ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বঙ্গবন্ধুতে আস্থাহীন আওয়ামী লীগ!

আহমেদ শরীফ শুভ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪
বঙ্গবন্ধুতে আস্থাহীন আওয়ামী লীগ!

আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল। শুধু ক্ষমতায় থাকার সময়েই নয়, ক্ষমতায় না থাকলেও এই দল বাংলাদেশের অন্য সব দলের সম্মিলিত রাজনৈতিক শক্তিকে এককভাবে মোকাবেলা করার সামর্থ্য রাখে।

তাদের শেকড় এতোটাই তৃণমূলে প্রোথিত যে, বাংলাদেশের এমন কোনো গ্রাম পাওয়া যাবে না যেখানে অন্তত একজন হলেও আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী নেই।

আওয়ামী লীগের এই শক্তি আর জনসমর্থনের পেছনে সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বঙ্গবন্ধুর আইকনিক ইমেজ।

বঙ্গবন্ধু এদেশের মানুষের হৃদয়ের অনুভূতিকে প্রথমে একটি সম্মিলিত আকাঙ্খায় রূপ দিতে এবং পরবর্তীতে সেই আকাঙ্খাকে একটি সাফল্যে রূপান্তরিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এদেশের মানুষের অন্তরের উপলব্ধিকে তার মতো করে আর কেউই উপলব্ধি করতে সক্ষম হননি। আর সেখানেই নিহিত ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাফল্য। সেই সাফল্যের সূত্র ধরে আওয়ামী লীগ তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় চার দশক পর আজো বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক সংগঠন।

আওয়ামী লীগ যদি নির্বাচনে পরাজিতও হয় তবুও তা এই সংগঠনের শক্তিহীনতা প্রমাণ করে না। কারণ নির্বাচনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দলবিযুক্ত ভোটারদের ভোটে।

তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় গত ৪০ বছরে দলটি নানা চড়াই উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ যে দেশের ক্ষমতার রাজনীতে বঙ্গবন্ধু উত্তর সাফল্য ধরে রেখেছে তার প্রধান কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব যা দলটিতে একটি ইনিফায়িং ফ্যাকটর হিসেবে কাজ করছে এবং তার নেতৃত্বের প্রতি তৃণমূলের অন্ধ আনুগত্য। তবে সব কিছু ছাপিয়ে জাতিকে মুক্তির বন্দরে নিয়ে যাওয়ার সাফল্য, দেশপ্রেম, ঔদার্য এবং সাংগঠনিক সাফল্যের সোপান বেয়ে গড়ে উঠা বঙ্গবন্ধুর আইকনিক ইমেজ আজো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক মূলধন।

স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও আওয়ামী লীগ তাদের সাংগঠনিক এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ বাজিয়ে চলে। তার কারণ একটাই। তিনিই আজো তাদের সবচেয়ে বড় মূলধন।

কিন্তু হালে দলটির কার্যক্রম দেখে মনে হয় আওয়ামী লীগ আর তাদের এই মূলধনটির প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না। যে কারণে তারা এখন বঙ্গবন্ধুর দেশ হিতৈষী ইমেজের বদলে নারায়ণগঞ্জ, লক্ষ্মীপুর আর ফেনীর পেশিশক্তি ভিত্তিক পেটিইমেজের ওপর নির্ভর করতে চাচ্ছে।

দেশের অন্য সব মানুষের মতো প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই জানেন মানুষ যখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেন তখন আসলে তারা কোনো ব্যক্তিকে নয়, ভোট দেন নৌকা মার্কায়, ভোট দেন বঙ্গবন্ধুকে, তার ইমেজকে, স্বাধীনতার চেতনাকে।

দলটির প্রতি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের ভালোবাসা এতোটাই প্রগাঢ় যে এ ইমেজটি ধরে রাখতে গিয়ে তারা অনেক সময়ই নিতান্ত অনিচ্ছায় পেশিজীবী সন্ত্রাসীকেও ভোট দিয়ে ফেলেন। যদি তাই হয় তবে কি নারায়ণগঞ্জ, ফেনী আর লক্ষ্মীপুরের পেশিজীবীরা দলে বঙ্গবন্ধুর ইমেজের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ?

নূর হোসেনকে বলা হচ্ছে দলে বিএনপি’র ঢুকিয়ে দেওয়া গুপ্তচর (আওয়ামী লীগে এমন কত গুপ্তচর আছে তা কে জানে!)। যদি তাই হয় তবে তাকে ধরা হলো না কেন? সব অপকর্মই যদি বিএনপি’র গুপ্তচরেরা করে তবে দলে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে না কেন? ফেনীর হত্যাকাণ্ডে আওয়ামী লীগের কর্মীরা গ্রেফতার হবার পরও দলের দায়িত্বশীল একটি মহল থেকে বলা হচ্ছে এটি বিএনপি’র কাজ। এই সবের ফলাফল হচ্ছে ইস্যু বিহীন বিএনপি’র হাতে ইস্যু তুলে দেওয়া আর বিএনপি’র প্রতি দলবিযুক্ত সাধারণ মানুষের সহানুভূতি তৈরি হওয়া।

আওয়ামী লীগ যদি সুশাসন নিশ্চিত করে এবং তাদের প্রতি গণমানুষের আস্থার প্রতি সম্মান দেখাতে পারে তবে সারা দেশের মানুষ তাদের সম্মিলিত শক্তি দিয়ে আওয়ামী লীগকে প্রোটেকশন দেবে। আর যদি তারা নারায়ণগঞ্জ, ফেনী কিংবা লক্ষ্মীপুরের মতো পকেট বিশেষের পেশি শক্তির ওপর নির্ভর করে, তবে কেউ তাদের প্রোটেকশন দিতে পারবে না। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে তার হাজারো প্রমাণ রয়েছে।

যে দলের জনপ্রিয়তার মূল শক্তি বঙ্গবন্ধুর ইমেজ, যে দলটির শেকড় তৃণমূলে প্রোথিত সেই দলের পক্ষে এরকম দু’ একজনকে ফ্লাশ আউট করে দিতে না পারার কোনো যৌক্তক কারণই থাকতে পারে না। কারো কারো ধারণা এই সব পেশিজীবীদের দলে না রাখলে ফেনী এবং নারায়ণগঞ্জের দূর্গ ধরে রাখা সম্ভব নয়। বিপদের সময় কিন্তু এই সব সিপাহশালারা দূর্গ ফেলে পালিয়ে গিয়েছিলেন, মূল্য দিতে হয়েছে সাধারণ কর্মীদের। আর লক্ষ্মীপুর শেষ কবে আওয়ামী লীগের দূর্গ ছিল সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ বটে।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগের নিজেদের শক্তির প্রতি আস্থা এতোটাই কমে গেছে যে ভাবছে বঙ্গবন্ধুর ইমেজ এবং স্বাধীনতা চেতনা সমুন্নত রেখে সুশাসন নিশ্চিত করার চেয়ে এই সব পেশিজীবীরাই তাদের রক্ষাকবজ হবে। অতীতের কোনো নির্বাচনেই তা প্রমাণিত হয়নি। বরং এই সব সন্ত্রাসীদের জন্যই আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হয়েছে অতীতে।

এই পেশি নির্ভরতা আওয়ামী লীগের সিংহভাগ নেতা-কর্মীর মধ্যেও সৃষ্টি করেছে এক ধরনের অসন্তোষ ও অস্বস্তি। তার পরও কেন আওয়ামী লীগের এই গণধিকৃত পেশীজীবী নির্ভরতা? তবে কি আওয়ামী লীগ ভাবছে এই সব আঞ্চলিক পেশীজীবীরা বঙ্গবন্ধুর ইমেজের চেয়েও শক্তিশালী? তবে কি তারা ভাবছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং তার কন্যার নেতৃত্বের চেয়েও এই সব পেশিজীবীরা বেশি শক্তিমান? তবে কি তারা আর ‘বঙ্গবন্ধু’তে আস্থা রাখতে পারছে না?

বাংলাদেশ সময়: ১০০৯ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।