ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

সাকিব, বিসিবি ও বিচারপতির বিচার

আমিনুল ইসলাম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৪
সাকিব, বিসিবি ও বিচারপতির বিচার সাকিব আল হাসান

সোমবার বিসিবি সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। কিছু দিন ধরেই সাকিবকে নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে।

সাকিবের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। এবার ওয়েস্টইন্ডিজের একটি ঘরোয়া ক্রিকেট লীগ খেলতে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের শুরু।

যেখানে বলা হচ্ছে, সাকিব কোন রকম লিখিত অনুমতি ছাড়াই খেলতে চলে গিয়েছিলেন। তাই মাঝ পথেই সাকিবকে ফিরতে হয়েছে। এর মাঝে সাকিব টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দেয়ারও হুমকি দিয়েছেন বলে জানা যায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ ও বিসিবি মারফত।

তবে সাকিব দেশে ফিরে বলেছেন, রাগের মাথায় তিনি এটি বলেছেন এবং এর প্রেক্ষিতেই ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। আর সোমবার আমরা জানতে পারলাম, সাকিবকে বিসিবি সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছে। সঙ্গে আইপিএল কিংবা বিদেশের কোন ক্রিকেটলীগে তিনি খেলতে পারবেন না দেড় বছরের জন্য। আর এতো সব কিছু দুই দিনেই ঘটে গেলো।

অনেকেই হয়তো বলছেন, এই শাস্তি ওর প্রাপ্য ছিলো। ভুল বার বার করলে সেটি আর ভুল থাকে না, অপরাধ হয়ে যায়। তাছাড়া এভাবে বার বার পার পেয়ে গেলে অন্য খেলোয়াড়রাও এরকম করতে পারেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে হয়তো এ ধরনের বিষয় আর ঘটবে না। যুক্তিগুলো অবশ্যই ফেলে দেয়ার মতো না।
তবে কোন যুক্তিতর্কে না গিয়ে বহু দিন ধরে প্রচলিত একটা কথা বলতে হয়। ধরুন কোন সন্তান যদি বিপথগামী হয় তাহলে কিন্তু পিতামাতার উপরও দায় বর্তায়। সন্তানকে ঠিকভাবে গড়ে না তোলার জন্য।

এই যে আজ সাকিব কাঠগড়ায়, এর পেছনের কারণ কি বিসিবি হতে পারে না? সাকিব তো মৌখিক অনুমতি পেয়েছিলেন। এই মৌখিক অনুমতি তাকে কে দিয়েছিলো? আর যদি দিয়েই থাকে তাহলে কি বিসিবিতে এ ধরনের সংস্কৃতি চালু রয়েছে? যদি চালু থাকে তাহলে এর দায় কার? বিসিবি এখন বলছে, মৌখিক অনুমতি না নিয়ে যাওয়া যাবে না? কেউ কি বলতে পারবেন এ ধরনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে অতীতে কোন খেলোয়াড় বিদেশে যায়নি!

তাছাড়া আরও কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। এতো দ্রুত কেন সাকিবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলো? আলোচনা কি আরও কিছু দিন চালানো যেতো না? শুনানি কি আরেকটু স্বচ্ছ হতে পারতো না? নইলে অনেকের মনেই তো প্রশ্ন উঠতে পারে, সাকিবের সাজা কি আগে থেকেই প্রস্তুত ছিলো!

ক্রিকেটের স্বার্থে যদি কোন খেলোয়াড়কে শাস্তি দিতে হয় সেটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে যারা শাস্তি দিচ্ছেন তারা কি প্রশ্নের উর্দ্ধে? নাকি তারা আরও বেশি বিতর্কিত! ভুলে গেলে চলবে না, এই এক সাকিব আমাদের গর্বের জায়গা। সাকিব যখন আইপিএলে খেলেন তখন ভিনদেশি মানুষগুলো কিন্তু প্রতিবার সাকিব উচ্চারণের সাথে সাথে বাংলাদেশের নামও উচ্চারণ করে। সাকিবের সাথে বাংলাদেশের নাম জড়িয়ে আছে। তাই সাকিব যাতে কোন রকম ভুল শাস্তি না পান সেটি জানার অধিকার আমাদের মতো সাধারণ মানুষের আছে।

কারণ, এই আমাদের ট্যাক্সের টাকায় সাকিব যেমন খেলেন, ঠিক তেমনি বিসিবিও চলে। তো, যারা আজ সাকিবের বিচার করেছেন তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। বিসিবিতে কোন অনিয়ম হয় না, কিংবা স্বজনপ্রীতি হয় না কিংবা বিচার করার সময় ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব সামনে চলে আসে না, সেগুলো আমাদের জানাতে হবে।

নইলে এই বিচারপতিদের বিচার করবো আমরা এই জনতা। দরকার হয় দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে আমরা রাজপথে নামবো।

আমিনুল ইসলাম: গবেষক ও  ও অনলাইন অ্যাক্টিভিষ্ট, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৯ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।