২০১৪ সাল,এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য এক হতাশার বছর। এ বছর বাংলাদেশ দুইটি টেস্ট,দশটি ওডিআই এবং নয়টি টি-টুয়েন্টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছে।
এরপর তাদের সাথে তিনটি ওয়ানডে এবং দুইটি টি-টুয়েন্টি ম্যাচে অংশগ্রহণ করেও পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কমপক্ষে একটি ওয়ানডে ম্যাচে এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখতে শুরু করেছিল জয়ের স্বপ্ন কিন্তু সে স্বপ্ন নিমেষেই ফিকে হয়ে যায়। এরপরেই শুরু হয় এশিয়া কাপ।
শ্রীলংকার বিপক্ষে হারার পর আমাদের অধিনায়ক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, এ রকম পারফর্মেন্স যদি বজায় থাকে তাহলে আমাদের আফগানিস্তানের বিরুদ্ধেও হারতে হবে। ঠিক আমাদের অধিনায়কের কথাই সত্য হল, এবার নবাগত আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে সারা ক্রিকেটবিশ্বে আমাদের ক্রিকেট আরেকবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠল; এদেশের ক্রিকেটকে যারা দলমত নির্বিশেষে ভালবাসে তাদেরও মানতে কষ্ট হল এই পরাজয়। অবশ্য পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ তাদের ওয়ানড়ে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে জয়ের প্রায় দুয়ারে পৌঁছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের যন্ত্রণা কিছুটা লাগব করার চেষ্টা করেছিল; কিন্তু নাহ! শেষ পর্যন্ত হার আবারও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে যন্ত্রণা বাসা বাধতে থাকে।
ঠিক এ রকম বিপর্যস্ত অবস্থায় নিজের দেশে বিশ্বকাপের মত একটি মর্যাদার আসর আয়োজন করার দায়িত্ব পায় বাংলাদেশ। গৌরবের এই মুহূর্তেও বাংলাদেশ ক্রিকেট হয়ে পড়ে বিধ্বস্ত এক শিবির। আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশকে খেলতে হয় বাছাইপর্ব। এবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রতিশোধ নিলেও হেরে যায় দুর্বল হংকং-এর বিপক্ষে। আবারও একবুক কষ্ট পেতে হয় এদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনো রকম বাংলাদেশ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলেও চূড়ান্ত পর্বেও বাংলাদেশ দল দর্শকদের আরেকবার হতাশ করে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সবক’টি ম্যাচ হেরে যায় বাংলাদেশ।
অবশেষে ক্রিকেটের শক্তিধর দেশ ভারত রাজি হয় বাংলাদেশে আসতে কিন্তু যখন তারা তাদের স্কোয়াড ঘোষণা করে তখন তা দেখে অনেকেই হতবাক হয়ে যায়। অপেক্ষাকৃত নতুন সদস্যদের নিয়ে গড়া একটি দল আসে বাংলাদেশে, অনেকেই একে ভারতের বি দল হিসাবে আখ্যায়িত করতে থাকে।
সর্বশেষ ভারতের বিপক্ষে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত ম্যাচটি বাদ দিয়ে বাকি দুইটি ম্যাচের ২য়টিতে পরাজয় এদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের মনকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। মাত্র ১০৫ রানের টার্গেটে বাংলাদেশ করে তাদের ওয়ানড়ে ইতিহাসের সর্বনিম্ন ৫৮ রান। এ পরাজয় এদেশের ক্রিকেট ভক্তরা কখনো মেনে নিতে পারবে না।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৪ সালে বাংলাদেশ দুইটি টেস্টের একটি ড্র একটিতে পরাজয়,১০টি ওয়ানডের সবক’টিতে পরাজয় এবং ৯ টি-টুয়েন্টির দুইটিতে জয় বাকি সাতটিতে পরাজয় বরণ করে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় বাংলাদেশ তাদের সবকটি ম্যাচেই হোম গ্রাউন্ডে খেলার সুযোগ পেয়েছিল। গত ক’বছর আগেও প্রায় নিয়মিতভাবে বাংলাদেশ হোম গ্রাউন্ডে প্রতিটি সিরিজে কমপক্ষে একটি ম্যাচ হলেও জয়লাভ করত; কিন্তু এবছর ক্রিকেটের নবাগত দলগুলোর সাথেই আমরা হারতে শুরু করেছি। এটা কি আমাদের ক্রিকেটারদেরই ভুল, নাকি ভাগ্য আমাদের থেকে দূরে সরে গিয়েছে? কোনোটিকে সান্ত্বনা হিসাবে ধরে নেবে এদেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমিক?
#মামুনুর রশিদ
শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক
গণিত বিভাগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
e-mail: [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৪