বিশ্বের অন্য জাতির একান্নবর্তী হতে যতো হিসেব কষতে হয়, বাংলাদেশকে ততো ঘাম ঝরাতে হয় না। বাংলাদেশ এক হতে পারে যে কোনো উপলক্ষতেই।
উল্লিখিত ক্ষমতার বলয়টি ব্যর্থ হলেও, ব্যর্থ হয়নি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের জনমানুষ অসাধারণ। ক্ষমতার বলয় এইসব মানুষকে সাধারণ বলেই গণ্য করে। আসলে ঐ অসাধারন জনমানুষেরা ক্ষমতাবাদীদের বোঝাতে পেরেছে, ক্ষমতানীতির বলয়ে বিভাজন আছে। কিন্তু এর বাইরের যে বিশাল জনগোষ্ঠি, বিভাজনটি তাদের মধ্যে সেই নেই। ফলে তারা ক্ষমতানীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে, যার যার অবস্থান থেকে বাংলাদেশকে গড়ার লড়াইয়ে যুক্ত হয়েছেন। মাঠের কৃষক, কারখানার শ্রমিক আর শিল্পের উদ্যোক্তা থেকে শুরু করে খেলার মাঠের যারা তারা কেউই পিছিয়ে নেই। সবাই সমান গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। এই গতির কাছে ক্ষমতানীতির কোনো আলাপ-প্রলাপ, হুঙ্কার-হুঁশিয়ারি, আহবান কোনোটাই পৌঁছাচ্ছে না। ক্ষমতায় কে এলো আর কে গেলো, গুটিকয় অবিশ্বাসীর আস্ফালনে ‘টিম বাংলাদেশ’র কিচ্ছু যায় আসে না। কারণ তার এখন একের পর এক অর্জনের মাইলফলক ছোঁয়ার সময়। পেছনে তাকাবে না ‘অসাধারণ’ জনমানুষ। সেই অসাধারণদের অসাধারণ কীর্তি আমরা দেখলাম বিশ্ব ক্রিকেটে। ইংরেজ দুর্গ গুঁড়িয়ে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সফর শেষ হয়নি। এখনো বাকি কিছুটা পথ। অনিশ্চয়তার খেলায় ভারতকে হারানোর স্বপ্নও দেখছে বাংলাদেশ। তারপরও ইংরেজদুর্গ গুঁড়িয়েই উৎসবে মেতে উঠেছে বাংলাদেশ। সেই উৎসবে মেতে ওঠা জনগণের মধ্যে কোনো বিভেদ নেই। বিপরীত গ্যালারীর কোনো অবস্থান নেই এই উৎসবে। শুরুতে বলছিলাম,যে কোনো উপলক্ষ, উৎসব গোটা বাংলাদেশকে এক করার ক্ষমতা রাখে। কেবল ব্যর্থ হয় ক্ষমতানীতি। সেই ক্ষমতানীতিকেই দেখলাম ‘অসাধারণ’দের কাছে নতজানু হতে। উৎসবে একাট্টা জনমানুষ দেখে, একটি পক্ষ ভীত হয়ে বা জনমানুষের শক্তির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েই হয়তো তাদের হরতাল কর্মসূচি শিথিল করেছে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিজয়ের আনন্দে শরিক হতে চায় তারাও। বের করবে বিজয় মিছিল।
সরকারের দিক থেকেও বিজয় মিছিল আয়োজনের আহবান এসেছে। ক্রিকেটের বিজয় বাংলাদেশকে একাট্টা করছে। ক্ষমতানীতিবাদীরা যদি ক্ষমতার পালা বদলের পদ্ধতিটা একবার ঠিক করে নেন, তাহলে একাট্টা না হতে পারার আর কোনো উপলক্ষই থাকবে না ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই পরিবারটিতে।
বাংলাদেশ সময় ১৪১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৫