মাননীয় অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি কী কারণে জানি না, জনতা ব্যাংকে ‘অবক্ষয়’ হয়েছে বলে সাংবাদিকদের মাধ্যমে আমাদের অবহিত করেছেন। এবং এই অবক্ষয়ের জন্য তিনি দায়ী করেছেন জনতা ব্যাংকের মাননীয চেয়ারম্যান দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাতকে।
ড. আবুল বারকাত সাহেব জনতা ব্যাংকের এমন কী ক্ষতি করলেন, তা জানার আগ্রহ তৈরি হলো। আমি ড. আবুল বারকাতকে একজন সৎ, সাহসী ও বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী হওয়ার মতো যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে জানি।
আমার বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। সম্ভবত পরদিনই ড. আবুল বারকাত প্রেসক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে কিছু ফাইলপত্রসহ উপস্থিত হন এবং জনতা ব্যাংকের বিরুদ্ধে অর্থমন্ত্রীর ‘অবক্ষয়’-এর অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দিয়ে তাঁর হাতে রাখা ফাইলগুলি দেখিয়ে বলেন যে, তিনি তথ্যপ্রমাণ ছাড়া জীবনে কখনও কোথাও কোনো কথা বলেননি।
আমি তাঁর এই কথা শুনে মুগ্ধ হই। বাংলাদেশে খুব বেশি মানুষ এরকম দৃঢ়চিত্তে কথা বলতে পারে না। জঙ্গীবাদের অর্থনীতি বা অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে তাঁর যে গবেষণাকাজ— এই কাজ করার জন্য আমি মনে করি মেধাই যথেষ্ট নয়। তার জন্য চাই কমিটমেন্ট, সততা এবং সাহস। ড. আবুল বারকাতের তা আছে।
আমার ধারণা হয়েছিলো, তাঁর নেতৃত্বে জনতা ব্যাংক কেন মুনাফা করতে পারেনি, ড. বারকাত হয়তো এখন সেই ব্যাখ্যাই হাজির করবেন। ড. বারকাতের বিরুদ্ধে উচ্চারিত মাননীয় অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ থেকে আমার এমন ধারণাই হয়েছিলো। কিন্তু কী আশ্চর্য! ড. বারকাত মাননীয় অর্থমন্ত্রীর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে জানালেন যে সকল দেনা শোধ করে, বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে আর্থিক সাহায়্য প্রদান করা পরও গত অর্থবছরে জনতা ব্যাংক ৯৫০ কেটি টাকার মতো নীট মুনাফা করেছে। জনতা ব্যাংকে অবক্ষয় হয়েছে বলে জাতির কাছে একটা মিথ্যা ধারণা প্রদান করার জন্য তিনি মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানালেন।
আমার জানা মতে ড. আবুল বারকাতের নেতৃত্ব পরিচালিত জনতা ব্যাংক দেশের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অর্থ সাহায্য প্রদান করেছেন। আমাদের কাশবন প্রকল্পে তিনি তিন লক্ষ টাকা সাহায্য দিয়েছেন। কাশবনে আর্ট স্কুল ও গানের স্কুলের জন্য সেই টাকায় আমরা একটি ৩০ ফুট বাই ৪০ ফুট টিন শেড নির্মাণ করেছি। সেখানে এখন বেশ কিছু ছেলে মেয়ে ছবি আঁকা ও গানের তালিম পাচ্ছে। জনতা ব্যাংকের এই সাহায্য প্রকল্প আমার এলাকার সাংস্কৃতিক অবক্ষয় রোধে যথেষ্ট ভালো ভূমিকা রেখেছে।
তাঁর সৃজনশীল চিন্তার জন্য জনতা ব্যাংক ও তার চেয়ারম্যান হিসেবে ড. আবুল বারকাতকে যখন আমাদের প্রশংসা করা উচিত তখন মাননীয় অর্থমন্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে অবক্ষয়ের ধূম্রজাল বিস্তার করে ভারী অন্যায় করেছেন বলেই আমার মনে হলো।
মাননীয় অর্থমন্ত্রী, আপনি জনতা ব্যাংক ও ড. আবুল বারকাতের বিরুদ্ধে আনীত ভ্রান্ত অভিয়োগটি প্রত্যাহার করুন। ভুল স্বীকার করুন।
আপনি ভুল স্বীকার করলে ভুল তথ্য সম্বলিত গ্রন্থ রচনা করার জন্য আপনার বন্ধু এ কে খন্দকারও ভুল স্বীকারে আগ্রহী হতে পারেন। ভুল করতে পারবেন আর ভুল স্বীকার করতে পারবেন না— এ কেমন কথা?
লেখক : কবি
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৪