ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

শেখ হাসিনাকে কেন উৎখাত করতে হবে?

ড. বিজন সরকার, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪
শেখ হাসিনাকে কেন উৎখাত করতে হবে? ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

আমার এক আমেরিকান বন্ধু মার্কিন নৌ-বাহিনীর উপরের স্তরের কমান্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তার  বর্তমান বয়স বায়ান্ন।

আমার চেয়ে তিনি বয়সে অনেক বড়। তিনি ইরাক ও আফগানিস্তানে মেরিন সেনাদের কমান্ডার হিসাবে যুদ্ধ করেছেন।

আফগানিস্তানে যুদ্ধ করতে গিয়ে তার পায়ে গুলি লাগে এবং তিনি নিউরোলজিক্যাল সমস্যায়  ভুগতে থাকেন। ফলে চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন এবং সরকারি খরচে কোরিয়াতে পড়াশুনা করতে আসেন। সেখান থেকেই আমার সাথে পরিচয় এবং আস্তে আস্তে আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠি। কোরিয়াতে তিনি কোরিয়ান বিমান বাহিনীতে প্রায় নিয়মিত প্রশিক্ষক হিসাবে কাজও করেছিলেন। বর্তমানে তিনি থাইল্যান্ডের একটি সামরিক ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত।  

একজন রাজনৈতিক সচেতন মানুষ হিসাবে আমাদের প্রতিদিনের আলোচনায় ভূ-রাজনৈতিক বিষয়গুলি নিয়ে আসতাম। বিশেষ করে আমেরিকার পররাষ্ট্র ও সমর নীতি এবং বাদ বাকি বিশ্বে এর প্রভাব নিয়েই আলোচনাটা বেশি হত। তিনি নিজেও আলোচনা করতে মজা পেতেন।

তাছাড়া ইরাক আর আফগানিস্তানের যুদ্ধের ভয়ানক সব কাহিনী বলতেন। প্রতিটি আড্ডা শেষে তার একটি কনক্লিউসিভ মন্তব্য থাকত ‘আমেরিকার সাথে প্রতিটি রাষ্ট্রের বন্ধুত্ব হয় কৌশলের ভিত্তিতে। অন্য কোন মানবিক ও পারস্পরিক বন্ধুত্বের মূল্যবোধের অনুষঙ্গ এই সম্পর্কে থাকে না। যেখানে আমেরিকার জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে কোন কিছু অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেই জায়গায় আমেরিকাও নেই’।  

ওসামা বিন লাদেন তখনও জীবিত। জানতে চাইলাম লাদেনকে যদি পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরবে পাওয়া যায়, আমেরিকার কি অবস্থান হবে? তার বক্তব্য ছিল, যদি লাদেনকে পাকিস্তান কিংবা সৌদি আরবের সবচেয়ে সংবেদনশীল এলাকাতেও পাওয়া যায়, সেখানেই তাকে হত্যা করা হবে। লাদেনকে জীবিত ধরার চেয়ে স্পটে হত্যা করাটা কিভাবে আমেরিকার কৌশলের স্বপক্ষে যাবে, সেটিরও একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দেন তিনি।    

একদিন জানতে চাইলাম, ধর্মীয় জঙ্গিবাদের উত্থানের ফলে পাকিস্তানের পারমানবিক অস্ত্রগুলি ছিনতাই হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? যদি থেকেই থাকে, তা একই মাত্রায় এশিয়া ও আমেরিকার জন্য বড় হুমকি। এই অবস্থায় আমেরিকার ভূমিকা কি হতে পারে?

তিনি জবাব দিলেন, যখনই মার্কিনী প্রশাসনের কাছে গোয়েন্দা তথ্য থাকবে যে জঙ্গিরা সেইগুলি ছিনিয়ে নেবে, তখনই পারমানবিক কম্পার্টমেণ্টগুলো পাকিস্তান থেকে আমেরিকা ছিনিয়ে নেবে। সে যে কোন মূল্যেই হোক। তিনি আবার আমাকে মনে করিয়ে দিলেন, আমেরিকার বন্ধুত্ব হয় কৌশলের ভিত্তিতে, অন্ধত্বের ভিত্তিতে নয়।    

বাংলাদেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা বন্ধুটির না থাকলেও ঢাকা এবং কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা সম্পর্কে তার জ্ঞান সমীহ করার মত। তার এই জ্ঞান আহরণের কারণ এবং উৎস জানতে চাইলাম। সেন্টমার্টিনস দ্বীপে একটি সামরিক ঘাঁটি করা যে আমেরিকার সামরিক কৌশলের একটি অংশ, তা তিনি রাখঢাক না করেই বললেন।

Obama_01চীনের চারপাশের জলরাশিতে ঘিরে আছে আমেরিকার নৌ-বহর। প্রেসিডেন্ট  ওবামা ২০১৬ পর থেকেই প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকাতে আরও নৌ-বহর পাঠানোর পরিকল্পনা অনেক আগেই ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলটিতে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে পারলে চীনকে গিয়ে আমেরিকার পরিকল্পনাটি পূর্ণতা পাবে।

উপরের বিষয়গুলো আলোচনার উদ্দেশ্য, বিভিন্ন দেশের সাথে আমেরিকার বন্ধুত্বের ধরন কেমন হয় এবং তাদের জাতীয় স্বার্থের অনুকূলে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে তারা সর্বদাই প্রস্তুত, সেই বাস্তবতাটা উপলব্ধি করা।    বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমায় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আমেরিকার কোন ধরনের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ রয়েছে, এবার সেই দিকে নজর দেই।
 
আরব বিশ্বের তেল সমৃদ্ধ দেশগুলোর মত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি আমেরিকার ততটা আগ্রহ দেখা যায় না। বাংলাদেশকে গিয়ে আমেরিকার মৌলিক উদ্দেশ্য হল দেশটিকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা।

এ অঞ্চলের নতুন দুই পরাশক্তি চীন আর ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে রুখতে বাংলাদেশকে ভ‍ূ-রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার ছাড়া, ভাল বিকল্প আমেরিকার হাতে নেই। আমেরিকা নানান দিক থেকে, বিশেষ করে চীনের উত্থানকে রুখতে ব্যর্থ হয়ে, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে। এই অভিযোগটি চীনের বহু দিনের।  

গত বছর নভেম্বরে চীন পূর্ব চীন সাগরকে এয়ার ডিফেন্স আইডেন্টিফিকেশান জোন (ADIZ) ঘোষণা করে।   ফলে এই অঞ্চলে আমেরিকার কর্তৃত্ব প্রশ্নের মুখে পড়ে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যকার সম্পর্কটিও কৌশলগত।   ভারতের কূটনৈতিক দেবযানীকে গ্রেফতার এবং বাংলাদেশের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে উভয় দেশের প্রতিক্রিয়ায় তা ভালভাবেই প্রতিফলিত হয়েছে।

ভারত এবং চীনের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বিষয়ে কিছু সমস্যা থাকা স্বত্ত্বেও আগামী দুই-এক বছরের মধ্যে দুইটি দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ বিশ্বের প্রথম হতে চলছে। যা পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগ  বাড়িয়ে তুলছে।

চীন এবং ভারতের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে হলে আমেরিকার একমাত্র পথ হচ্ছে দেশ দুইটির জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলা।

Newaz_sharifভারতের পশ্চিম ফ্রন্টের ন্যায় পূর্ব ফ্রন্টের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়িয়ে দিলে ভারত নিজের সীমান্ত ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়বে। নিরাপত্তার হুমকির জুজুকে দাঁড় করিয়ে মার্কিনীরা পাবে বাড়তি কূটনৈতিক সুবিধা। ভারতকে চীনের বিপক্ষে ব্যবহার করে এই অঞ্চলে মার্কিনীদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জিত হবে।

অনেক নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন,  বাংলাদেশে ২০০১-২০০৬ সালে ধর্মীয় জঙ্গিদের উত্থানের ফলে ভারত আমেরিকার সাথে বিভিন্ন কৌশলগত চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছিল। আর মধ্যে বেসামরিক পারমানবিক চুক্তিও ছিল।

এই সময়ের জঙ্গি উত্থানের ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট আমেরিকার চাপ থেকে বাঁচার জন্য বিএনপির দীর্ঘ দিনের বন্ধু চীনের স্বার্থের বিপক্ষে গিয়ে তাইওয়ানকে বাংলাদেশে কূটনৈতিক মিশন খুলতে দেয়। পরে চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে তা বন্ধ করে দিতে বিএনপি-জামায়াত সরকার বাধ্য হয়।  

চীন পাকিস্তানের পরীক্ষিত বন্ধু হলেও অতি সম্প্রতি চীনের ভিতর ধর্মীয় জঙ্গি কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বার বার পাকিস্তানকে চীনের সরকার বিভিন্ন পর্যায় থেকে সতর্ক করে আসছে। চীনের অভিযোগ, দেশের ভেতরকার ধর্মীয় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের পেছনে রয়েছে আমেরিকার মদদ এবং অর্থায়ন। আর সেই জঙ্গিদের আদর্শিক এবং সাংগঠনিক উৎস স্থল পাকিস্তান ও আফগানিস্তান।

ভারতে নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় যাওয়ার পর চীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফকে কাশ্মীর ইস্যুতে জঙ্গি গোষ্ঠীকে ব্যবহারের অপকৌশল বাদ দিয়ে আলোচনার চালিয়ে যাওয়ার তাগিদ দেয়। কাশ্মির ইস্যু ও জঙ্গি নির্মূলে নওয়াজ শরীফের আন্তরিকতা থাকলেও পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর তীব্র আপত্তি রয়েছে।

নওয়াজকে ক্ষমতায় থাকলে হলে কাশ্মির ও জঙ্গিদের নির্মূল করার ইস্যুতে সেনাবাহিনীর মতামতের বাইরে না যাওয়ার শর্ত রয়েছে। দৃশ্যত নওয়াজ সরকার শর্ত দুটি মেনে নিয়েছে। এর বাইরে গেলে সেনাবাহিনীর নির্দেশনায়  উনিশ কোটি জনগণের দেশে জামায়াতের আশীর্বাদ-পুষ্ট ইমরানের বিশ হাজার কর্মীর কাছে দেশ অচল হওয়ার নাটক মঞ্চায়ন চলতেই থাকবে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এই অবস্থানটি আমেরিকার ইচ্ছার প্রতিফলন বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
 
নিরাপত্তা হুমকির জুজুর সামনে রেখে কিভাবে একটি জনগোষ্ঠীকে তথাকথিত বন্ধু হিসাবে পাওয়া যায়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ ইরান। ইরাকে সুন্নি আইএস জঙ্গিদের উত্থানের ফলে শিয়া প্রধান ইরান নিরাপত্তার প্রবল ঝুঁকিতে পড়ে যায়।

ayatullah_ali_khamaniইরাকে যে ইরান আমেরিকার হস্তক্ষেপের বিরোধিতা বহুকাল ধরে করে আসছে, সেই ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে আইএসকে পরাজিত করতে সহায়তা করার বিষয়টি অনুমোদন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে ইরান এবং আমেরিকার সম্পর্ক বন্ধুত্বের দিকে এগোল। যাই হোক, ভবিষ্যতে আমেরিকা সুন্নি প্রধান সৌদি এবং শিয়া প্রধান ইরানের সাথে সম্পর্ক কিভাবে চালিয়ে যায়, তাই দেখার বিষয়।

বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকার মাথা ব্যথা অনেক আগে শুরু হলেও ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পরে সেটি বেড়ে যায়। বিশেষ করে শেখ হাসিনার বর্তমান নেতৃত্বটি আমেরিকার স্বার্থের ১৮০ ডিগ্রি বিপরীতে। শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ সালের শাসন আমলে আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের গ্যাস রপ্তানির  প্রস্তাবটি নাকচ করে দেওয়া ছাড়া তেমন কোন শক্ত অবস্থান লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা অনেকগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা সরাসরি এই অঞ্চলে আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের পরিপন্থি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিব যেখানে পশ্চিমা দুনিয়া নিয়ে তেমন কিছু বলতেন না, সেখানে শেখ হাসিনা সরাসরি এই পুঁজিবাদীদের স্বার্থের প্রতিকূলে অবস্থান নিয়েছেন।

আমেরিকার পরামর্শ উপেক্ষা করে রাশিয়ার সাথে অস্ত্র চুক্তি ও রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে রাশিয়ার সহযোগিতা, বাংলাদেশ থেকে ভারত বিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা, মার্কিনিদের প্রাণ ভোমরা ধর্মীয় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, চীনকে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের সুযোগ দেওয়া, ড. ইউনূসের মত মার্কিন স্বার্থ সম্প্রসারণকারী ব্যক্তিত্বকে কোণঠাসা করার মত বহু জানা অজানা স্পর্শকাতর বিষয়ে শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যা শেখ হাসিনাকে মার্কিনি স্বার্থের পরিপন্থি নেতা হিসাবে আবির্ভূত করেছে। তৃতীয় বিশ্বের একটি দেশের সরকার হয়ে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে যে নাজেহাল অবস্থায় নিয়েছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার, স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি সাহসিক সূচনা হিসেবেই আজীবন গণ্য হবে।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকার এই অঞ্চলে মার্কিনী স্বার্থের সম্প্রসারণ নীতির অনুকূলে নয়, বরং সরকারের অনেক ভ‍ূ-রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আমেরিকার স্বার্থের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রতি দেশের মানুষের প্রতিক্রিয়া, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকাই বা কি হয়, তা পশ্চিমা দুনিয়া গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। শেখ হাসিনার চীন আর জাপানের দুটি সফল সফরের পর মার্কিনি কৌশল প্রণয়নকারীদের মাথা গরম হয়ে যাবার কারণ আছে বৈকি। বর্তমান সরকারের প্রতি ভারতের মোদী সরকারের দৃষ্টি কি, তাও বুঝতে আর বাকি নেই।

শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাত কনসোর্টিয়ামে আমেরিকা অদৃশ্যভাবে প্রধান হিসাবে থাকলেও দেশি বিদেশি ধর্মীয় জঙ্গি-গোষ্ঠী ও জঙ্গি-বান্ধব রাজনৈতিক দল, সুবিধাবাদী বিএনপি, পাকিস্তানি আইএসআই সহসমমনা ও আদর্শিক শক্তিগুলো এক সাথে কাজ করবে এতে সন্দেহ নেই। তবে এই কনসোর্টিয়াম লিস্টে পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জির নাম আসছে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Mamataমমতা মার্কিন-পন্থি রাজনীতিবিদ এবং মার্কিনীদের বিশ্বস্ত বন্ধু। প্রটোকলের সকল নিয়ম নীতি ভেঙ্গে একজন মুখ্যমন্ত্রী মমতার সাথে তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারির সাক্ষাত করার বিষয়টি থেকেই বুঝা যায়। মমতা এবং হিলারি একান্তেও বেশ সময় কথা বলেন, যা একজন মুখ্যমন্ত্রীর সাথে হওয়ার কথা নয়। সাক্ষাৎকার নিয়ে তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে মিডিয়া ব্যাপক সমালোচনায় সরব হয়েছিল।

এই মমতা যত দিন ক্ষমতায়, ততদিন তিস্তা চুক্তি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তিস্তা চুক্তিতে মমতার আপক্তির পেছনে আমেরিকার পরামর্শ থাকাটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ এই নেক্সাসের উদ্দেশ্য শেখ হাসিনা সরকারকে জনগণের সামনে ব্যর্থ করে তোলা।
 
এই অঞ্চলে মার্কিনি সাম্রাজ্যবাদী প্রভাবের বিপরীতে বাংলাদেশের অবস্থানটি পরিবর্তন সম্ভব, একমাত্র দেশের বর্তমান সরকারের উৎখাতের মাধ্যমে। আজ পর্যন্ত শেখ হাসিনা এমন কোন সিদ্ধান্ত নেননি যা এই অঞ্চলে মার্কিনি ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের অনুকূলে।

শেখ হাসিনা সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা নেই বলে আমেরিকা দাবি করলেও রাষ্ট্রদূত মজিনার অতি সম্প্রীতি একটি মন্তব্য, সেই দাবির একেবারেই বিপরীত।   মজিনা বলেছিল, বাংলাদেশে গনতন্ত্রের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে যে কোন ধরনের পদক্ষেপে আমেরিকাসহ সকল বন্ধু রাষ্ট্রের সমর্থন থাকবে।
 
ড. বিজন সরকার: গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, চন্নাম ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়া, ইমেইলঃ [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।