বাংলাদেশে কি জুতার অভাব আছে? না, নেই। তাহলে সামান্য একপাটি জুতা নিয়ে এতো হৈচৈ এর কী আছে? অবশ্যই যথেষ্ট কারণ আছে।
কিন্তু তাতে কী? জুতার মতো জুতার অভাব ঠিকই আছে। এই যে কোটি কোটি জুতা, এদের মধ্যে একপাটি জুতা ছাড়া সবার জন্মই বৃথা। গোলাম আযমের লাশের গায়ে ছুড়ে মারা সেই একপাটি জুতা, এখন বাংলাদেশের তথা বাঙালির জাতীয় ঘৃণার প্রতীক! তাই একথা বললে এখন আর অত্যুক্তি হবে না, ‘জুতা হোক স্যান্ডেল হোক, একপাটিই যথেষ্ট’। তা প্রমাণ করেছেন বীরাত্মা মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন। কে এই অকুতোভয় তরুণ প্রজন্মের বীর? তিনি গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃত্বদানকারী একজন বীর সৈনিক। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মুন্সীর পুত্র। বাংলাদেশে এমন বীরাত্মা সন্তান একজন মুক্তিযোদ্ধাই জন্ম দিতে পারেন, আর কেউ নয়।
১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি যে মসজিদে জানাজায় অংশগ্রহণ করতে গেলে গোলাম আযমকে জুতা পেটা করা হয়েছিল, ২০১৪ সালের ২৫ অক্টোবর সেই মসজিদেই গোলাম আযমের লাশের জানাজায় জুতা মারা হয়েছে। কি নাটকীয় মিল! এমন ঘটনা মুম্বাই ফিল্মেও দেখা যায় না। তেত্রিশ বছর কেটে গেছে গোলাম আযম, কেউ ভুলে যায়নি!
বাংলাদেশের মিডিয়াগুলি যখন গোলাম আযমের মৃত্যু, জানাজার সংবাদ প্রচারে ব্যস্ত ঠিক তখন হঠাৎ করেই সব কিছু ছাপিয়ে একপাটি জুতা সংবাদ শিরোনাম হয়ে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের ‘জাতীয় জুতা’ কিংবা পাদুকা নাই। বাঁধনের ছুড়ে মারা সেই জুতাপাটিই একদিন বাংলাদেশের ‘জাতীয় জুতা’ হতে পারে। যাদুঘরে স্থান পেতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে বীর মহাবীরদের তলোয়ারের রেপ্লিকা মানুষ ঘরে ঘরে সাজিয়ে রাখে। বাঁধনের সেই জুতাপাটির রেপ্লিকাও সংগ্রহ করতে পারলে, মানুষ ঘরে ঘরে সাজিয়ে রাখবে।
আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে ছুড়ে মারা সেই একপাটি জুতা এখন বিখ্যাত। মহামূল্যবান। সেই জুতা নিক্ষেপকারী ব্যক্তিও মধ্যপ্রাচ্যের জাতীয় বীরের সম্মানে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন। উল্লেখ্য, লিবিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোয়াম্মেল গাদ্দাফীর কন্যা তাকে বিবাহের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।
চারদিকে আলোচনা চলছে, গোলাম আযমের লাশে ছুড়ে মারা সেই জুতাপাটি এখন কই? কার হেফাজতে আছে? সেই মহান পাদুকাখানি লাখ টাকা দিয়ে কিনতে অনেকেই রাজি। ইতোমধ্যেই তা মহামূল্যবান হয়ে গেছে। একদিন হয়তো নিলামে বিক্রি হবে। যদি সেই জুতাপাটি না পাওয়া যায়, তবে তার সহোদরা আরেকপাটি জুতাও গুরুত্বপূর্ণ। তার দামও কম হবে না। এতদিন জানতাম, অসির চেয়ে মসি শক্তিশালী। এখন মনে হচ্ছে, তলোয়ারের চেয়ে জুতা কার্যকরী!
লেখক: একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০১৪