ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বঙ্গবন্ধু স্মরণে | প্রণব মুখোপাধ্যায়

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
বঙ্গবন্ধু স্মরণে | প্রণব মুখোপাধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যয়

কবি অন্নদাশংকর রায়ের কবিতার অমর দুটি পঙ্ক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের অনুভূতিকে প্রগাঢ় ও চিরকালীন করে তুলেছে। কবি লিখেছিলেন_ 'যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার, শেখ মুজিবুর রহমান।

' সেই কীর্তিমানের প্রতি আজ শ্রদ্ধা নিবেদন সৌভাগ্য, গর্বের বিষয়।

মনে পড়ে, ১৯৪৯ সালের গোড়ার দিকে ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওয়াহেরলাল নেহরুর উক্তি_ 'যখন স্বাধীনতা দমিত হয়, ন্যায়বিচার উপেক্ষিত হয়, যখন আগ্রাসন নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়, তখন নীরব হয়ে থাকা যায় না। ' বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অন্যায়, অবিচার, বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সেই আকাঙ্ক্ষাকেই পূরণ করতে উদ্যোগী হন। বঙ্গবন্ধু সব বাধা-বিঘ্ন তুচ্ছ করে বঞ্চিত-অবহেলিত সাত কোটি বাঙালির স্বপ্নসাধ স্বাধীনতা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং বহু প্রত্যাশিত বাংলাদেশের গর্বিত জনমানসের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করেন। তখন নেহরুর আদর্শ-ভাবনায় উজ্জীবিত ভারতের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর দেশ গঠনে তরুণ নেতৃত্ব দূরদর্শী ভূমিকা পালন করেছিলেন। তা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও দর্শন অনুসরণের কারণে।

বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার প্রেরণার উৎসকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছিলেন_ একজন বাঙালি হিসেবে বাঙালি জাতিকে যা পীড়া দেয় তা আমাকেও ব্যথিত করে। কেবলমাত্র জাতির প্রতি প্রেম দ্বারাই পুষ্ট হয়ে সৃষ্টি করে অনুভূতি, যা আমার রাজনৈতিক দর্শনকে সমৃদ্ধ করে এবং আমার অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে। '

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় এখনও আমার স্মৃতিতে অমলিন। তখন স্বাধীন বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র ও আকাশবাণীর মাধ্যমে প্রতিদিনই মুক্তিবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের বিবরণী আমাদের কাছে পেঁৗছাত। তখন আমার বয়স ৩৬। নবীন সাংসদ। বাংলাদেশের সেই মুক্তিযুদ্ধ আমার মনেও এক অদ্ভুত আবেগ সৃষ্টি করে। মনে পড়ে, ১৯৭১ সালের ১৫ জুন ভারতের সংসদের রাজ্যসভায় এক প্রস্তাব পেশ করে সুপারিশ করেছিলাম, মুজিবনগরে অবস্থিত নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারত সরকার যেন কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং স্বীকৃতি দেয়। তখন জনৈক সাংসদ জিজ্ঞাসা করেন, কীভাবে সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা যাবে। তখন বলেছিলাম_ এই সমাধান মানে রাজনৈতিক সমাধান।

তার অর্থ সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের রাজনৈতিক স্বীকৃতি। স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের স্বীকৃতির জন্য তখন বিভিন্ন দেশে সফর করেছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি কলকাতায় ছিলাম। ভোরবেলায় বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সংবাদ শুনে হতচকিত এবং শোকাহত হই। মনে হয়েছিল যেন স্বজন হারিয়েছি। নিকট বন্ধুকে হারিয়েছি। এটা কেবলমাত্র প্রতিবেশী এক রাষ্ট্রের সংকটই নয়, ব্যক্তিগত শোকের বিষয় ছিল সেদিন। বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেই বিয়োগান্ত পরিণতির শোক কাটিয়ে এখন সর্বব্যাপী উন্নয়নের যজ্ঞে ব্রতী। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বাংলাদেশের বিকাশযাত্রা নির্বিঘ্ন হোক। মহান নেতার প্রতি জানাই অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

প্রণব মুখোপাধ্যয়, ভারতের রাষ্ট্রপতি
 দৈনিক সমকালের সৌজন্যে

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।