ঢাকা, সোমবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

কালেঙ্গায় কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
কালেঙ্গায় কেঁচো সার উৎপাদনে সফলতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

অধিক ফসলের আশায় কৃষকরা যেমন উন্নত বীজ ব্যবহার করছেন তেমনি রাসায়নিক সার ব্যবহারেরও প্রবণতা বেড়েছে বহুগুণ।

কিন্তু ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সার ব্যবহার মানব দেহের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

ফসল উৎপাদনে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

জৈব সার ব্যবহার করেও অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তারা। এতে স্বাস্থ্যসম্মত ফলস উৎপাদনের পাশাপাশি পরিবেশও রক্ষা পাবে।

এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রাম পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে জৈব সার ব্যবহারের প্রচলন ও প্রসারের লক্ষ্যে সিলেট অঞ্চলে কেঁচো সার উৎপাদন প্রদর্শনী স্থাপন করেছে ইউএসএইড’র ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্প।

ইউএসএইড’র অর্থায়নে ক্লাইমেট-রেজিলিয়েন্ট ইকোসিস্টেমস অ্যান্ড লাইভলিহুডস (ক্রেল) প্রকল্পের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের  রক্ষিত বনাঞ্চল ও জলাভূমিগুলোতে সহ-ব্যবস্থাপনার সফল প্রয়োগের মাধ্যমে জলবায়ুসহিষ্ণু টেকসই ও পরিবেশ সম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর জীবিকাবহুমূখীকরণের জন্যে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্টাডিজ (সিএনআরএস)’।

ক্রেল প্রকল্প সিলেট অঞ্চলে কেঁচো সার উৎপাদনের ৬টি প্রদর্শনী স্থাপন করেছে। এরমধ্যে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সাইটে তিনটি (Rema-Kalenga Wildlife Sanctuary (RKWS) or Rema-Kalenga WS) ।
বর্তমানে রেমা-কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য সাইটে সফলতার সঙ্গে কেঁচো সার উৎপাদন করে যাচ্ছে চামলতলী গ্রামের কৃষক ফিরোজ মিয়া ও জাহাঙ্গীর মিয়া এবং লাতুরগাঁও গ্রামের মো. আবু তাহের মীর।
থাইল্যান্ডের এপি জেইক (AP Jaik) জাতের কেঁচো থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে এ জৈব সার। এর প্রতি কেজি কেঁচোর বাজার মূল্য এক হাজার ৫০০  টাকা। গোবর ও কলা গাছ ব্যবহারের মাধ্যমে কেঁচো থেকে এ সার তৈরিতে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে।

প্রতি কেজি সারের বাজার মূল্য ১৫ থেকে ২০  টাকা। সার তৈরির পাশাপাশি কেঁচো বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে আশাবাদী ফিরোজ মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া ও আবু তাহের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেঁচো কম্পোস্ট একটি জৈব সার যা জমির উর্বরতা বাড়াতে ব্যবহার করা হয়। গোবর, কলাগাছ, গাছের পাতা, খড়, লতা, পাতা, পচনশীল আবর্জনা ইত্যাদি খেয়ে কেঁচো মলত্যাগ করে এবং এর সঙ্গে কেঁচোর দেহ থেকে রাসায়নিক পদার্থ বের হয়ে কেঁচো কম্পোস্ট তৈরি হয়।

ক্রেল প্রকল্পের উপকারভোগী ও চামলতলীগ্রামের সবজি চাষী মো. ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘ক্রেল প্রকল্পের পক্ষ থেকে আমাকে কেঁচো সার উৎপাদনের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। আমি শুনেছি কেঁচো সার ব্যবহার করে সবজি চাষ করলে ফলন অনেক ভালো হয়। প্রথমবার কেঁচো সার উৎপাদন শেড থেকে আমি ৭০ কেজি সার পেয়েছি। আমিএখন থেকে সবজি চাষে কেঁচো সার ব্যবহার করবো। ’

তিনি আরো বলেন, ‘চামলতলী গ্রামের অনেক কৃষক আমাদের প্রদর্শনী দেখে কেঁচো সার ব্যবহার করার জন্য উৎসাহিত হয়েছে। আমার কাছ থেকে সার কিনতে চাচ্ছে কিন্তু আমি প্রথমবারের সার বিক্রি করবো না। নিজেই ব্যবহার করবো।

‘পরের বার থেকে নিজে ব্যবহারের পাশাপাশি বিক্রিও করবো। আর আমাকে যে কেঁচো দেওয়া হয়েছে তা এখন বংশবৃদ্ধি করে চারগুণ হয়েছে। যা আমি ভবিষ্যতে বিক্রি করতে পারবো। ’

ক্রেল প্রকল্পের লাইভলিহুড ফেসিলিটেটর শরীফুজ্জামান বলেন, ‘রাসায়নিক সারের ক্ষতিকারক দিক বিবেচনায় রেখে কেঁচো থেকে জৈব সার উৎপাদনের এ প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে ক্রেল প্রকল্প। আগামীতে আমাদের প্রদর্শনীর দেখাদেখি এলাকায় অনেক কৃষক এ সার উৎপাদনে এগিয়ে আসবেন। ইতোমধ্যে আমরা গ্রামের কৃষকদের অনেক সাড়া পেয়েছি। এ থেকে চাষিরা সুফল পাবেন। ’

চুনারুঘাট উপজেলায় বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশ ওক্যুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট (ওশি) ফাউন্ডেশনতাদের অর্থায়নে ক্রেল প্রকল্পের কারিগরি সহযোগিতা ও উপকারভোগীদের নিয়ে কয়েকটি কেঁচো সার উৎপাদনের প্রদর্শনী স্থাপন করবে বলে একমত হয়েছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, কেঁচো সার ফসলের জন্য খুবই উপযোগী। রাসায়নিক সারের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করলে, জমির উর্বরা শক্তি অনেকাংশে বাড়বে।

‘মানুষের অসুখহলে ওষুধ সেবন করতে হয়। কিন্তু ডাক্তাররা অসুখ ভালো হলে আর ওষুধ না নিয়ে ভিটামিন বা পুষ্টিকর খাবার খেতে বলেন। তেমনি মাটির উর্বরা শক্তি কমে যাওয়ার ফলে কৃষকেরা জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করছে। এটা মানুষের ওষুধ খাওয়ার মতো। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।