ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

মরেও শান্তি দিল না সাকা-মুজাহিদ

শান্তনু চৌধুরী | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫
মরেও শান্তি দিল না সাকা-মুজাহিদ

ঢাকা: শেষ সময়ে এসেও থামছে না শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী সাকার পরিবারের মিথ্যাচার। যতোদিন সাকা বেঁচে ছিলেন ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকার,আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও বিচারকদের নিয়ে ক্রমাগত মিথ্যাচার আর ঔদ্ধত্য দেখিয়ে নানা কথা বলেছেন।

এমনকি কোনো কোনো পত্রিকার দেয়া তথ্য মতে, ফাঁসির মঞ্চে ওঠার সময়ও তিনি গালাগালি করেছেন সরকার আর ট্রাইব্যুনাল। যদিও কয়েকটি টিভি, পত্রিকা আর অনলাইন সহানুভূতি আদায়ের জন্য বলা হচ্ছে, ‘দোয়া-দরুদ পড়তে পড়তে ফাঁসির মঞ্চে উঠলেন সালাউদ্দিন কাদের ও আলী আহসান মুজাহিদ’।

এখন স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে এই যুদ্ধাপরাধীর পরিবার মিথ্যাচার করছে। যদি ইতিহাস এমন হতো, রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দিতেন (যদিও তা চিন্তার বাইরে) তাহলে কি প্রাণভিক্ষা নিয়ে মিথ্যাচার হতো? উত্তরটা সম্ভবত ‘না’। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেলো। ‘এক মাতবর গ্রামে খুব অত্যাচার করতো। অতিষ্ঠ সবাই। মৃত্যুর আগে তিনি অত্যাচারের কথা স্বীকার করে বললেন, তিনি মারা গেলে যাতে গোপনাঙ্গে বাঁশ ঢুকিয়ে তিন রাস্তার মাথায় টাঙানো হয় পাপের শাস্তি হিসেবে। যথারীতি তিনি মারা গেলেন আর গ্রামের লোকজন লাশ টাঙিয়ে রাখলো তিন রাস্তার মাথায়। পুলিশে খবর গেলো। এই ঘৃণ্য অপরাধের জন্য পুলিশ অনেক গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করলো। ’ অর্থাৎ ওই শয়তান লোক মরেও শান্তি দিল না। আমাদের অবস্থা এখন অনেকটাই তেমন। মরেও শান্তি দিল না সাকা-মুজাহিদ।

সরকারের আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে শুরু করে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা বলছেন, সাকা-মুজা ক্ষমা চেয়েছেন, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে সংবিধানের ৪৯ ধারা মোতাবেক আবেদন করেছেন। রাষ্ট্র এই ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে মিথ্যাচার করতে পারে না অন্তত এই অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে। এছাড়াও সরকার চাইছিল না সময়ক্ষেপণের কারণ এতে নিরাপত্তা ঝুঁকি হয়তো বাড়তো। এছাড়া অন্যান্য যুদ্ধাপরাধীর ক্ষমা প্রার্থনার কথাতো কখনো বলা হয়নি। কিন্তু সাকা চৌধুরীর পরিবার মিথ্যাচার করছে শুরু থেকে। রায় ফাঁসের মামলা রয়েছে পরিবারটির বিরুদ্ধে। তারা রায় ঠেকানোর হেন চেষ্টা নেই যা করেনি। সবশেষ বেছে নিয়েছে কালক্ষেপণ। সংবাদ সম্মেলনে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলছেন, তার বাবা ক্ষমা চাননি সেটাও যে নির্লজ্জ মিথ্যা তার প্রমাণ তিনি নিজে গিয়েছিলেন ক্ষমার আবেদন নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে। প্রথমে তিনি রাষ্ট্রপতিকে অভিভাবক মেনে সেখানে যাওয়ার কথা বললেও পরে তিনি বলেছেন, রিট্রায়াল এর আবেদন নিয়ে গিয়েছেন। (সর্বোচ্চ রায়ের পর এ ধরনের আবেদনের কথা বলা হাস্যকর) কিন্তু সেখান থেকে তাকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এই কারণে যে, রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন পৌঁছাতে হলে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আসতে হয়। আর একথা ঠিক যে, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করা হলেও সাজা কার্যকরে কোনো বাধাতো ছিল না। তাহলে কেন এই মিথ্যাচার? কারণ শুধু পরিবার নয়, এর সঙ্গে জড়িত  দুটি দলের ভাবমূর্তি ও ভবিষ্যৎ। বিএনপি যুদ্ধাপরাধীর রক্ষক আর জামায়াত যুদ্ধাপরাধী সংগঠন। এই ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেছে, যে মুজাহিদ দম্ভোক্তি করে বলেছিল, দেশে কোনো রাজাকার নেই। তা ভুল প্রমাণ হয়েছে। আর সাকার দম্ভোক্তির আর মানুষকে হেয় করে কথা বলারতো শেষ ছিল না।   মুজাহিদের ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে জামায়াত যে যুদ্ধাপরাধীদের দল তা জোর প্রমাণ হলো। এর ফলে দলটিকে নিষিদ্ধ করার যে দাবি উঠছে তা আরো জোরালো হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ ব্যক্তির পাশাপাশি দলেরও অপরাধ। কারণ এই কুখ্যাত ব্যক্তিরা যখন যুদ্ধাপরাধ করেছিলেন তারা কোনো না কোনো দলের আশ্রয় প্রশ্রয়ে থেকে করেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের আগে বা পরে অপরাধীর দল নিষিদ্ধ ঘোষণার নজিরও রয়েছে। যদিও আমাদের দেশে এখনো করা হয়নি। অবশ্য সরকারি দলের লোকজন বলছেন, আগামী মার্চের মধ্যেই জামায়াত নিষিদ্ধ হবে।

যুদ্ধাপরাধের বিচার ও ফাঁসি নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়া এমন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত ছিল মনে হবে, তারা সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছিল। কিন্তু একথা ভুলে গেলে চলবে না, যুদ্ধপরাধীরা এমন সব জঘন্য কাণ্ড ঘটিয়েছিল সেখানে নির্দোষ ব্যক্তির আত্মচিৎকারে তাদের হৃদয়ে একটুও সহানুভূতি জাগেনি। আর আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি বা ইতিহাস জানতে চেষ্টা করিনি আমরা হয়তো বুঝতেও পারবো না সে দংশনের কষ্ট। তাছাড়া সাকা-মুজা থেকে শুরু করে ফাঁসি হওয়া যুদ্ধাপরাধীর পরিবারতো অন্তত তাদের স্বজনদের লাশ ফিরে পেয়েছে, জানাজা পড়ে কবর দিতে পেরেছে কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে স্বজনহারা এমন অনেকে আছেন যারা স্বজন আর ফিরবে না জেনেও চুয়াল্লিশ বছর ধরে প্রতীক্ষায় রয়েছেন।  

শান্তনু চৌধুরী : যুগ্ম বার্তা সম্পাদক, সময় টেলিভিশন।
  [email protected]                 


বাংলাদেশ সময়: ১৫৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।