ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

এবিএম মূসাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হোক

ড. এম. আনিছুর রহমান, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৪
এবিএম মূসাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়া হোক সাংবাদিক এবিএম মূসা

আজ সকালে বিভিন্ন দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে চোখ রাখতেই দেখি দেশের প্রথিতযশা সাংবাদিক এবিএম মূসাকে ওরফে মূসা ভাইকে সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটা থেকে রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থ।



গত ২৯ মার্চ তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে তাঁকে কয়েকবার হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণকেন্দ্রে নেওয়া হয়েছিল। তবে সোমবার রাতে অবস্থা আরও খারাপ হলে তাঁকে চিকিৎসকেরা লাইফসাপোর্টে রেখেছেন। এবিএম মূসার জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা দেশবাসীর দোয়া চেয়েছেন।

ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি- মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অনেক গুণীজনকে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এমন কী কাউকে কাউকে বিশেষ দূতের মর্যাদা দিয়েও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আজ আমার মতো আরও অনেকের দাবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ঘনিষ্ঠজন সাংবাদিক এ বিএম মূসাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।
 
এবিএম মূসা ১৯৩১ সালে ফেনী জেলার ধর্মপুর গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি দীর্ঘ ৬৪ বছর ধরে সাংবাদিকতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। ১৯৫০ সালে দৈনিক ইনসাফ দিয়ে তার সাংবাদিকতা শুরু। ওই বছর তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারে যোগ দেন। পাকিস্তান অবজারভারে রিপোর্টার, স্পোর্টস রিপোর্টার, বার্তা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের সময় তৎকালীন পাকিস্তান সরকার অবজারভার বন্ধ করে দিলে তিনিও সংবাদ এ যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি অবজারভারে ফিরে আসেন। ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় বিবিসি, সানডে টাইমস প্রভৃতি পত্রিকার সংবাদদাতা হিসেবে রণাঙ্গন থেকে সংবাদ পাঠাতেন।

এবিএম মূসা বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক এবং ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার মহাব্যবস্থাপক ও প্রধান সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক যুগান্তর-এর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এবিএম মূসা জাতীয় প্রেস ক্লাবে চারবার সভাপতি ও তিনবার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি পাকিস্তান ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এবিএম মূসা একুশে পদক ও দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কারে ভূষিত।

আমরা যতদূর জানি বর্তমানে দেশের বিশিষ্ট গুণিজনদের মধ্যে এবিএম মূসা একজন। তাঁর অনন্য কর্ম ও সত্যনিষ্ঠ লেখনী-ভাষ্য দলমত নির্বিশেষে সবার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। দেশের আপদকালে তাঁর সত্যনিষ্ঠ বক্তব্য ও ভূমিকা সকলের কাছে প্রশংসনীয়। তিনি মুজিব ভাই বলে একটি বইও রচনা করেন তিনি। দেশ ও জাতির গর্ব বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী এবিএম মূসার চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের এত অবহেলা কেন?বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সব বিষয়ের প্রতি নজর রাখেন। এবিএম মূসা অসুস্থতার বিষয়ে কী তিনি অবগত নন!

এবিএম মূসা তার বিভিন্ন সময়ের সত্যনিষ্ঠ বক্তব্যে কোনো পক্ষ অসন্তুষ্ট হয়ে থাকলেও দেশ-জাতির স্বার্থের কথা বিচেনায় নিয়ে সব কিছু ভুলে গিয়ে তাঁর উন্নত চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে বিদেশে পাঠানোর জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে বরেণ্য সাংবাদিক এবিএম মূসা ভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া কামনা করছি। আল্লাহ পাক যেন তাঁকে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসার তৌফিক দান করেন।  

ড. এম. আনিছুর রহমান: গবেষক ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক

বাংলাদেশ সময়: ১৫১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।