প্রাথমিক শিক্ষা আমাদের শিক্ষার মূল স্তর। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরের লক্ষ্যে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই।
* শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা।
* শিক্ষক-অভিভাবকদের যৌথ প্রয়াসে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য গৃহীত উদ্যোগকে জোরদার করা।
* তৃণমূল পর্যায়ে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা।
* বিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকাণ্ডে অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করা।
* শিক্ষক-অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মূল্যায়ন করা।
* স্থানীয়ভাবে সমস্যার সমাধানকে উৎসাহিত করা।
* কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা।
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিন দশক পূর্বে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি গঠিত হয়েছিল বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই লক্ষ্য করা যায়। বর্তমানে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির কর্মকাণ্ড স্থিমিত এবং কিছু বিদ্যালয়ে এর অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
বিদ্যালয় এলাকায় জরিপ কাজ পরিচালনায় শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যরা খুব একটা মনোনিবেশ করেন না। বিদ্যালয়ের শিশুদের ঝরে পড়া রোধে তাদের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। স্কুল পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর ও আকর্ষণীয় করে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির ভূমিকা নেই বললেই চলে। বিদ্যালয়গৃহ মেরামত, বিদ্যালয়ের আঙ্গিনা পরিষ্কার রাখা এবং বিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে তাদেরকে এগিয়ে আসতে দেখা যায় না। শিশুদের মানবিক, ধর্মীয় ও সামাজিক সচেতনতাবোধ আনয়নের লক্ষ্যে তাদের প্রচেষ্টা কমই লক্ষ্য করা যায়। স্থানীয় এলাকাবাসির সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি মনোনিবেশ করে না। অভিভাবকগণ বাড়িতে যাতে লেখাপড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন সে বিষয়ে তাদের উৎসাহিত করার সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কাজে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে প্রয়োজনীয় সাহায্য করার কথা থাকলেও এক্ষেত্রে তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন না।
শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির একটি উল্লেখযোগ্য কাজ হলো শিশুদের বিদ্যালয় ত্যাগের কারণ অনুসন্ধান করে বিদ্যালয় ত্যাগ রোধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সমিতির সদস্যগণ বিষয়টি নিয়ে মোটেই ভাবেন না। এক্ষেত্রে অধিকাংশ শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যই মনে করেন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন সংক্রান্ত যাবতীয় দায়-দায়িত্ব সরকার এবং এসএমসির। স্থানীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা, জবাবদিহিতা এবং বিদ্যালয়ের সামাজিক মালিকানার ধারণা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করার কথা থাকলেও শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি বিষয়টি অনুধাবন করেন না। বিদ্যালয়ের প্রকৃত মালিক স্থানীয় জনগণ। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্যই এ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। কাজেই বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে জনগণের অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই।
বিদ্যালয়টির ব্যবস্থাপনার মূল দায়িত্ব স্থানীয় জনগণের। শিক্ষক-অভিভাবক সমিতির সদস্যদের মধ্যে বিদ্যালয়ের মালিকানাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয়া যেতে পারে। বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বিদ্যালয়ের সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা, শিশুদের উপস্থিতি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা, একটি দৃষ্টিনন্দন বিদ্যালয় গড়ে তুলতে স্থানীয় জনগণকে উৎসাহিত করা ইত্যাদি কাজে এসএমসির পাশাপাশি শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকেও কাজে লাগানো যেতে পারে। শিক্ষক এবং অভিভাবকদের মধ্যে সুসম্পর্ক ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিক্ষক-অভিভাবক সমিতি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে পারে। শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিশু ছাড়া বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। কাজেই PTA (Parent Teacher Association) বা শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দিয়ে তাদেরকে বিদ্যালয়ের কাজে আরো সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। প্রত্যেক অভিভাবকের জন্য বছরে অন্তত একবার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে; যেন তারা উপলব্ধি করতে পারেন বিদ্যালয়টি তাদের। হয়ত তারা একদিন থাকবেন না। কিন্তু তাদের বিদ্যালয়টি টিকে থাকলে তাদের সন্তানেরা লেখাপড়া শিখে বড় হবে; তারা দেশের সম্পদ হবে, দেশকে গড়ে তুলবে এবং একদিন উন্নত জাতি হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিত হবে। তাই আমরা মনে করি মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শিক্ষক-অভিভাবক সমিতিকে সক্রিয় করা একান্ত প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সোনাইমুড়ী, নোয়াখালী
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৫