বিএনপি মঙ্গলবার দুপুরের আগে সিটি নির্বাচন বয়কট করেছে। ঢাকার একটি পত্রিকা শিরোনাম করেছে- ...হারল গণতন্ত্র।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে সকাল বেলা নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা তিন সিটি মিলে ৮ লক্ষ ৮০ হাজার ১৮৬ ভোট পেয়েছেন । মাঠ ছেড়ে দেয়ার পরও প্রায় নয় লক্ষ ভোট তাদের প্রার্থীর পক্ষে কাস্ট হয়েছে! এতো লক্ষ স্বত:স্ফূর্ত ভোটার থাকা সত্ত্বেও বিএনপির নির্বাচন বয়কট করার কি কারণ থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ব্যাপারটি পুরোটাই বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল। মঙ্গলবার যারা মাঠে ছিলেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন বিএনপির কোন নেতা বা কর্মী মাঠে ছিলো না। ওয়ার্ড কমিশনার প্রার্থীদের কিছু কর্মী মাঠে কাজ করলেও, মেয়র প্রার্থীর কোন কর্মী খুঁজে পাওয়া যায়নি। ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকেই তারা মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। সেটা হামলা মামলার আতঙ্কে অবশ্যই নয়। এটা বিএনপির রাজনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপি হঠাৎ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলো, এমন আত্মঘাতী রাজনৈতিক কৌশলে তাদের লাভ কী হলো?
এমন কৌশলের দুটো কারণ থাকতে পারে;
এক. বিএনপি কার্যত সিটি নির্বাচনের ক’দিন আগ থেকেই হারার জন্য মানসিকভাবে হেরে বসেছিল। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থী ও নিজেদের কর্মীদের উপর আত্মবিশ্বাস হারিয়ে বিএনপির প্রার্থীদের জয় সম্ভব নয়, এমন ধারণা শীর্ষ নেতৃত্বে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রস্তুতি আদৌ ছিল, সেটাও বলা যাবে না। ঢাকা উত্তরে এবং চট্টগ্রামে বিএনপির কোন প্রার্থী ছিলো না। কোন প্রার্থী না পেয়ে আব্দুল আউয়াল মিন্টুর পুত্র তাবিথ আউয়ালকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম সিটির অবস্থাও একই। সেখানে কেউ প্রার্থী হতে রাজি না হওয়ায় মঞ্জুর আলমকে সমর্থন দিতে বাধ্য হয়। সিটি মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে ব্যর্থতার জন্য মঞ্জুর আলমের পরাজয় প্রায় নিশ্চিতই ছিল। পরাজয়ের লজ্জা ঠেকাতে বিএনপি এমনভাবে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছিল তারা হেরে গেলে যেন বলতে পারে- আমরাতো আগেই বলেছিলাম। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, তাদের পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করতে দিচ্ছে না, কর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। এসব বক্তৃতায় বিএনপির কর্মীরা আতঙ্কিতও হয়ে পড়েছিলেন। “ আমরা আগেই বলেছিলাম” এই আপ্ত বাক্যটি সত্য বলে প্রমাণের জন্যই কিন্তু মঙ্গলবার সকালে বিএনপির ভোট বয়কট করা। কতো দ্রুত নির্বাচন বয়কট করা যায় এ জন্য সকাল থেকে একধরনের অস্থিরতায় বিএনপি নেতারা ভুগছিলেন।
বিএনপি নেতা মেজর আক্তারুজ্জামান বলেছেন, “বিএনপির বিপর্যয় অনেকটা প্রত্যাশিত”। এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই বিএনপি অযোগ্যতা বা অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এখন বিএনপির ভেতরে ও বাইরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে।
দুই. বিএনপির এই নির্বাচনী কৌশলের আরেকটি কারণ হতে পারে বিএনপির দেশি বা বিদেশি বন্ধুদের দেখানো- হাসিনার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব না। এ জন্য বিএনপি মাঠ ছেড়ে দিয়ে থাকতে পারে। বিএনপি মাঠ ছেড়ে দেয়ার পর আওয়ামী লীগ কর্মীদের তৌহিদী জোশ আরো পেয়ে বসে। তারা বিনা বাধায়, বিনা দ্বিধায় কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি এটাই চেয়েছিল। এ জন্যই নির্বাচন ঘিরে হঠাৎ নিষ্ক্রিয়তা। বিএনপির নিষ্ক্রিয়তা যেমন কারো চোখ এড়ায়নি, নির্বাচনের প্রতি তাদের অনীহাও কারো চোখ এড়ায়নি।
খালেদা জিয়া এই কৌশলে অনেকটা সফল হয়েছেন। বিএনপির সমর্থিত মিডিয়াগুলো সরকারকে একেবারে ধুয়ে মুছে দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াত বিরোধী মিডিয়াগুলোও সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলেছে। কিন্তু এরপরও যে প্রশ্নটা এখন উঠছে, এতে বিএনপির লাভ কী কিছু হয়েছে?
নির্বাচন বর্জনের পরও নয় লাখ ভোটার তাদের ভোট দিয়েছে। বিএনপি ভোট বিপ্লবের আহবান জানিয়েও এই ভোটারদের উপর আস্থা রাখতে পারেনি। আস্থা রাখতে পারেনি নিজেদের শক্তির উপরেও। বিএনপির পরাজয়ের কারণ কী, সরকারের দমন পীড়ন, নাকি নিজেদের উপর আস্থাহীনতা?
অপরাজনৈতিক কৌশল ও আত্মবিশ্বাসের দুর্বলতাই বিএনপি এ পরাজয়ের কারণ নয় কি?
মনোয়ার রুবেল: অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০১৫
জেডএম/