শ্রীমঙ্গল: ১৯৩৮ সালে প্রকাশিত ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থর মুখবন্ধ লিখেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর এর ভূয়ষী প্রশংসা করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরও।
বলছি ‘সাঁঝের মায়া’ কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা সুফিয়া কামালের কথা। জীবনের প্রথম এ কাব্যগ্রন্থ ঘিরেই কবির যত স্বপ্নের ফোয়ারা! লেখনির নিভৃত তাগিদ। প্রতিকূলতা পেরিয়ে আর মানুষের পাশে এসে দাঁড়াবার দায়বদ্ধতা।
হ্যাঁ তাই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলেন তিনি মানুষের পাশেই। সব রকমের ভয়-ভীতি আর সংচোক দূর করে তিনি জাতীয় সংকটের মুহূর্তে চেতনার দীপ্ত শিখা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন মানুষ আর মানবতার পাশে।
অকুতোভয় এই মহিয়সী নারী সুফিয়া কামালের আজ ১০৫তম জন্মবার্ষিকী। ১৯১১ সালের এ দিনে তিনি বরিশালের শায়েস্তাবাদের মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে প্রথিতযশা কবি, লেখক এবং নারী অধিকার ও আন্দোলেন অন্যতম পথিকৃৎ।
১৯৬১ সালে যে বছর পাকিস্তান সরকার রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা ও প্রচার নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এর প্রতিবাদে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়লেন। সতীর্থদের নিয়ে শুরু করলেন আন্দোলন। ১৯৬৯ সালে তিনি মহিলা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন এবং গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে অসহযোগ আন্দোলনে নারীদের মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সুফিয়া কামালের কবিতা নিয়ে আমার রয়েছে শৈশব-স্মৃতি। সেই ছোটবেলায় আমার মা’র কণ্ঠ থেকে তার কয়েকটি কবিতার লাইন অনেক অনেকবার শুনেছিলাম। কী মধুর ছিল সেই দিনগুলোর শব্দপাঠ! এখনো স্মৃতির নিভৃত কক্ষে হানা দিলে মা’র সেই উচ্চারণগুলো খুঁজে পাই। ... 'জন্মেছি মাগো তোমার কোলেতে, মরি যেন এই দেশে । ...'
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে মায়া কাজল, মন ও জীবন, শান্তি ও প্রার্থনা, উদাত্ত পৃথিবী, কেয়ার কাঁটা, একাত্তরের ডায়েরি প্রভৃতি। তার এ অনবদ্য লেখনির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকসহ অর্ধশতাধিক পুরস্কারে তিনি ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালে বিশ নভেম্বর তিনি মারা যান।
বাংলা কবিতা ও সাহিত্য যতদিন আমাদের চেতনাকে উজ্জীবিত করবে ততদিন সুফিয়া কামালের কবিতার প্রতিটি লাইন আপন মহিমায় উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। সাঝের মায়ার এই কবিকে আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
বাংলাদেশ সময়: ১২২৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৫
এএ