চিহ্নিত ও আদালতে প্রমাণিত যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার শিরোমণি গোলাম আজমের পুত্র আব্দুল্লাহহিল আমান আজমী, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশকে সাহায্য করা প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতীয় সেনাবাহিনীর তৎকালীন কতো জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছিলো, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
তার মতে, চার হাজার ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার তথ্য আসলে একটি “তত্ত্ব” ছাড়া কিছুই না! এতো সেনা সদস্য কোনভাবেই নিহত হতে পারে না।
তিনি শুধু এটি বলেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বলেছেন- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে “তিন মিলিয়ন শহীদ’ হওয়ার বিষয়টিও একটি কাল্পনিক সংখ্যা!
এই কথাটি এমন একজন ব্যক্তি বলেছেন যার বাবা জামায়াতে ইসলামীর প্রধান ছিলেন। এই জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের সময় চায়নি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক।
শুধু তাই নয়, পাকিস্তানি বাহিনীর সহায়তায় গোলাম আজমের নেতৃত্বে এই দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে লক্ষ লক্ষ ম্যা-বোনকে, হাজার হাজার বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে; যার প্রমাণ আজও এই বাংলাতে বিদ্যমান।
আক্ষেপের বিষয় হচ্ছে, যে মানুষটি বাংলাদেশ স্বাধীন হোক চায়নি, তার ছেলে এই স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বিএনপি ও নানান সময়ে সেনা শাসকরা এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী, স্বাধীনতা বিরোধীদের পুনর্বাসন করেছেন। গোলাম পুত্র আজমী হচ্ছেন এদেরই ফসল।
তিনি এমন এক সময় ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হওয়ার সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এ থেকেই প্রতীয়মান হয়, শুধু বাবা গোলাম আজমই না, তার অতি সুযোগ্য পুত্র আজমীও মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর বাংলাদেশকে সহায়তার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না। যারা বাংলাদেশ চায়নি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না; কেবল তারাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে পারে, ভারতীয় বাহিনীর সহায়তাকে বাঁকা চোখে দেখতে পারে।
আজমী প্রায়ই বলে থাকেন, জামায়াতে ইসলামীর সাথে তিনি সরাসরি যুক্ত নন, তিনি রাজনীতি করেন না ইত্যাদি, ইত্যাদি। তবে তার চিন্তা চেতনা, কথাবার্তা থেকে শুরু করে চলনে কিন্তু ঠিকই বুঝা যায়, তিনি কাদের হয়ে সাফাই গাইছেন।
বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী যে পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীরই একটি শাখা দল সেটি তো কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরই বুঝা গেছে। পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামী কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর শুধু প্রতিবাদই করেনি, সেই দেশের সংসদে শোক প্রস্তাব এনেছিলো এই বলে- কাদের মোল্লা একজন পাকিস্তান ভক্ত ও আজীবন পাকিস্তানের হয়ে কাজ করে গেছেন।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে- পাকিস্তান সংসদে এই শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ থেকেই বুঝা যায়, পাকিস্তান রাষ্ট্রটি এতো দিন পরেও ’৭১ এ তাদের ভূমিকা থেকে সরে আসেনি।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যদি ভালো হয় তাহলে তাদেরই গা জ্বলতে পারে যারা পাকিস্তানের দালাল। তাই প্রশ্ন তো করাই যায়, গোলাম পুত্র আজমী তাহলে পাকিস্তানের কিংবা সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএইয়ের গোলামী করছেন কি!
আমিনুল ইসলাম: শিক্ষক ও গবেষক, [email protected]
বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৫
জেডএম