ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ক্রিকেটের খলনায়কদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৫ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৫
ক্রিকেটের খলনায়কদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক ছবি: সংগৃহীত

গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট খেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত আম্পায়াররা যে একচোখা নীতি দেখিয়েছেন তার বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এ-ঝড় কেবল সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমী বা দর্শকদের মধ্যেই থেমে থাকেনি, ক্রিকেটবোদ্ধা বা বিশেষজ্ঞ বলে যারা আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত তাঁদের মধ্যেও পরিলক্ষিত হয়েছে।

ক্রিকেট তারকাদের অনেকেই ফেসবুক ও টুইটার সহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আম্পায়ারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তসমূহকে ক্রিকেট ইতিহাসের এক ন্যক্কারজনক ঘটনা বলেও অভিহিত করেছেন।

আইসিসির বর্তমান সভাপতি আ হ ম মস্তফা কামালও আম্পায়ারদের অনৈতিক ও অবিচারপ্রসূত সিদ্ধান্তে বেশ মর্মাহত। তিনি অনেকটা ক্ষোভের সঙ্গে আইসিসিকে “ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল” বলেও অভহিত করেন, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে। কেবল বাংলাদেশি হিসেবেই নয়, সংস্থাটির হতাশাগ্রস্ত একজন সভাপতি হিসেবে তিনি এও বলেন, “আম্পায়ারিংয়ে পক্ষপাতিত্বের  বিষয়টি আইসিসির পরবর্তী বোর্ডসভায় তুলে ধরা হবে এবং আম্পায়াররা ইচ্ছেকৃতভাবে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন কিনা তা আইসিসির নিয়মানুযায়ী খতিয়ে দেখা হবে। “

অথচ গতকাল শুক্রবার দুপুরে টিভি নিউজে দেখলাম, আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভিড রিচার্ডসন আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকেই চূড়ান্ত বলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান। সংস্থাটির সভাপতি হিসেবে আরও দায়িত্বশীলতার সাথে কথাবার্তা বলার জনও কামালকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন।

লক্ষ কোটি জনতার উত্তাপিত অভিযোগকে উপেক্ষা করে আম্পায়ারদের অন্যায় ও ভুল সিদ্ধান্তকে “চূড়ান্ত” বলে বৈধ করনের যে নির্মম ঘোষণা তিনি দিয়েছেন তা সত্যি বিস্ময়কর ও অবিবেচনাপ্রসূত। যে জয়-পরাজয়কে নিয়ে আমজনতা সহ ক্রিকেট বোদ্ধাদের মধ্যেও বিতর্ক ও সন্দেহের উন্মেষ ঘটেছে তা দূর না করে তিনি এতো সহজে আম্পায়ারদের পক্ষ নিয়ে যে সাফাই গাইলেন তা কেবল ওইসব অনৈতিক ও পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারদেরকে আশকারা দেয়াই নয়, আইসিসির গায়েও নতুন করে কলঙ্ক লেপার সামিল।     

খেলাতে জয়-পরাজয় আছে, থাকবে। কিন্তু  যে জয় প্রশ্নবিদ্ধ, যে বিজয়ে কদর্যতা ও ক্লেদ লুকিয়ে থাকে, যে বিজয়ে বুনো উল্লাস থাকলেও কোনো পরিতৃপ্তি থাকে না,  সে বিজয় প্রকৃত অর্থে কোনো বিজয় নয়। বরং পরাজয়ের চেয়েও ঘৃণ্য ও অবমাননাকর। বিশ্রি কুটিলতার শিকারে পরিনত হয়ে বাংলাদেশ হেরে সাময়িক আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে বটে, কিন্তু অপমানিত নয়। ভারত জিতেছে সত্যি, কিন্তু বিজয়ের গৌরব অর্জন করতে পারেনি। বরং ক্লেদাক্ত বিজয়ের অপমানই তাদেরকে কুঁরে কুঁরে খাবে বলে আমার বিশ্বাস।

বাংলাদেশ ভারতের কাছে যদি সত্যি সত্যি হেরে যেতো তাহলে আমাদের মোটেও আপত্তি ছিল না। কিন্তু মাঠের বাইরে থেকেও কূটচাল চালিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে ঠাণ্ডা মাথায় যেভাবে হারানো হল তা কেবল লজ্জাজনকই নয়, অমানবিক ও কলঙ্কজনকও বটে। বাংলাদেশকে হারিয়ে ভারতকে জিতিয়ে দেয়ার এ নগ্ন খেলার নেপথ্যে অনেকে থাকলেও প্রকাশ্য খলনায়কের ভুমিকায় যারা লিপ্ত হয়েছিলেন তারা আর কেউ নন,  আইসিসিরই বেতনভুক্ত তিন আম্পায়ার।

আইসিসি একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবেই এতদিন বিশ্বে পরিচিত ছিল। কিন্তু ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাম্প্রতিক খেলাটিতে আম্পায়ারদের পক্ষপাতদুষ্ট ভুল সিদ্ধান্ত ও বিমাতাসুলভ মনোভাবের যে বহির্প্রকাশ ঘটেছে তা মূলত আইসিসির ভাবমূর্তিকেই বিনষ্ট করেছে। তাই সংস্থাটির সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলবো, আইসিসির গ্রহণযোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে হলেও অভিযুক্ত আম্পেয়ারদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন এবং ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত প্রশ্নবিদ্ধ খেলাটি পুনরায় পরিশুদ্ধভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সত্য সুন্দরের নজির স্থাপন করবেন।

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল: আয়ারল্যান্ডপ্রবাসী, [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।