আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের এ সফর দুই বন্ধুদেশের মধ্যকার যোগাযোগ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নিয়ে ১শ’ কোটির বেশি ভারতীয়ের মধ্যে ৯০ ভাগের কোনো মাথাব্যথা নেই। এটা বাস্তব অবস্থান। বাংলাদেশ প্রতিবেশী রাষ্ট্র, তার সঙ্গে বিরোধ নয় সখ্যতা দরকার, এটা ভারতের মিডিয়া বোঝে। আর বোঝে পশ্চিমবঙ্গের নয়কোটি আবেগপ্রবণ বাঙালি। মানে, ভারতের সাত দশমিক পাঁচ (৭.৫) শতাংশ মানুষ।
অসমের বোঝাটা অন্যরকম, সেখানে বাংলাদেশ একটি ‘অসম-বিরোধী’ রাষ্ট্র, যার কারণে তাদের অর্থনৈতিক, সামজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কটের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। কেননা, ওই রাজ্যে বাংলাদেশের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। এটা রুখতে বাংলাদেশের প্রচ্ছন্ন অনীহা দায়ী, এমনটাই মনে করেন অসমীয়ারা। এই প্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যৌথ সফরের গতিপ্রকৃতি অনুমান করা যায়।
অর্থাৎ, এই সফরে মোদির লক্ষ্য হবে সখ্য গড়ে তোলা আর মমতার লক্ষ্য হবে ঘরে-বাইরে নিজের ইমেজটাকে টানটান রাখা। মমতার সমর্থন ছাড়া ছিটমহল চুক্তিই হোক বা তিস্তা, কোনোটাই কেউ যে সম্পন্ন করতে পারবে না, মোদির সঙ্গে মমতার সফর তা স্পষ্ট করবে। এতে ঘরে মমতা নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে পারবেন।
মমতা ইতোমধ্যেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছ থেকে কথা আদায় করেছেন, এই সফরে তিস্তা নিয়ে মোদি বাংলাদেশে প্রকাশ্যে কোনো কিছু বলবেন না। ছিটমহল চুক্তি নিয়ে ঢাকায় এসে ঢাকঢোল পেটানোর আর কোনো মানে নেই। কেননা, মমতার ঢাকা সফর শেষেই ভারতীয় পার্লামেন্টে ছিটমহল চুক্তি অনুমোদন পেয়েই রয়েছে। ত্রিপুরা সীমান্তে দু’দেশের যৌথ হাট নিয়ে সিদ্ধান্ত তো আগেই করা।
বিশ্বের অন্যান্য কয়েকটি দেশ সফরের সময় সেই দেশের মানুষের ভারত সফরে যেসব ছাড় ঘোষণা করা হয়েছে, বাংলাদেশের বেলায় তেমনটা খুব জোর ভারতীয় ভিসা অফিসের কড়াকড়ি আলগা করার কথা তিনি বলতে পারেন। বাংলাদেশিরা অবশ্য ভালোই জানেন, নিয়মের কড়াকড়ির জন্য নয়, ভিসা অফিসের পরোক্ষ দূর্নীতির কারণেই বাংলাদেশিদের ভুগতে হয় বেশি।
এসব কারণে, ভারতে মোদির বাংলাদেশ সফর নিয়ে হইচই নজরে পড়ছে না তেমন। তবে মোদি-মমতার এই যৌথ সফর ভারতের বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গের আভ্যন্তরীণ রাজনীতির পাশা উল্টে দিচ্ছে। মোদি ও মমতার বাগবিতণ্ডা কিছুদিন আগেও ছিল কিংবদন্তির পর্যায়ে। মোদিকে কোমরে দড়ি বেঁধে জেলে ঢোকাবেন, এমন কথা বলেছিলেন মমতা।
মোদি প্রধানমন্ত্রী হবার পর মমতা কোনো সৌজন্য বার্তাও পাঠাননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়মমাফিক বৈঠকেও যাননি। কাকতালীয় হলেও সারদা কেলেঙ্কারিতে তৃণমূল নেতাদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় এসব হিসাব পাল্টে গেছে। তৃণমূলকে কোণঠাসা করতে কেন্দ্র সিবিআই-কে ব্যবহার করছে, তৃণমূলের এ অভিযোগে অনেকেই সারবত্তা খুঁজে পাচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে মোদি-মমতার যৌথ বাংলাদেশ সফর কতটা আন্তর্জাতিক আর কতটা ঘরোয়া রাজনীতির কূটচাল, সেটাও অনেককে ভাবাচ্ছে। মোদির সঙ্গে বাংলাদেশে যাওয়ায় মমতার স্বার্থ স্পষ্ট। মোদির স্বার্থটাও অস্পষ্ট নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সখ্য মজবুত না করলে, মৌলবাদীদের হিংস্র থাবা যে ভারতের উন্নয়নে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, তা ভারত জানে। আবেগপ্রবণ বাঙালিরা যে ছোট ছোট ইচ্ছাপূরণেই সন্তুষ্ট থাকেন, তাও ভারতের জানা।
আমার মনে হয়, সেই ইচ্ছাপূরণে মোদি কিছু উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করবেন। অন্যদিকে, সেটা যদি অপূর্ণ থাকে তার দায় ঠারেঠুরে মমতার ঘাড়ে চাপাবার সম্ভাবনাও থেকে গেল। মোদি একা গেলে এই সফরের যে অভিমুখ তৈরি হতো, অবশ্যই মমতার উপস্থিতিতে সেই অভিমুখ বহুমুখী হবার সম্ভাবনা অল্প নয় বলে মনে হয়।
অরুণ চক্রবর্তী
সম্পাদক, ন্যাশনাল বুক ট্রাস্ট, ভারত
আনন্দবাজার পত্রিকার প্রাক্তন সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৩ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৫
এসএস
** মোদির বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় হিসেবে আশা | অভীক দত্ত
** মোদির বাংলাদেশ সফর: কিছু ভাবনা | পরিচয় পাত্র
মুক্তমত
মোদির দেশের মুক্তমত
মোদি-মমতার যৌথ সফর | অরুণ চক্রবর্তী
মুক্তবিশ্লেষণ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।