ঢাকা: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার না করা, বাজে আম্পায়ারিং, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্বকাপ ফাইনালের ট্রফি দিতে না দেওয়ায় আইসিসি চেয়ারম্যান নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে আইসিসি সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল।
কিন্তু মুস্তফা কামালের অভিযোগ, তার পাঠানো পদত্যাগপত্রের বক্তব্যের অর্থ বিকৃত করে প্রকাশ করেছে আইসিসি।
এছাড়া বৃহস্পতিবার দুপুরে আইসিসি’র প্রধান নির্বাহী’র কাছে ফোনও করা হয়েছে, যেন তার পদত্যাগপত্রের বক্তব্যের আইসিসিকৃত ভুল ব্যাখ্যা সংশোধন করা হয়।
কিন্তু ডেভ রিচার্ডসন তার দাবি আমলে না নিয়ে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আইসিসির বিবৃতিতে প্রকাশিত ভাষ্য সংশোধন করা হবে না। তবে পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
পদত্যাগপত্রে মুস্তফা কামাল যা বলেন তার বিকৃত অর্থ করে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠায় আইসিসি। মুস্তফা কামাল পদত্যাগপত্রের এক জায়গায় স্বাভাবিক সৌজন্য প্রকাশের জন্য লিখেছিলেন: ‘...During this period if I had hurt anybody I would like to submit my apology to all of them’’। কিন্তু ‘‘আমি কারো মনে আঘাত দিয়ে থাকলে সবার কাছে দু:খ প্রকাশ করছি’’ –এ কথাকে আইসিসি এমনভাবে উপস্থাপন করেছে যাতে করে মনে হবে তিনি আইসিসির সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন (‘‘In his resignation letter to David Richardson, Mustafa Kamal offered his apologies to all associated with the ICC,…)। বিবৃতিতে apology-শব্দটিকে সৌজন্যমূলক স্বাভাবিক ‘দু:খ প্রকাশ’—এর পরিবর্তে কৌশলে ‘ক্ষমা প্রার্থনা’-র অর্থ করা হয়।
প্রসঙ্গত, বুধবার বাংলাদেশে পৌঁছে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের ঘোষণা দেন কামাল। একই দিনে সন্ধ্যায় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে সদর দফতর দুবাইয়ে ই-মেইলে আইসিসি’র প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসনের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠান মুস্তফা কামাল।
পদত্যাগপত্রে মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘‘ প্রিয় ডেভিড, আজ প্রায় ৬ বছর হয়ে গেল আমি আপনাদের সঙ্গে (আইসিসি) বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে কাজ করেছি। এই সময়ে আমি যদি কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি সেজন্য সবার কাছে দু:খ প্রকাশ করছি। ’’
স্রেফ স্বাভাবিক সৌজন্যবোধ থেকেই এই কথা বলেছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন মুস্তফা কামাল। কিন্তু পদত্যাগপত্রের বক্তব্যের ভুল অর্থ করেছে আইসিসি--অভিযোগ কামালের।
আ হ ম মুস্তফা কামালের স্বাক্ষর করা প্রতিবাদপত্রটি ডেভিড রিচার্ডসন বরাবর পাঠিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত সচিব সাফী চৌধুরী।
এই বিষয়ে সাফী চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সৌজন্যবোধ দেখিয়ে স্যার(মুস্তফা কামাল) পদত্যাগপত্রে যা লিখেছেন তার অর্থ বিকৃত করেছে আইসিসি। ফলে সবার কাছে তার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপিত হয়েছে।
আইসিসি পদত্যাগ পত্রটির বক্তব্য হুবহু না ছাপিয়ে বিকৃতভাবে প্রকাশ করায় সবার কাছে ভুল বার্তা গেছে। আইসিসি স্যারের বক্তব্য বিকৃত করে প্রকাশ করায় এমন অর্থ দাঁড়িয়েছে যেনবা স্যার তার কাজের জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাই এর প্রতিবাদ জানিয়ে আইসিসি’কে ইমেইল করা হয়েছে। এর পাশাপাশি আইসিসি’র প্রধান নির্বাহীর কাছে ফোনও করা হয়েছে, যাতে আইসিসির বিকৃত ব্যাখ্যা সংশোধন করা হয়। ’
‘আইসিসিকৃত বিকৃত ব্যাখ্যা সংশোধনে সিইও কোনো আশ্বাস দিয়েছেন কি?’-- এ প্রশ্নের জবাবে সাফী বাংলানিউজকে বলেন, এটি তারা সংশোধন করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। রিচার্ডসন জানিয়েছেন, আইসিসির বিবৃতিতে যা ছাপা হয়েছে তা সংশোধন করা হবে না। তবে সামনের বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। এবং আমাদের তরফ থেকে এ ব্যাপারে যা করার তা করতে বলেছেন সিইও। ’
প্রসঙ্গত, ভুল ব্যাখ্যা এড়াতে ডেভ রিচার্ডসনের কাছে পাঠানো প্রতিবাদপত্রের সাথে মুস্তফা কামাল তার পদত্যাগপত্রটিও সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০২, ২০১৫
** ভারতীয় ‘ক্রিকেট কূটনীতি’ আমাদের বেকায়দায় ফেলতে পারে?