মালয়েশিয়া: বাংলাদেশে পাসপোর্ট পেতে বিড়ম্বনার কথা আমরা সবাই কম বেশি জানি। কিন্তু পৃথিবীর অনেক দেশই আছে যেখানে খুব কম সময়ে পাসপোর্ট করা সম্ভব।
আজ বাংলানিউজের পাঠকদের জানাতে চাই কিভাবে খুব সহজে মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট করা যায়।
সম্প্রতি আমার গাড়ি সার্ভিসিং করতে অফিস থেকে বের হয়েছি। ইউনিভার্সিটির বিশাল লবিতে দেখা হলো আমার এক ছাত্রের সঙ্গে। কুশল বিনিময়ে জানলাম, আমাদের কর্ম ভিন্নতর হলেও যাত্রা একই গন্তব্যে। অর্থাৎ আমার গাড়ির ওয়ার্কশপ যেখানে তার কাছেই ইমিগ্রেশন অফিসে সে যাচ্ছে পাসপোর্ট করতে।
পাসপোর্ট মানেই আমাদের দেশে নানা ঝক্কি ঝামেলা। মালয়েশিয়ায় পাসপোর্ট করতে কত সময় লাগে সেটা জানতেই তাকে বললাম, পাসপোর্ট হাতে পেতে তোমার কতদিন লাগবে ?
সে যা বললো তাতে আমার চোখ চরকগাছ। মাত্র ঘণ্টা খানেক!
এক ঘণ্টায় কিভাবে পাসপোর্ট করা যায় তার কর্ম পদ্ধতি সরেজমিনে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করলে সে আনন্দচিত্তে সম্মতি দিল।
আমরাও যার যার কাজ সেরে একসঙ্গে হাজির হলাম পাসপোর্ট অফিসে। যখন হাজির হলাম তখন ঘড়ির কাটায় ৯টা বেজে ৩৫ মিনিট।
প্রথম কাউন্টারে দাঁড়াতেই একজন পুলিশ অফিসার দেখতে চাইলেন যথাযথভাবে পূরণ করা পাসপোর্টের আবেদনপত্র আর মালয়েশিয়ার পরিচয়পত্র। সেটা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে মেশিনে ছাপানো একটি ক্রমিক নম্বর যেখানে লেখা ১২৬৯। আবেদনকারীকে বলে দেওয়া হল, ১২৬৯ ডাকা হলে সে যেন সামনের নির্দিষ্ট কাউন্টারে হাজির হয়।
এরপর আমাদের অপেক্ষার পালা। ওয়েটিং রুমে উপস্থিত পাসপোর্ট আবেদনকারীর সংখ্যা দেখে ধারণা করি, দিনের প্রথম নম্বর সম্ভবত ১২০১ থেকে শুরু হয়েছে। একঘণ্টার কিছু পরে তার ডাক পড়ে ১২ নম্বর কাউন্টার থেকে। সে কাউন্টারে তাকে মিনিট পাঁচেক থাকতে হয়েছিল। এই পাঁচ মিনিটে সে যথাযথভাবে পূরণ করা পাসপোর্টের আবেদনপত্র আর মালয়েশিয়ার পরিচয়পত্র এর কপি জমা দিয়ে নির্দিষ্ট কাউন্টারে স্থায়ীভাবে স্থাপিত ক্যামেরায় ছবি তুলে আবার ওয়েটিং রুমে ফিরে এলো।
আমি ফিস ফিস করে জানতে চাইলাম, তুমি তো বলেছিলে ঘণ্টা খানেক এর মধ্য পাসপোর্ট হাতে পাবে, এখন তো প্রায় দেড় ঘণ্টা পার হতে চলেছে!
তার উত্তর- ঘড়ির কাঁটা শুরু হবে ছবি তোলা কাউন্টার থেকে।
এখানে বলে রাখা ভালো যে কাউন্টারের পাশের একস্থানে ছেলে মেয়েদের ৬/৭টি করে কালো ড্রেস, ওয়ালে একটি আয়না আর তার পাশে চিরুনি রাখা আছে। ছবি তোলার আগে আবেদনকারীরা বিনা ভাড়ায় তা ব্যবহার করতে পারেন।
এর মধ্যে তার ডাক এল ৬ নম্বর কাউন্টার থেকে। সেখানের কাজ শুধু পাসপোর্টের ফিস ১০০ রিংগিত জমা দেওয়া। লাগল ২/৩ মিনিট।
আবার সে ফেরত এল আমার কাছে সেই ওয়েটিং রুমে।
আমাদের কফি শেষ না হতেই ২ নম্বর কাউন্টার থেকে ডাক পড়ল। সেখানে সে গেল আর হাতে নতুন ঝকঝকে এক পাসপোর্ট সমেত হাসিমুখে ফেরত এল।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ছবি তোলা কাউন্টার থেকে হিসেব করলে একঘণ্টা পার হতে তখনও ঢের বাকি। সে আমাকে মোটর ওয়ার্কশপে নামিয়ে শাহআলমের রাস্তায় হারিয়ে গেল।
গাড়ির কাছে এসে দেখি আমার গাড়ির সার্ভিসিং তখনও শেষ হয়নি।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৪