ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ জুন ২০২৪, ২০ জিলহজ ১৪৪৫

মুক্তমত

ছেলেটি আর নেই! একটি সৌন্দর্যবোধের মৃত্যু!

রাজীব মীর, শিক্ষক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪
ছেলেটি আর নেই! একটি সৌন্দর্যবোধের মৃত্যু!

আতিকুর রহমান খান । জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ।

শুক্রবার বিকেলে ছয় বন্ধু মিলে হাতিরঝিলে বেড়াতে যায়। সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার জন্য তুরাগ গাড়িতে উঠবার সময় বেপরোয়া ড্রাইভারের অসতর্কতায় (বাকী পাঁচ বন্ধু বাসে উঠলেও) সবশেষ আতিক ভারসাম্য হারিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে । আয়ল্যান্ডের ওপর আঘাতে তার মাথার খুলির কয়েক জায়গায় চূর্ণ হয়ে যায়। ব্রেন আর কাজ করছিলো না । এরপর গ্রীণলাইফ হাসপাতালে কৃত্রিম শ্বাস চলছিলো, লাইফ সাপোর্ট খুলবার সিদ্বান্তটুকুই ছিলো বাকী ।

বিভাগের চেয়ার ও অন্যান্য শিক্ষকদের চোখের পাতা ভিজে নরম হয়ে উঠেছে । বন্ধু ও সতীর্থরা অঝরে কাঁদছে। বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ সবার আহাজারি দেখে মনে হয়েছে অসাধারণ ভালোবাসার বলয় তৈরি করবার অসামান্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মেছিল ব্রাম্মণবাড়িয়ার নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সম্ভাবনাময়, প্রতীভাবান ও প্রাণচঞ্চল এই ছেলেটি ।

পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে আতিক সবার ছোট। বড়রা সবাই গ্রাজুয়েশন করে ফেলেছেন। সহোদর দুজন এলএলবি, একজন এমবিএ, একজন দুবাইয়ে প্রবাসী। বোনটিও গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করে সংসার করছেন । বাবা মা দুজনই বেঁচে আছেন, শুধুই শেষ হলো তাদের উচ্চাশার শেষস্বপ্ন মেধাবী তরুণটি । শুক্রবারই মাকে ফোনে বলেছিলো পরীক্ষা শেষ হলে বাড়িতে গিয়ে পনেরো দিন থেকে আসবে সে । বেপরোয়া গাড়ির ড্রাইভার তার সবুজ জীবনটাকে কেড়ে নিয়ে বাবা মায়ের বুক ক্ষত করে দিয়ে গেলো । মা কাঁদছেন,দুর্বল অসহায়। অসাধারণ ব্যক্তিত্ববান মৃদুভাষী বাবার বুকভরা চাপা কান্না আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় সহোদরদের ধীরস্থির আকুতিতে চারপাশ ভীষণ ভারী।

ডাক্তার জানালেন, লাইফ সাপোর্ট খুলবার সিদ্ধান্ত দিলেই ......!!! কিন্তু কে দিবে জীবননাশী অতি কঠিন এই বাস্তব সিদ্ধান্ত ? বাবা মা কেউ কিছু বলছিলেন না, কী বলবেন তারা !

তখন বেলা এগারোটা । বাবার মন মানছেনা, বললেন আর একটু দেখি, দুপুর দুইটা পর্যন্ত দেখি.... কলিজার টুকরো আর নেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হছ্ছে অশান্ত মা আর বিমর্ষ বাবার। কী অদ্ভুত , কী ভয়ন্কর এই সিদ্ধান্তগ্রহণের অপেক্ষার সময় !

এরই ফাঁকে যেনো সবাই বলছে- এ্যাই ছেলে, শোনো ! তুমি জগন্নাথের বারান্দায় আর চঞ্চল হাঁটবে না , কচি মুখে আর মৃদু হাসবে না কিন্তু রানা, সজল, রিয়াজ, রণি, নিজাম, শীষ, ইষা, শারমীনসহ বিভাগের সকল শিক্ষার্থীদের চোখে তুমি অনন্ত সজীব হয়ে ভাসবে, এটা দৃশ্যমাণ সত্য । শূন্যতার অনুভবে ক্রমাগত চোখে জল ঝরছে, এত জল নামবার পর তাদের চোখ নিশ্চয় অনেক পরিষ্কার থাকবে। তাদের কাঁচনয়নে অবশ্যই তোমার অস্তিত্ব প্রাণবান প্রস্ফুটিত হবে।
মায়ের আঁচলে চোখ ঘষছে জল মুছছে ভাইসকল, কত্ত মায়ায়
তুমিও তাই বেঁচে থাকবে বন্ধুদের চোখের আরশিতে-
আশা, ভালোবাসা আর আনন্দময়তায় !

বেলা চারটার দিকে জানা গেলো ছেলেটি আর নেই।

মনের কোনে অদ্ভুত কোন আনন্দ আর সৌন্দর্য্যবোধ খেলা না করলে বন্ধুদের নিয়ে হাতীরঝিলে কেউ বেড়াতে আসে না!!! বলা যায় বাসচালকের বেপরোয়া গতিতে একটি সৌন্দর্যবোধেরও মৃত্যু হলো!

বাংলাদেশ সময় ১৬২০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।