ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

জি-২০-তে জলবায়ু ইস্যুই উপেক্ষায় ।। লিওনর টেইলর

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪
জি-২০-তে জলবায়ু ইস্যুই উপেক্ষায় ।। লিওনর টেইলর

১৫ নভেম্বর শনিবার অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে শুরু হলো গ্রুপ টোয়েন্টি বা জি-২০ এর অর্থমন্ত্রীদের শীর্ষ সম্মেলন। আয়োজক দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুকে প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে নিতে বাধ্য করা হয়।

প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার বক্তব্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে একটি নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তির আহবান জানানোর পর অস্ট্রেলিয়া জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে এ আপত্তি জানায়। এর আগে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, ‘এটি হলো আমাদের সময়ের নির্ধারণী ইস্যু’।    
 
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট তার আপত্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, জলবায়ু অালোচনা জি-২০ এর অর্থনীতি বিষয়ক পলিসি থেকে আলাদা। সেজন্যে এটি আলাদা করেই করা উচিত। এবং এ আলোচনা জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন অন্যান্য অধিবেশন ও বৈঠকের জন্য রেখে দেয়া উচিত।   

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অস্ট্রেলিয়াকে দুই একবার কিছুটা বিপদেই ফেলে দিয়েছিল। সেখানে ওবামা অ্যাবোটের প্রতি বেশ উন্নাসিক ছিলেন। একধরনের আত্মম্ভরী আচরণ করেন ওবামা। ব্যাপারটা এমন এক দৃশ্যের অবতারণা করে, রীতিমতো এটি সম্মেলনজুড়ে (টক অব দ্য কনফারেন্স) আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন আগেই ২০২০ পরবর্তী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ কমানো নিয়ে ঘোষণা দিয়েছিল বেইজিংয়ে। পরে তারা ৩ বিলিয়ন ডলার গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড নামের একটি জলবায়ু তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করে। এ সময় অ্যাবোট সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের সবাইকে অভিনন্দন জানান।           

ওবামা বলেন, ‘কোনো জাতিই স্বাধীন স্বনির্ভর ও নিরাপদ নয়। সবারই তার অন্যের প্রতি কিছু করার দায়িত্ব আছে। ’ তিনি বলেন, ‘প্রথমেই স্মরণ করুন। যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ স্বার্থ নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। তার মধ্যে আমাদের অভিন্ন দিক হলো, আমরা উভয় পক্ষই প্রচুর পরিমাণে কার্বন উৎপাদন করি। যা কমানোর উপায় নিয়ে আমাদের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। ’

ওবামা জানান, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে কার্বন নির্গমন কমানোর লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা দিয়েছেন। ‘বিশ্বের সব দেশের প্রতি একটি শক্তিশালী বার্তা দেয়া হয়েছে যে, আপনি উন্নত কিংবা উন্নয়নশীল যে দেশেরই হোন আপনাকে পুরনো বিভাজনগুলো নিরসনে সক্ষম হতে হবে। আপনি সার্বিকভাবে বিজ্ঞানের দিকে তাকিয়ে দেখুন এবং আগামী বছরের মধ্যে একটি শক্তিশালী বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি ও সমঝোতায় এগিয়ে আসুন। ’    

ওবামা বলেন, ‘চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যদি এ ব্যাপারে একমত হতে পারে, তাহলে সারা বিশ্বও এ বিষয়ে একমত হতে পারে। আমরা তাহলে এটি করে ফেলতে পারি। এই সমঝোতা চুক্তি সম্পন্ন করা আমাদের জন্য জরুরি। ’

তবে সম্মেলনের পেছনের রুমগুলোতে অস্ট্রেলিয়া নিজেদের উপস্থাপিত পেপারের বক্তব্যেই অটল থাকে। দেশটির কর্মকর্তারা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে একটি তহবিল গঠন নিয়ে সদস্যভুক্ত দেশগুলোকে উৎসাহিত করে যাচ্ছিল। অপরদিকে পরিবেশবাদী ও অন্যান্য দাতা সংস্থাগুলো একটি ‘ব্লক’ হিসেবে নিজেদের হাজির করার ব্যাপারে অস্ট্রেলিয়াকে বারবার সতর্ক করে দিচ্ছিল।

কারণ অ্যাবোট তহবিলটির ব্যাপারে বেশ খুঁতখুঁতে ছিলেন। গত বছর জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের আগে অস্ট্রেলিয়া এ তহবিল নিয়ে কথা তুলেছিল। অ্যাবোট বলেছিলেন, ‘এ তহবিলে আমরা কোনো ধরনের অবদান রাখছি না। ’

অস্ট্রেলিয়া এ ধরনের চেষ্টাকে পরিবেশবাদের নামে ছদ্মবেশী সমাজতন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে।

গত নভেম্বরের কমওয়েল্থ রাষ্ট্রপ্রধানদের বৈঠকের একটি পরিপত্রে তহবিলটি গঠনে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা সমর্থন দিতে জোরালোভাবে অসম্মতিও জানিয়েছিল।

অবশ্য নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়ায় ব্যাপক সমালোচনা করা হয় অ্যাবোটের। তবে তিনি শনিবার সকালের মধ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহবান জানান।

অ্যাবোট তার দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মন্দাবস্থার কাটিয়ে ওঠার প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অথচ ইবোলা মহামারি, ইবোলা নিয়ে সংঘাত ইত্যাদিতেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। চিকিৎসা ও উচ্চশিক্ষা খাতকে আরো গতিশীল করতে নতুন ফি নির্ধারণেরও চিন্তা করছেন অ্যাবোট।

আনুষ্ঠানিক আলোচনা পর্বে বিশ্বনেতারা অস্ট্রেলিয়ার উপস্থাপিত এজেন্ডা পেপার নিয়ে আলোচনা করেন। জি-২০ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া একটি কর্ম পরিকল্পনা পেশ করেন। তাতে বলা হয়, সদস্য দেশগুলো নতুন ধরনের নীতি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার করবে। যাতে নীতি হিসেবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা হয়। সেইসঙ্গে অবকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারেও প্রস্তাব দেয়া হয়।  

অস্ট্রেলিয়ার এ প্রস্তাবে যুক্তরাজ্য, নিউজিল্যান্ড, কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরব অনানুষ্ঠানিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব শক্তিশালী করার কথা সম্মেলনে আবারো ব্যক্ত করেছেন।  

এ ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করার পর ওবামা তার কারণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সবসময়ই এ অঞ্চলের একটি প্যাসিফিক শক্তি হিসেবে আছে ও থাকবে। ’

তবে সম্মেলন চলাকালে বাইরে ব্যাপকভাবে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশ ‍ও বিক্ষোভ করা হয়। পুলিশ তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে চেষ্টা করে।

অবশ্য সম্মেলনে বিশ্বনেতারা অস্ট্রেলিয়ার আপ্যায়নে দুপুরের খাবার বেশ ভালোভাবে উপভোগ করেছেন। খাবারের সময় খাবারের স্বাদকে আরো বাড়িয়ে তুলেছিল দেশটির আঞ্চলিক সংগীতের পরিবেশনা।

লিওনর টেইলর: দি গার্ডিয়ানের রাজনৈতিক সম্পাদক
অনুবাদক: শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।