাঝে সম্পর্ক ভালো না। এমনকি ভারতের আইপিএলে তাবত পৃথিবীর সব দেশের খেলোয়াড়রা এসে খেলে যেতে পারলেও পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা সেখানে স্থান পান না। আর এর কারণ কিন্তু কেবল ক্রিকেট না বরং রাজনৈতিক সম্পর্কের টানাপড়েন!
তাই এটি আসলে এক রকম পরিষ্কার, খেলা তথা ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি খুব ভালো করেই জড়িত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ক্রিকেটের সাথে যদি রাজনীতি জড়িত হয়েই থাকে তাহলে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের কিংবা ভারতের খেলা হলে সেখানে বাংলাদেশের নাগরিকদের পাকিস্তানের কিংবা ভারতের পতাকা গায়ে জড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশকে কিভাবে দেখা উচিত?
একদল হয়তো বলছে এটি তাদের ইচ্ছা; কেও যদি একটি দলেকে সাপোর্ট করে তাহলে সেটি তো তারা তাদের ইচ্ছাতেই করছে আর এই অধিকার তো তাদের আছে; আরেকদল বলছে ফুটবল বিশ্বকাপের সময় যদি ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার সাপোর্ট করা যায়, সে দেশের পতাকা টানিয়ে রাখা যায় তাহলে ক্রিকেটে ভারত, পাকিস্তানের বেলায় সেটি হলে ক্ষতি কি। এই দলটি অবশ্য এই কথা বলে বুঝাতে চাইছে ক্রিকেটের সাথে রাজনীতি মেশানো ঠিক না। অথচ তারা ভুলে যাচ্ছে এখানেই আসল রাজনীতি।
পাকিস্তান ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আমাদের সাথে যা করেছে এবং যুদ্ধের পর আজ এতো বছর হয়ে যাওয়ার পরও ক্ষমা চায়নি দেশটি। সেই দেশকে আমরা কি করে ক্ষমা করে দেই? যে দেশটি আজও সুযোগ পেলেই সন্ত্রাসী বা সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিতে চায় সেই দেশের সাথে আমাদের সম্পর্ক কখনোই মসৃণ হতে পারে না। আর সেই দেশের পতাকা হাতে কিছু বাংলাদেশি স্টেডিয়ামে বসে উচ্ছ্বাস করে বেড়ালে সেটি দৃষ্টিকটু ঠেকবে এটাইতো স্বাভাবিক।
পাশের দেশ ভারতের পতাকা হাতেও অনেক কে স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে। ভুলে গেলে চলবে না দেশটি এখনো সিমান্তে হত্যা বন্ধ করেনি, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে এখনো সে দেশে আমন্ত্রণ জানায়নি। তাই তাদের প্রতি কিছু বাংলাদেশির উচ্ছ্বাসও আসলে দৃষ্টিকটু বলেই মনে হয়।
ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার সাথে তো আমাদের কোন সামাজিক, সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিক বিরোধ নেই। যেহেতু নেই, তাই হয়তো আমরা এটিকে দৃষ্টিকটু হিসেবে দেখি না। আর ভুলে গেলে চলবে না ক্রিকেটের সব বৈশ্বিক আসরে বাংলাদেশ নিজেই প্রতিনিধিত্ব করে। যেখানে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব আছে সেখানে অন্য দেশের পক্ষ হয়ে দর্শক বনে যাওয়াটাও নিশ্চয়ই ভালো দেখায় না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা পাকিস্তান বা ভারতের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে যাচ্ছে বা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে তাদের নিয়ে কি করা? দেশে কি এমন কোন আইন আছে যেটি তাদের এ কাজ করতে বাঁধা দিতে পারে? আইন আছে কি নেই সেটি বলতে পারছি না, তবে সচেতনতা তো অন্তত তৈরি করাই যায়। আর সচেতনেতার ফলাফল টুকু আমরা এই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপেই দেখতে চাই।
আমিনুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ই-মেইল- [email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৭১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১২, ২০১৪