ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ছেলের নাম ‘গোলাম আযম’, কেউ রাখে?

মনোয়ার রুবেল, কনট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৪
ছেলের নাম ‘গোলাম আযম’,  কেউ রাখে? গোলাম আযম

যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হওয়ার পর সাংবাদিকরা গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে জানা যায়, তিনি অনেক কিছু বিস্মৃত হয়েছেন। ভুলে গেছেন।

সম্প্রতি বেসরকারি এক টেলিভিশনে দেখে যা বুঝলাম তাতে মনে হলো তিনি বোধহয় আবার স্মৃতি ফিরে পেয়েছেন। সাথে পুরোনো শয়তানটাও তার মাথায় চাপা দিয়ে বসেছে।

সম্ভবত ইদানিং তার নামাজ কালাম ঠিকমতো পড়া হচ্ছে না। তাই শয়তানি বুদ্ধি আছর করেছে। তা না হলে তিনি মিথ্যা কথা বলবেন কেন? নেক বান্দাতো মিথ্যা কথা বলেন না।

তিনি যুদ্ধাপরাধের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, আমি এমন কোন কাজ করিনি যে ক্ষমা চাইতে হবে। যা করেছি মানুষকে বাঁচানোর জন্যই করেছি।

প্রশ্ন হতে পারে, তিনি মানুষকে বাঁচালে দুই লক্ষ নারী কিভাবে ধর্ষিত হয়েছেন? কার অনুসারীরা অসহায় মেয়েদের ঘর থেকে বের করে এনে হানাদারদের বিছানায় ছুঁড়ে দিয়েছে?  টিভি সাংবাদিক নেহায়েত ভদ্রতার বশে এই প্রশ্ন গোলাম আযমকে করেন নি।

একটি জাতীয় দৈনিকে গোলাম আযমের সাক্ষাৎকার বিষয়ক সংবাদের পাশাপাশি আরেকটি লেখা পড়লাম সাবেক পাকিস্তানি কর্মকর্তা কর্নেল নাদের আলীর। নাদের আলী একাত্তুরে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন। তিনি অনুতপ্ত। ক্ষমা চেয়েছেন। কারা তাকে সাহায্য করেছেন তাও তিনি লিখেছেন- ‘জামায়াতে ইসলামী আমাকে এই স্বেচ্ছাসেবক প্রদান করত। প্রফেসর গোলাম আযম ও চৌধুরী রহমত ইলাহী প্রায়ই আমার অফিসে আসতেন। ফজলুল কাদের চৌধুরী ও মৌলভী ফরিদ আহমেদের সঙ্গে আমার ঘন ঘন দেখা হতো। ’

এসব বিষয় গোলাম আযম কখনোই স্বীকার করেন না। করেন নি। কখনোই তারা ক্ষমা চান নি, চান না। ভাগ্যের কি পরিহাস, ক্ষমা চাচ্ছেন গোলাম আযমের সাবেক প্রভু ,পাকিস্তানের এক সেনা কর্মকর্তা। হয়তো গোলাম আযম এখন বলবেন তিনি তাকে চেনেন না বা ভুলে গেছেন। তিনি ভেবেছেন অস্বীকার করলেই কি অপরাধ পার পেয়ে যাবেন?

মিথ্যেবাদী গোলাম আযমদের চরিত্র সহজে ধরা পড়ে না। বয়সের ভারে সাদা দাড়িতে তো একেবারেই ধরা পড়ে না। কেননা বৃদ্ধ অবস্থায় সাদা দাড়িতে শয়তানকেও পবিত্র মনে হয়। পুণ্যবান মনে হয়। গোলাম আযম তদ্রুপ। ১৯৭১-এ তার যৌবনে তিনি কি পরিমাণ কু-কর্ম করেছেন তা সকলেই জ্ঞাত। এখন তিনি পূত মানব। এখন রুপবান গোলাম আযমের বয়সের ভারে গণ্ডদেশে মেদ জমে নাদুস নুদুস দেখাচ্ছে। শুভ্র দাড়িতে পবিত্র মনে হচ্ছে। মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করেন। তসবিহ জপেন হরদম। তাকে দেখিয়ে শিবির কর্মীরা অন্যদের বলে, এমন পুণ্যবান মানুষ হয় না।

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তারা বলেন, এত বড় অলীর সাথে বেয়াদবি, আল্লাহ বরদাস্ত করবেন না, জাহিলদের উপর গজব নাযিল হবে। কেউ কেউ, বিশেষ করে শিবির কর্মীরা গোলাম আযমের বর্তমান দেখেই শ্রদ্ধায় নুয়ে পড়ছে।

গোলাম আযম প্রীতি দেখে শিবির কর্মীদের জন্য মায়া হয়। তাদের মস্তিষ্ক, চিন্তা, চেতনা তালা বদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তারা বুঝতে পারে না তাদের চিন্তা চেতনার বাইরের দুনিয়ায় কিভাবে গোলাম আযমকে মূল্যায়ন করে। শুধু গোলাম আযমই ঘৃণিত নন, তার নামটি পর্যন্ত ঘৃণাভরে স্মরণ করে মানুষ। কেউ তার সন্তানের নাম রাখে না গোলাম আযম। কোনক্রমে কারো নাম গোলাম আযম হয়ে গেলেও তার ভাগ্যে জোটে সামাজিক লাঞ্ছনা। তেমন একটি ঘটনা দিয়ে লেখা শেষ করছি।

গত কয় মাস আগে আমি বড় ভাইয়ের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম ঢাকা ন্যাশনাল পলিটেকনিক-এ। ভর্তি চলছিল। এক শিক্ষক তার ভাগ্নেকে নিয়ে এলেন ভর্তির জন্য। ছেলেটির নাম জিজ্ঞেস করলেন আরেকজন প্রবীণ শিক্ষক। ছেলেটি মিন মিন করে জবাব দিল, গোলাম আযম। এক শব্দেই সবাই হকচকিয়ে উঠে। চোখ তুলে তাকায় ছেলেটির দিকে। আমিও তাকাই। ছেলেটি মাথা নিচু করে এমনভাবে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে যেন ওদিকে তাকিয়ে থাকতে পারাটাই আজ তার পরীক্ষা। চোখ উঠালেই বহিষ্কার। পুরো কক্ষে শুনশান নীরবতা নেমে আসে।

পরে বড় ভাই-এর মুখে শুনলাম তিনি ছেলেটির বাবাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাকে ভৎর্সনা করেছেন। প্রতিবাদ করেছেন। তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন গোলাম আযম নাম রেখে একটি ছেলের ঘাড়ে আমৃত্য লজ্জা তুলে দিয়েছেন? গোলাম আযম এবং মীর জাফর লোকের নাম হয়?  ছেলেটির বাবা ভুল বুঝতে পেরেছেন। লজ্জিত হয়েছেন। খোঁজখবর নিয়ে নাম পাল্টানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছেন।

যে দেশে এতগুলো প্রতিবাদী কণ্ঠ আছে সেখানে গোলাম আযমের মতো অপরাধীরা রেহাই পাবে?

কখনোই না। পুন:প্রকাশিত

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট, [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।