সাঈদীর এই রায়ের পর সবচেয়ে বেশি আহত হবে বিএনপি। বিএনপি আজব কিছু বস্তুতে বিশ্বাস করে।
এই রায়ের পর খালেদা জিয়া জামায়াত-আওয়ামী লীগের আঁতাত হয়েছে বিশ্বাস করে মনোক্ষুন্ন হবেন নিশ্চিত। ভেঙে পড়তে পারেন। আওয়ামী লীগের সাথে কোনভাবেই এখন তিনি পেরে উঠছিলেন না। যা কিছু ভরসা ছিল জামায়াত। দীর্ঘ দিনের বন্ধু জামায়াতের সাথে আওয়ামী লীগের আঁতাতের কারণে মনোবল এতো তলানীতে পৌছুতে পারে যে ২০৪১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যাবে এমন বিশ্বাসও জাগতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপিরই ক্ষতি হলো। যদি বিএনপি বিশ্বাস করতে শুরু করে যে, এই রায় আঁতাতের এবং সরকারের সাথে জামায়াতের হয়ে গেছে। এটা সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য হতাশার হবে। ভবিষ্যতে ময়দানে তাদের ভীত কর্মীদের ডেকে আনাই মুশকিল হবে।
আওয়ামী লীগ বা মুক্তিযুদ্ধের অনেকেই আজ স্বাভাবিকভাবেই হতাশ। তাদের অনেকেই এই রায়কে আওয়ামী লীগের সাজানো, শেখ হাসিনার সাজানো, মানিনা মানব না স্লোগান দিচ্ছেন।
তাদের বলা যায়, হতাশা যতটুকুই হোক এই রায়কে যে কোন আবেগ থেকেই রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। যদি এই রায়কে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন তবে পুরো ব্যবস্থাটাই রাজনৈতিকভাবে দেখার সুযোগ থেকে যায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেউ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বললেও তখন আপনার প্রতিবাদ করার সুযোগ থাকবে না। অতএব প্রতিক্রিয়া সংযত হওয়া বাঞ্ছনীয়।
আমরা একটি সুসভ্য এবং বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই এই ঘৃণ্য অপরাধীদের শাস্তি দিতে চেয়েছি এবং সেভাবেই এগুচ্ছি। তারা কিন্তু সেটা চায়নি। বিচারে তাদের আস্থাও নাই। সেই সুসভ্য প্রক্রিয়ায় যেটা বিচারক ন্যায্য মনে করেছেন বা করেন তিনি সেই রায়ই দেন। সেটার প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখানো নাগরিক দায়িত্ব। নৈতিক কর্তব্য।
গত ২৪ ঘণ্টা ধরে যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি সমব্যথী ব্যক্তি বা অনুসারীরা এই রায় সম্পর্কে প্রচারণা চালাচ্ছে। আঁতাত হয়ে গেছে- প্রচার করছে। পুরো ঘটনাই দোসরদের পুর্বোক্ত কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা মাত্র। তারা চায়, যে কোনভাবে এই বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক একটা সিল দেয়া। সেই ফাঁদে পা দেওয়া আমাদের উচিত হবে কি!
আমরা রায় পছন্দ না হলে বলতে পারি। হতাশা প্রকাশ করতে পারি। কিংবা যদি সুযোগ থাকে রিভিউএর জন্য সরকারকে চাপ দিতে পারি। যদিও সংবিধান অনুসারে রিভিউর কোন সুযোগ যুদ্ধাপরাধীরা পাবেন না।
১০৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিভিউ আবেদন করা হয়। তাতে বলা হয়েছে-
“সংসদের যে কোন আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে এবং আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রণীত যে কোন বিধি সাপেক্ষে আপীল বিভাগের কোন ঘোষিত রায় বা প্রদত্ত আদেশ পুনর্বিবেচনার ক্ষমতা উক্ত বিভাগের থাকিবে। ”
কিন্ত সংবিধান ৪৭ক (২) অনুচ্ছেদে বলা আছে- “ এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে তাহা সত্ত্বেও যে ব্যক্তির ক্ষেত্রে এই সংবিধানের ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় বর্ণিত কোন আইন প্রযোজ্য হয়, এই সংবিধানের অধীন কোন প্রতিকারের জন্য সুপ্রীম কোর্টে আবেদন করিবার কোন অধিকার সেই ব্যক্তির থাকিবে না। ”
এখন প্রশ্ন হতে পারে ৪৭ অনুচ্ছেদের (৩) দফায় কাদের নাম আছে? আসুন জেনে নিই। সেখানে লেখা আছে- “এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধপরাধ এবং আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য কোন সশস্ত্র বাহিনী বা প্রতিরক্ষা বাহিনী বা সহায়ক বাহিনীর সদস্য। ”
স্পষ্টতই এখানে ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে, তাই যুদ্ধপরাধীরা রিভিউ আবেদন করতে পারে না। এটা মীমাংসিত বিষয়। কাদের মোল্লার রায় কার্যকরের সময় এটার বিচারিক ব্যাখ্যা এসেছে। তবে এক্ষেত্রে হতাশ বাদী পক্ষ রিভিউর আবেদন করতে পারে কিনা বা করার সুযোগ আছে কিনা সেটার ব্যাখ্যা আমার জানা নেই। জানা দরকার। যদি থাকে অবশ্যই সেই সুযোগ নিতে রাষ্ট্রপক্ষকে বাধ্য করতে হবে। উচ্চতর শাস্তি আমরা চাই।
আপাতত সাঈদী আমৃত্যু কারাবাস করবেন এটাই সত্য। স্বাধীনতার ৪৩ বছরে তারা শিকড় গজিয়ে মহিরুহে পরিণত হয়েছে। শত প্রতিকূলতায় আমরা তাদের আমৃত্যু কারাবাস নিশ্চিত করেছি এটাও খুব সহজ অর্জন নয়।
লেখক: অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৪