আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের এ সফর দুই বন্ধুদেশের মধ্যকার যোগাযোগ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থা হিংসুটে ভাইবোনদের মতো। এ ওকে মারছে, সে তাকে মারছে। চারদিকে বিশৃঙ্খল পরিবেশ একেবারে। এর মধ্যেই ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যতবার নষ্ট হয়, ততবার সেই সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে বাকি রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ওঠানামা করে।
বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশের সম্পর্কে আমাদের আবেগ কাজ করবে, এটা নিয়ে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু পূর্ব বঙ্গের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সুগম করার ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যদি জোর দেন, তাহলে অবশ্যই খুশি হবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
একজন ভারতীয় বাংলাদেশ যাবার জন্য যত সহজে ভিসা পান, আমি আমার বাংলাদেশের বন্ধুদের কাছে শুনেছি, ভারতে আসার ভিসা ততটা সহজলভ্য নয়। আমি চাইব, এ ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিছু ভালো পদক্ষেপ নেবেন। সব থেকে খুশি হব যদি পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের জন্য বাংলাদেশে ভিসা অন অ্যারাইভাল ব্যবস্থা চালু হয় (এবং ভাইস ভার্সা)।
ব্যক্তিগতভাবে আমার বরাবর মনে হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যতটা ভাল হবার দরকার ছিল, ততটা ভাল হয়ে উঠতে পারেনি। আরেক পা এগিয়ে বলতে পারি, আমার সত্যি মনে হয়েছে, বড়দা হিসেবে ভারতের যে কর্তব্য পালন করা উচিত ছিল সেটা ভারত করেনি। সেটা তিস্তা জল বণ্টন চুক্তিই হোক কিংবা বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য আরও সুযোগ-সুবিধা তৈরি করা।
এই মুহূর্তে অনুপ্রবেশ একটি বড় সমস্যা। কেন হচ্ছে, কী এই সমস্যার মূল এবং অকারণে সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ করার ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী সহৃদয়তার সঙ্গে দেখবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।
আজকে বাংলাদেশের নাগরিকদের যে রাগটা রয়েছে ভারতের উপর, তার যে সঙ্গত কারণ রয়েছে, এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, কর্মসংস্থান তৈরি করা ইত্যাদি কাজগুলো আরও অনেক ভালোভাবে করা যায় বলেই আমি মনে করি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা রয়েছে, যেটা ভারতের নিরাপত্তার দিক থেকে যথেষ্ট ভয়ের ব্যাপার। মৌলবাদী শক্তি যথেষ্ট সক্রিয়, জামায়াত থেকে শুরু করে আইএস সব কিছুরই সক্রিয়তা বাংলাদেশে রয়েছে (ভারতেও রয়েছে, এটাও ঠিক)।
কূটনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখতে গেলে, ভারতের সব সময় উচিত বাংলাদেশকে বন্ধু হিসেবে সব রকম সহায়তা করা। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রনেতাদের কাছে উপমহাদেশের শান্তি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দু’দেশেই ছুটকো-ছাটকা সমস্যা সব সময় লেগেই থাকে। কাজেই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারটাও দুইদেশের রাষ্ট্রনেতাদের মাথাব্যথার কারণ হওয়া উচিত। আশা করব, এ বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করে নেবেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির কাছে চ্যালেঞ্জ, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মন জয় করে নেওয়া। সেইসঙ্গে অবশ্যই আমি চাইব, ভারত যত রকমভাবে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে পারে সেটা তারা করুক। নেপাল, ভুটানকে যেভাবে নরেন্দ্র মোদি তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশ যেন কোনোমতেই তা থেকে বঞ্চিত না হয়।
আর বাংলাদেশের গান, বই ইত্যাদি ভালোবাসার সুবাদে চাইব, অবশ্যই যেন আমরা বাংলাদেশের চ্যানেলগুলো দেখতে পারি এবং ওই দেশের বইপত্র, সিনেমা যেন দেখতে পারি সেটার ব্যবস্থা করা হোক। সিনেমা, গান ও বইয়ের বাজার আরও অনেক বেশি করে উন্মুক্ত হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের কেন মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর সিনেমা ইউটিউবে দেখতে হবে! কেন আমরা চ্যানেল আই দেখতে পাই না, এ বিষয়ে বহুদিন ধরে আমার ক্ষোভ রয়েছে।
অনেকের মতো আমারও প্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম, প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, প্রিয় গায়ক অর্ণব। এত কষ্ট করে কেন এসব আমাদের পেতে হবে? বাংলাদেশে যদি স্টার জলসা যেতে পারে, এদেশে কেন চ্যানেল আই আসবে না? কে বলেছে দেখব না আমরা?
হুমায়ূন আহমেদের বহুব্রীহি যখন বিটিভিতে প্রচারিত হতো তখন আমরা গভীর আগ্রহে সেগুলো দেখতাম। আজ যত দিন যাচ্ছে আমরা দুইদেশ যেন তত দূরে চলে যাচ্ছি। সেটা ক্রিকেটই হোক কিংবা অন্য কোনো অজুহাত, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যে পরিমাণ সক্রিয় হয়ে পড়েছে, তাদের হটাতে দু’দেশের শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন কূটনীতিকদের এক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে এবং সেটা যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত ভাল।
বাংলাভাষা যে দেশের মাতৃভাষা, সে দেশ যেন সব সময় মাথা উঁচু করে থাকতে পারে, আন্তরিকভাবে সেই কামনাই করব।
অভীক দত্ত
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার
সম্পাদক, আদরের নৌকা (সাহিত্য পত্রিকা ও ওয়েবজিন), পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এসএস
** মোদির বাংলাদেশ সফর: কিছু ভাবনা | পরিচয় পাত্র
মুক্তমত
মোদির দেশের মুক্তমত
মোদির বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় হিসেবে আশা | অভীক দত্ত
মুক্তবিশ্লেষণ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।