ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না

মো. রবিউল হাসান আলম, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৬
স্বাধীনতার জন্য আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না

চলতি পথে একটা কথা কিছু মানুষের মুখে প্রায়ই শোনা যায়, আপনি ঢাকা শহরের যানজটে দীর্ঘক্ষণ আটকে আছেন তখনই এই কথাটি বেশি শুনতে পাবেন ‘পাকিস্তান আমলই ভালো ছিল’। আবার হয়তবা আপনি ট্রেনে ভ্রমণ করছেন, কিছুক্ষণের জন্য ট্রেনটি থেমে গেলো।

ঠিক ওই সময় সেই কথাটি ফের শোনা হয়ে গেলো।

একটা গবেষণা করা যেতে পারে, বাংলাদেশের কত শতাংশ মানুষ এই ধারণাটি বা কথাটি প্রসঙ্গক্রমে বলেন। গবেষণায় যদি দেখা যায় এর হার তুলনামূলক কম নয়, তবে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এরা স্বাধীন দেশের বাসিন্দা হয়েও বোঝে না বা মেনে নিতে পারে না ‘স্বাধীনতা’ শব্দটি!

এদের কাছে ১৯৫২, ১৯৫৬, ১৯৬৬, ১৯৬৯, ১৯৭০ এবং ১৯৭১ একেকটি সাল বৈ আর কিছু নয়। এই সালগুলোর তাৎপর্য এদের মেনে নিতে কষ্ট হয় বললে ভুল হবে না। স্বাধীনতা শব্দটির জন্য এদেশের মানুষ যে কত ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে তার মূল্যায়ন করতে পারে না এদেশীয়ই কিছু মানুষ। যারা বলে থাকে, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়নি’! আমি নিশ্চিত এরা সেই ধারণাই (পাকিস্তান আমলের) বুকে লালন করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য এই যে ত্যাগ, এতো প্রাণ বিসর্জন- এগুলো এরা কখনও উপলব্ধি করার চেষ্টা করেনি, করবেও না। কারণ তারা অকৃতজ্ঞ।

এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আমার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক। তিনি জানতেন কিভাবে মেরুদণ্ড সোজা রেখে মাথা উঁচু করে চলতে হয়। আমার বাবাকে কখনও শার্ট, প্যান্ট, জুতা- এই পোশাকগুলোতে দেখিনি। উনার সব সময় পোশাক ছিল পায়জামা-পাঞ্জাবি আর বাসায় লুঙ্গি। আমরা ভাই-বোনেরা (চার ভাই-দুই বোন) ভাবতাম উনি এই পোশাক পরে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন বলেই পরেন। এর পেছনে যে অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে এটি আমরা ছেলেবেলায় চিন্তাও করিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর, আম্মা হঠাৎ একটি ঘটনা বললেন, ঘটনাটি এরকম- আমার বাবা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেননি, যেহেতু তিনি শিক্ষক ছিলেন তার দায়িত্ব ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং ক্যাম্পগুলোতে যুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা এবং বলা- কেন আমরা যুদ্ধ করছি, কী হবে দেশ স্বাধীন হলে ইত্যাদি ইত্যাদি।

মুক্তিযুদ্ধের যখন ছয় মাস পেরিয়ে গেছে, ঠিক তখন তিনি একটি শপথ করলেন- যদি আমরা স্বাধীন হই তাহলে জীবনে আর কখনও প্যান্ট, শার্ট আর জুতো পরবো না। স্বাধীন দেশে কেবলই পায়জামা-পাঞ্জাবি পরবেন। বাবা যা বলেছিলেন, ঠিক তাই করে গেছেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কখনও তাকে শার্ট-প্যান্ট-জুতোতে দেখিনি।

ঘটনাটি ব্যক্তিগত এবং খুব তুচ্ছ মনে হতে পারে। কিন্তু একবার ভালোভাবে চিন্তা করে দেখলে এখন বুঝি কতটা আত্মত্যাগ থাকলে এই ধরনের শপথ করা যায়। সেই ’৭১ বাবাকে কতটা উদ্দীপনা দিয়েছিল, যে তিনি এমন শপথ করেছিলেন। স্বাধীনতার জন্য ৩০ লাখ মানুষের জীবন দান আর মা-বোনদের সম্মানহানির সঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই আত্মত্যাগগুলোও বৃথা যেতে পারে না। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, এই আত্মত্যাগগুলোও থাকবে। আর এই আত্মত্যাগগুলোর চেতনায় দেশে থেকেও যারা দেশের প্রতি অকৃতজ্ঞ তাদের সব পদচিহ্ন ধুলিকণায় উড়িয়ে দিতে যথেষ্ট। সে জন্য স্বাধীন বাংলায় দায়িত্ব আমাদের। ভালোবাসতে হবে প্রিয় দেশকে, তাতে আরও এগিয়ে যাবে আগামীর বাংলাদেশ।

লেখক: নাট্যকার, বেসরকারি চাকরিজীবী

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, মার্চ ২৪, ২০১৬
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।