ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

রনির ইমতিহান, ইনসানিয়াত ও রিজ্জা প্রসঙ্গ

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬০১ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৫
রনির ইমতিহান, ইনসানিয়াত ও রিজ্জা প্রসঙ্গ গোলাম মাওলা রনি

টিভির আরেক নাম বোকা বাক্স। এই বাক্স যারা দেখেন তারা বোকা, যাদের দেখা যায় তারাও বোকা।

আমার ধারণা বোকা বাক্সে সবচেয়ে বেশী বোকা বাস করে টকশোজীবীদের মাঝে। এদের কিছু কিছু লোকের চলনে বলনে মনে হবে উনি এ বাংলার মস্তবড় পালোয়ান। জ্ঞানে গুণে বিদ্যায় যেন তিনিই অনন্য।

এদের কয়েকজনের শারীরিক ভাষা দেখে মনে হয়, অন্যরা তুচ্ছাতিতুচ্ছ। তারা টিভির পর্দায় সুন্দর-অসুন্দর কথা বলে বের হন আর ভাবেন, আহা আমি না থাকলে এই দেশের কি হতো। এদের বোকা বললাম এ জন্য এরা নিজেদের বড় কিছু ভাবছেন (তাদের ঘাড় বাকানো, তাকানো এগুলো একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন)। কিন্তু তারা যে বড় কিছু নন- এটা জনগণ বা তার চারপাশের লোকজন জানেন। সেই আতেল লোকটি কিন্তু জানেন না তিনি কেমন। তারা যে জানে না সেটা জেনে অন্যরা হাসাহাসি করে।

৩/৪জন টকশো মুখ এবার সিটি নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে। তাদের মধ্যে কেউই সম্ভবত জামানত নিয়ে বাসায় ফিরতে পারেন নি। একটি অখ্যাত অনলাইন পত্রিকায় দেখলাম এদের মধ্যে একজন তার জামানত ফেরত চেয়েছে! এসব টকশো মুখদের স্বপ্ন ছিল তারা সিটি মেয়র হবেন। ঢাকাকে সুন্দর নগরী করবেন। একেক জনের একেকটা আলাদা স্লোগান ছিল। শ্রুতিমধুর, দৃষ্টিনন্দন একেক প্রচারনা ছিল।

একজন তার ফেসবুকের একটি গ্রুপের ২/৩ লাখ লাইক-কে ভোট ভেবে আনন্দে খুশি হয়েছিলেন। নির্বাচন করতে হলে ফেসবুক লাইক এবং ভোটের পার্থক্য বুঝতে হয়। সেটা না বুঝে নির্বাচন করতে এলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করা হয়।

লাইক আর ভোটের পার্থক্য বুঝলেই হবে না, নিজের ওজনটাও বুঝতে হবে। কেউ যদি নির্বাচনে ৪/৫ হাজার ভোট পেয়ে জামানত হারিয়ে জামানত ফেরত চায় তার ওজন কত হতে পারে সেটা তাকেই বুঝতে হবে। সেটা নির্বাচনের আগে বুঝলে ভালো।

আরেকজন টকশো মুখ বাংলানিউজ কে বলেছেন- আমরা (টকশোজীবী) নটি বা নটরাজ। তিনিও জামানত হারিয়ে তিনিও নিজের সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। আসলেই কিন্তু তিনি এর বেশী নন। টকশোজীবীদের মানুষ বিশেষ কিছু ভাবে না। পত্রিকায় লেখা খুব বড় কিছু নয়।   তার দুর্ভাগ্য এই যে তিনি সেটা নির্বাচনের আগে বোঝেন নি। বুঝলে তারও জামানতের টাকা বেছে যেত।

১ হাজার ৮৬১ ভোট পেয়ে তিনি গালাগাল করেছেন ঢাকার লোকদের। বলেছে-‘আমাদের জনগণ যে রকম বজ্জাত সে রকম নেতাই নির্বাচিত হয়েছে’। ভাবতে অবাক লাগে এই লোকটাই দু দিন আগে বজ্জাত জনগণের পায়ে পায়ে ঘুরেছে ভোটের জন্য। এখন ভোট না পেয়ে জনগণকে গালিগালাজ করছে। তার এসব বক্তব্য চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ। জনগণের সাথে রীতিমতো বেয়াদবির সমতুল্য।

ইনার নাম গোলাম মাওলা রনি। টিভিতে কথা বলেন। গলাচিপায় কোন এক সময় আওয়ামী লীগের এমপি ছিলেন। জনশ্রুতি আছে ওয়ান ইলাভেনের সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতাকে টাকা ধার দিয়ে আনুকূল্য নেন। পরে নমিনেশন পেয়ে এমপি হন। যদিও এসব কথার কোন তথ্য বা প্রমাণ আমাদের কাছে নেই। পরে সাংবাদিক পিটিয়ে জেল খেটেছেন। এরপর আর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। তিনি তার এলাকায় সংবাদকর্মী পেটানোর জন্য কুখ্যাতি অর্জন করেন। থানার ওসির গায়ে হাত তুলেছেন।

তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধমনা একজন ব্যক্তি। যুদ্ধপরাধের বিচার চলকালীন নানা সময়ে জামায়াতের পক্ষে নানা কথা বলেছেন। তার গায়ে যেহেতু আওয়ামী লীগের ট্যাগ লাগানো আছে, তার কথা বাশেরকেল্লা গোষ্ঠী খুব গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করতো। এভাবেই মি. রনি আলোচনায় আছেন। রনি একসময় লিখেন, এই কাদের মোল্লা সেই কাদের মোল্লা নয়। কাদের মোল্লার জন্য কান্নাকাটিও করেছেন তার লেখায়।

কাদের মোল্লার ফাসি কার্যকর করার পর পাকিস্তান সরকার এই কাদের মোল্লার জন্য বিবৃতি দিলেও রনিকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। রনি তার পূর্বোক্ত মিথ্যা কথার জন্য জন্য অনুশোচনাও করে নি।   সাঈদীর রায়ের পর তিনি সাঈদীর ইমতিহান, ইনসানিয়াত ও রিজ্জা প্রসঙ্গে শিরোনামে এক লেখা লেখেন।

তিনি সেখানে অন্যতম যুদ্ধাপরাধী সাঈদী আল্লাহ পাকের অপূর্ব সৃষ্টি বলে তার কীর্তন গেয়েছেন। সাঈদীর বয়ান শুনলে তার চোখে জল চলে  আসে, সাঈদীর সভায় যত লোক পৃথিবীর ইতিহাসে এতো লোক হওয়ার নজির নাই ইত্যাদি ইত্যকার কথাবার্তা লেখেন।

এতো কিছুর পরও তাকে মিডিয়া বা তরুনপ্রজন্ম খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কেননা, রনি অল্প বয়স্ক ও অপরিপক্ক (ই্ম্যাচিউর) রাজনৈতিক কর্মী। তার অপরিপক্কতা সম্পর্কে তিনি ছাড়া অন্যরা সবাই অবগত। সেজন্য তার এসব কথা অনলাইনে দু একজন হাসাহাসি করা ছাড়া অন্যরা প্রতিবাদ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করে না। রনি নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে নির্বাচনে দাড়িয়েছেন। টকশো করে তার ধারণা হয়েছিল, তিনি খুব পপুলার নেতা হয়েছেন।

কিন্তু জনগণ সব বোঝে। ঢাকার জনগণ আরেকটু বেশী বোঝে। ঢাকার মানুষ শিক্ষিত। তারা প্রার্থীর ভালো মন্দ চিন্তা করেন, অতীত বর্তমান চিন্তা করেন, ব্যক্তিত্ব চিন্তা করে ভোট দেন। তারা ভাষায় জনগণ বজ্জাত। এই বজ্জাত জনগণ বজ্জাত লোক চেনে। তারা যখনি চিনে ফেলে এই লোক বজ্জাত, তখুনি বজ্জাত লোক এড়িয়ে চলে। এজন্য গোলাম মাওলা রনিরা ভোট পান না। ১৮৬১ ভোট পেয়ে জামানত হারান।
•    মনোয়ার রুবেল; অনলাইন এক্টিভিস্ট ও কলামিস্ট, ইমেইল: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫৮ ঘণ্টা, মে ০১, ২০১৫
এনএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।