ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বাঙালির চরিত্র ।। হায়াৎ মামুদ

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৭ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৪
বাঙালির চরিত্র ।। হায়াৎ মামুদ

দেশভাগের আগে ১৯৪৬ সালে নোয়াখালিতে দাঙ্গার ফলে অনেকের মতো তিনিও পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার জন্ম পশ্চিমবঙ্গে এবং আমরা তখনও পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করি।

সে সময় আমরা তাকে আমাদের গ্রামের স্কুলে পাই। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্যে তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। কিন্তু কখনো তার মধ্যে কে হিন্দু কে মুসলমান এই বিভাজন দেখিনি। তিনি আমাকে ভীষণ ভালোবাসতেন। আমি যখনই দেশে গিয়েছি, তার পা ছুঁয়ে প্রণাম করেছি। তাঁদের কাছে ছাত্র ছিল সন্তানতুল্য— তা সে যেই জাতিই হোক। এটা মনে হয় এখন আর নেই।

এখান থেকে প্রচুর হিন্দু চলে গেছে। মুসলমানও চলে গেছে। চাকরি না পেলে কী করবে? দিল্লি তো এখানকার প্রচুর মুসলমানে ভর্তি। আবার সম্প্রতি ভারত থেকেও প্রচুর লোক এদেশে আসছে চাকরির সুবাদে। বিশেষ করে আইটি, বিজ্ঞাপনী সংস্থা এসবে। তার মানে তারাও সেখানে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছে না। আবার পশ্চিমবঙ্গে চাকুরির ক্ষেত্র সংকুচিত বলে এখানে লোক বাড়ছে। এখানেও দিন দিন চাকুরির ক্ষেত্র সম্প্রসারিত হচ্ছে। তবে ঢাকায় কিন্তু জাতিভেদ প্রথা একদমই নেই। কে হিন্দু কে মুসলমান তাতে কারো কিছু যায় আসে না। এটা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামাঞ্চলেও ছিল না। এমনও ঘটেছে কোন হিন্দু যুবক তার মুসলমান বন্ধুর বাড়িতে এসে গরুর মাংস খেয়ে যাচ্ছে। কারণ বাড়িতে তো গো মাংস নিষিদ্ধ। মুসলমানদের ক্ষেত্রে দেখা, তার হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উৎসবে যুক্ত হচ্ছে। এই পালাপার্বণ, ঈদ উৎসব এসবে কিন্তু সবাই অংশ নিত।

এখন এই যে হিজবুত তাহরির বা মুসলমান মৌলবাদিরা এরকম সৌহাদ্য সম্পর্ক, উৎসব বিনিময়ে বাধা দিচ্ছে, এটা খুবই খারাপ লক্ষণ। এদেরকে তো কেউ রোধ করতে পারছে না। রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য নানা সময় এসব উগ্র সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলো এসব দমনে যদি আন্তরিক হয়, তাহলে তাদের টাকার উৎসগুলো বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব।

আবার হিন্দুরা যে এদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে তাও তো রাজনৈতিক মতলববাজদের কারণেই চলে যাচ্ছে। এক দল হিন্দু ভোট ঠেকানোর জন্য, আরেকদল নিজের দলের প্রতি হিন্দুদের সহমর্মিতা বাড়ানোর জন্য হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিচ্ছে। পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে কারা এসব করছে, কী কারণে করছে— এসব বিষয় স্পষ্ট। আবার কিছু দুষ্কৃতকারী আছে যারা হিন্দুদের জায়গা-জমি দখল করার জন্য তাদের ঘরবাড়িতে আগুন দেয়। এসব দুষ্কৃতকারীরা প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল/জোটের ছত্রছায়ায়ই থাকে। সাদামাটা চোখে দেখলে একে বলা যায় দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার। এটা খুব খারাপ কথা। সবল তো দুর্বলকে রক্ষা করবে। আর রাষ্ট্রই বা এখানে কী করছে। প্রতিটি নাগরিকের জানমালের নিরাপত্তা দানের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কিন্তু রাষ্ট্রকেও এখানে তার দায়িত্ব পালন করতে দেখছি না।

বঙ্গ ভাগ হলো, একটা রাষ্ট্র ভেঙে দু-ভাগ হলো এর তো অনেক কারণ আছে। ভারত ভেঙে হিন্দু-মুসলমানের আলাদা দেশ হলো। তারপর আবার পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ হলো। আমার ধারণা বাংলাদেশও এক সময় আর এরকম থাকবে না। ভারতের পূর্ব অংশ বিশেষ করে আসাম মিজোরাম মিলে বাংলাদেশ নতুন আকার পাবে। যেমন কয়েকদিন আগে রাশিয়ার সঙ্গে ক্রেমলিন আবার যুক্ত হলো। এখানেও বিষয়টা তাই হতে পারে।

 

লেখক : শিক্ষাবিদ, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।