আগামী ৬ জুন বাংলাদেশ সফরে আসছেন প্রতিবেশী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দু’দিনের এ সফর দুই বন্ধুদেশের মধ্যকার যোগাযোগ, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শেষ পর্যন্ত আগামী ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর হতে চলছে। সঙ্গী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। যদিও মমতা বন্দোপাধ্যায় প্রথম দিকে এই সফরসঙ্গী হতে প্রায় গররাজি হয়েই পড়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোদির মধ্যস্থতায় বরফ গলেছে এবং মমতা বন্দোপাধ্যায় রাজি হয়েছেন। একজন ভারতবাসী হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবারকার বাংলাদেশ সফর সম্পর্কে অত্যন্ত আশাবাদী এবং সফরের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করি।
সফর সম্পর্কে মোদি নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক রাজ্য। এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে ঢাকা যাওয়ার জন্য তিনি শুরু থেকেই অনুরোধ জানিয়ে আসছেন; যা এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনোমোহন সিংহের বেলায় হয়নি। ফলে মমতা বন্দোপাধ্যায় সেই সময়কার চুক্তিকে কোনোরকম ভাবেই মেনে নিতে পারেননি। সমস্যা সমস্যাই থেকে গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গবাসী হিসেবে আমি কিন্তু প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সমস্ত রকম চুক্তির ব্যাপারে ইতিবাচক সমাধানের আশা রাখি।
এক সময় প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা ছিলো এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তারপর দীর্ঘদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। প্রায় ৪৩ বছর অতিক্রান্ত, কিন্তু বাংলাদেশের বেশ কিছু সমস্যা এখনও ‘ন যৌবন তথৌ’ হয়ে ঝুলে রয়েছে। সীমান্ত কাঁটাতার সমস্যা তো আছেই, তার সঙ্গে রয়েছে তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি। এই জলবণ্টন ব্যাপারটিই কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের জনসাধারণ এ ব্যাপারে ভীষণ আশা নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ অপেক্ষায় রয়েছেন। সমাধান হতে গিয়েও কোথায় যেন বারবার ধাক্কা খাচ্ছে।
আশা করি এবারে হয়তো একটা ইতিবাচক সমাধান সূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যে কথাবার্তা হয়েছে তাতে দীর্ঘদিনের এই সমস্ত সমস্যার জট খোলার একটা সবুজ সংকেত দেখা যাচ্ছে। মনোমোহন সিংহের সময়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি কোনোরকম গুরুত্ব দেননি। চুক্তি হয়েছিলো একতরফা। ফলে মমতা বন্দোপাধ্যায় তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু এ যাত্রায় তা হয়নি। বরং প্রধানমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কখনও সংসদে কখনওবা রাজভবনে সফর করতে এসে আলোচনা হয়েছে। সেদিক থেকে এবারের সফর ও চুক্তি সম্পাদনের দিকটি যথেষ্ট ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে করি।
আমরাও চাই তাই হোক। বাংলাদেশের জনগণ তাদের চাহিদামতো জল পাক। তাদের সমস্যার সমাধান হোক। সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তিও সুন্দরভাবে ফলপ্রসূ হোক। এ ব্যাপারে অবশ্য মমতা বন্দোপাধ্যায় ইতোমধ্যে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া, মুখ্যমন্ত্রী সব সময়েই তিস্তা জলবণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা নিয়ে ইতিবাচক কথাই বলার চেষ্টা করেছেন। তিনিও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণে সহানুভূতিশীল। তবে চুক্তি স্বাক্ষর করার আগে পর্যন্ত তো নানারকম আভ্যন্তরীণ সমস্যার কথাও ভাবতে হয়। তিনি সেই ব্যাপারেই যে কিছুটা সময় নেবার চেষ্টা করবেন সেটা তো অস্বীকার করা যায় না।
তা হোক। শেষ পর্যন্ত আমরা চাই এই সফর হোক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা জনগণের পক্ষে এক ঐতিহাসিক ইতিবাচক সফর। বাংলাদেশের জনগণ ফিরে পাক তাদের দীর্ঘদিনের আশা পূরণের সবুজ সংকেত। দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ও জলবণ্টনের ব্যাপারে গড়ে উঠুক এক স্থায়ী চুক্তি। বিশ্বের কাছ এই সফর হয়ে উঠুক এক আদর্শ দৃষ্টান্ত।
নৃপেন চক্রবর্তী
কবি ও শিক্ষক
কলকাতা, ভারত।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৫
এমজেড/এএ
** সফর যেন আমাদের না বদলায় | সরোজ দরবার
** মোদি-মমতার যৌথ সফর | অরুণ চক্রবর্তী
** মোদির বাংলাদেশ সফরে ভারতীয় হিসেবে আশা | অভীক দত্ত
** মোদির বাংলাদেশ সফর: কিছু ভাবনা | পরিচয় পাত্র
** অনেক কিছুই পাওয়ার আশা | ড. অমিতাভ চক্রবর্তী
মুক্তমত
মোদির দেশের মুক্তমত
মোদির বাংলাদেশ সফর হোক বিশ্বের দৃষ্টান্ত | নৃপেন চক্রবর্তী
মুক্তবিশ্লেষণ/মুক্তমত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।