ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

আইডিয়ালে অবৈধ ভর্তি বন্ধ (২য় পর্ব)

কৌশলী সিন্ডিকেট

নুর মোহাম্মদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৪
কৌশলী সিন্ডিকেট ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: আর কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে না বৃহস্পতিবার স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের পরও থেমে নেই অবৈধ ভর্তির সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেট সদস্যরা। তারা অনেকটা কৌশলে চালাচ্ছে নানা ছল-চাতুরি।


 
শুত্রুবার সকালে স্কুলের নোটিশ বোর্ডে ‘ভর্তি সংক্রান্ত সকল আলোচনা বন্ধ’ লেখা একটি নোটিশ টাঙ্গানো হয়েছে। তবে সেখানে কৌশলে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ কি না এ বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
‌‌‌‌
বিষয়টিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের এক ধরনের চালাকি বলে দাবি করছেন অভিভাবকরা।
 
তারা বলছেন, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্কুলে কোনো ভর্তি নেওয়া হবে না পরিষ্কার জানানোর পরও এ ধরনের নোটিশ দিয়ে মূলত বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেওয়া হচ্ছে।
 
ব্যাখ্যা দিয়ে সূত্র বলছে, যাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে তাদের বোঝানো যে ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। অন্যদিকে, চলছে স্কুল কর্তৃপক্ষকে ছলে বলে কৌশলে বাগে আনার চেষ্টা।  
 
বিষয়টিকে স্কুল কর্তৃপক্ষের ছল-চাতুরি দাবি করে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল হক দুলু শুত্রুবার বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করে বলেন, এ বছর সব ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ না বলে কৌশলে ভর্তি সংক্রান্ত সকল আলোচনা বন্ধ এমন নোটিশ দিয়ে কর্তৃপক্ষ কৌশলী ভূমিকা নিয়েছে।
 Copy_of
ওই নোটিশ দিয়ে কী বুঝাতে চেয়েছেন জানতে চাইলে শুক্রবার স্কুলটির অধ্যক্ষ ড. শাহানআরা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, নোটিশ দিয়ে বোঝাতে চেয়েছি যে ভর্তির বিষয়ে আর কোনো তদবির চলবে না।

এদিকে, অভিভাবক সূত্র বলছে, বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে রাশেদ খান মেনন ‍আর কোনো ভর্তি নয় সাফ জানানোর পরও সিন্ডিকেট বিভিন্ন জায়গায় তাদের তদবির চালিয়ে যাচ্ছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুলের অধ্যক্ষের রুমে মিটিং করতে যান তারা। তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে ড. শাহানআর বেগম কৌশলে স্কুল থেকে বের হয়ে যান।
 
এসময় তিনি ভর্তি সংক্রান্ত আর কোনো আলোচনা না করার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নোটিশটি টানানোর ব্যবস্থা করেন।

অধ্যক্ষের অফিস সূত্র বলছে, অবৈধ ভর্তি সিন্ডিকেটের সদস্য ওই স্কুলের বাংলার শিক্ষক আব্দুর রশিদ, আব্দুল সালাম খান, তার ভাই ইঞ্জিনিয়ার আতিক, গভর্নিং বডির (জিবি) সদস্য খন্দকার মোসতাক, আহসান উল্লাহ মানিক, আমজাদ হোসেন এবং মতিঝিল থানার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের তিন নেতা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করছেন স্কুল কর্তৃপক্ষের ওপর। এছাড়া বিভিন্ন মাধ্যমে জিবির সভাপতি রাশেদ খান মেননকে ম্যানেজ করতেও চালাচ্ছেন জোর তৎপরতা।
 
তবে রাশেদ খান মেনন তার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন বলে সূত্র উল্লেখ করছে।
 
সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে আব্দুর রশিদ ‘কোচিংবাজ’ হিসেবে কুখ্যাত। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর যে ২৮ জনকে শোকজ করেছিল তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, অবৈধ ভর্তি নিয়ে অন্তত ৪০ কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে অভিভাবকদের কাছ থেকে। এজন্য জিবি সভাপতি রাশেদ খান মেনন অবৈধ ভর্তি নাকচ করে দেওয়ার পরও সংশ্লিষ্টদের তৎপরতা কমেনি।
 
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালেই দেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদ মাধ্যম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম ‘আইডিয়ালে অবৈধ ভর্তির রমরমা বাণিজ্য’ ও বৃহস্পতিবার ‘বাংলানিউজের খবরে ‍অবৈধ ভর্তি বন্ধ আইডিয়ালে’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দু’টি প্রতিবেদন প্রকাশের পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। বন্ধ হয় অবৈধ ভর্তির কার্যক্রম।  

বৃহস্পতিবারের বৈঠক সূত্র জানায়, সকালে বাংলানিউজের ওই রিপোর্ট নিয়ে সচিবালয়ের সভায় আলোচনা হয়। পাশাপাশি বছর শুরুর তিন মাস পর সরকারের নীতিমালা ভেঙে এ ধরনের ভর্তির বিষয় উত্থাপনের কারণে পর্ষদের সদস্য সচিবকেও কড়া কথা শোনান সভাপতি।
 
গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে স্কুলটির ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়। এরপরও অধিকাংশ সদস্য অবৈধ ভর্তির জন্য স্কুলের সভাপতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছেন। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের কাছ থেকে শিক্ষার্থী প্রতি গড়ে দেড় থেকে আড়াই লাখ করে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
 
এর আগের বছরগুলোতে ভর্তির অনিয়মের দায়ে স্কুলটির অধ্যক্ষের এমপিও স্থগিত করা হয়।
 
ভর্তি-বাণিজ্যের তৎপরতা বন্ধের দাবিতে গত সপ্তাহে স্কুলের সামনে ব্যানার টানিয়েছেন সাধারণ অভিভাবকরা। এসব ব্যানারে বলা হয়েছে, ‘আইডিয়াল স্কুলের সুনাম ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ চাই’, ‘গভর্নিং বডির সদস্যদের ভর্তির কোটা বাতিলসহ ভর্তি-বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। ’
 
জানা গেছে, সভাপতি ও সদস্য সচিবসহ (অধ্যক্ষ) স্কুলের গভর্নিং বডির মোট সদস্য ১৪ জন।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো বলছে, এই স্কুলে অবৈধ ভর্তি ব্যবসা ব্যাপক হারে শুরু হয় ২০০৯ সালে। ওই সময় এসব অনিয়মের দায়ে আটজন শিক্ষক বহিষ্কৃত হলেও রহস্যজনকভাবে পরে তারা স্বপদে ফিরে আসেন। ওই সময় চার শতাধিক শিক্ষার্থীকে অবৈধভাবে ভর্তি করা হয়। এরপর ২০১০ সালে অবৈধ ভর্তির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় সাতশ’র বেশি। ২০১১ সালে তা হাজার ছাড়িয়ে যায়। ২০১২ সালে এই সংখ্যা ১২শ’র বেশি। প্রতি বছরই ক্লাস শুরুর দুই থেকে তিন মাস পর এসব ভর্তি নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।