ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম বাংলাদেশ সফর। তাই কি কি বিষয় থাকছে এই ৩৬ ঘণ্টার সফরে তা এরই মধ্যে দু'দেশের গণমাধ্যমে অনেকটাই জায়গা দখল করে চলেছে।
দেশীয় দু’একটি গণমাধ্যম হঠাৎ ফলাও করে প্রচার করতে লাগলো যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তাচুক্তি হচ্ছে না! ব্রেকিং নিউজ আকারে তা প্রচারিত হতে থাকলো। মোদির এ সফরে তিস্তাচুক্তি হচ্ছে এ কথাটি কে বলেছে? ভারত নাকি বাংলাদেশ সরকার? কেউই বলে নাই।
যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বাংলাদেশ সফরেই পরিস্কার হওয়া গেছে যে, শিগগিরই তিস্তাচুক্তি হচ্ছে না।
২০১১ সালে তিস্তাচুক্তির একটি খসড়া তৈরি হয়েছিল। ২০১২ সালে তার ভিত্তিতেই চুক্তি সই করতে চেয়েছিলেন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। মমতার আপত্তিতে যা আর বাস্তব রূপ লাভ করতে পারেনি। এর সবই এখন ইতিহাস। এরই মধ্যে তিস্তা দিয়ে অনেক পানি বয়ে গেছে।
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সফরে মমতা একাধিকবার বলেছেন, একটি যখন (স্থলসীমান্ত চুক্তি) হচ্ছে, তখন আরেকটিও (তিস্তাচুক্তি) হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিশদ আলোচনায় তিনি বলেছিলেন, তিস্তাচুক্তির বিরোধী তিনি নন। এক্ষেত্রে তিনি তিস্তার বিভিন্ন পয়েন্টে নতুন করে কি পরিমাণ পানিপ্রবাহ হচ্ছে তার সমীক্ষার ওপর জোর দেন। সেই সমীক্ষার কাজটি শেষ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গ কি পরিমাণ পানি পাবে তার ভিত্তিতে নতুন করে বণ্টন চুক্তি করার পক্ষে মমতা ব্যানার্জি। এক্ষেত্রে দু’দেশের বিশেষজ্ঞরাই বলছেন, কাজটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ।
শুধু তিস্তা কেন, বাংলাদেশ তো বাকি ৫২টি নদীর পানি বণ্টন চুক্তির পক্ষেও সওয়াল করছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫৪টি অভিন্ন নদী রয়েছে। যার মধ্যে গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন হয়েছে। তিস্তার পাশাপাশি ফেনী নদীর পানি চুক্তিও অনেক দূর এগিয়েছিল।
মূলত: স্থলসীমান্ত চুক্তি সই করতে ঢাকা আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। স্থলসীমান্ত চুক্তি কোনো ছোট বিষয় নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় পদ্ধতিতে চলা বহু রাজ্যের আপত্তিকে পাশে ঠেলে ভারতকে এ চুক্তি রাজ্যসভা ও লোকসভায় পাস করাতে হয়েছে। এ চুক্তির মধ্য দিয়ে শুধু জমির দেনা-পাওনাই শোধ হয়নি। মানবতারও জয় হয়েছে। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে পরিচয়হীন কয়েক লাখ মানুষ তার পছন্দের দেশ পেয়েছেন, মানচিত্র পেয়েছেন, মানবাধিকারের স্বীকৃতি পেয়েছেন।
আবার একটি চুক্তি সই করতেই ঢাকা আসছেন মোদি তাও নয়। বাংলাদেশের মানুষের ভোগান্তির অন্যতম বিষয় ভারতের ভিসা প্রাপ্তি। সে বিষয়েও আনন্দের খবর নিয়ে আসবেন তিনি। বহুদিনের প্রত্যাশিত অন অ্যারাইভাল ভিসার ঘোষণা দিতে পারেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্রেডিটলাইন বাংলাদেশের জন্য এই সফরে ঘোষণা করবেন নরেন্দ্র মোদি। এখন দেখার বিষয় এই দুই বিলিয়নের মধ্যে কতোটুকু অনুদান থাকছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় বাংলাদেশের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতেও আগ্রহী ভারত। বিপন্ন সুন্দরবনকে রক্ষায় একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের সম্ভাবনা খুবই বেশি। এটিও বাংলাদেশের জন্য নি:সন্দেহে ভালো খবর।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকার ইস্যু। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তার অবস্থান গত কয়েক বছর ধরে পরিস্কার করে আসছে। ২০১১ সালের খসড়া চুক্তির চূড়ান্ত রুপ পেতে আরো কিছুটা পথ বাংলাদেশকে হাঁটতে হবে। তবে দু’পক্ষই বাস্তবতা উপলব্ধি করায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্ত কোনো বাধা নেই বললেই চলে।
ভারতের প্রথম সারিরর গণমাধ্যমের সহকর্মীদের মতে, অনেক বিষয়ের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানি বণ্টনের বিষয়টিও মোদির এ সফরে আলোচনায় থাকছে। অদূর ভবিষ্যতে চুক্তি সই করতে এ সফর আরো এক ধাপ এগিয়ে নেবে বলে মনে করেন তারা।
মোদির এ সফরে তিস্তাচুক্তি হবে, এমন কোনো আলোচনা এখন পর্যন্ত দু’পক্ষে হয় নাই। ফলে বাংলাদেশের কোনো কোনো সহকর্মী যেভাবে ফলাও করে বলছেন, মোদির সফরে তিস্তাচুক্তি হচ্ছে, হচ্ছে না এটি দুর্বল সাংবাদিকতা ছাড়া আর কিছু নয়।
দীপ আজাদ: সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ১১২৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
এএসআর