আজকের রাজনৈতিক দীনতার মূলে লুটপাট, চাঁদাবাজি আর দুর্নীতি। রাজনীতির পুরো শরীরে, শিরা-উপশিরায়, পরতে পরতে অবক্ষয়ের চিহ্ন।
লম্পট নামে খ্যাত এরশাদ এখন সব ‘খ্যাতিতে’ বিগত যৌবন। উনার সাবেক সহকর্মী মওদুদতো অনেক আগেই উনাকে টেক্কা দিয়েছেন। কিছুদিন আগেও গাজীপুরের বাগান বাড়ীতে নির্বাচিত হতো বিভিন্ন পেশার নারী নেতৃত্ব। অনেক মন্ত্রী শুনি, নারী-প্রেমে বিভোর। এরশাদের জমানায়ও ছাত্র রাজনীতি এতোটা কলুষিত ছিলো না। তখনো ছাত্রনেতৃত্ব সন্তুষ্ট থাকতো রিক্সার লাইসেন্সে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর রাজপথের ছাত্রনেতারা রাতারাতি পাজেরোর মালিকানায় ধন্য হলেন ডাকসু ভিপি’র নেতৃত্বে। তুখোড় ছাত্রনেতাদের মধ্যে কেবল ছাত্র ইউনিয়নের তাহের উল্ল্যা ও ছাত্র মৈত্রীর নাজমুল প্রধান অর্থকষ্টে দেশ ছেড়েছিলেন। বাদবাকীরা প্রায় নব্য কোটিপতি। সেই ‘শুভ’ সূচনা। ছাত্র রাজনীতির পচনের সেই শুরু।
এলিফ্যান্ট রোডের চাঁদাবাজির বিকেন্দ্রীকরণে চাঁদাবাজি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাংলাদেশে। গ্রাম-গঞ্জে। চাঁদাবাজিতে তীব্র প্রতিযোগিতায় শুরু হয় ছাত্রনেতাদের আয়ের নতুন খাত অন্বেষণ। বিনা যোগ্যতায় বিনাকাজে বিপুল টাকা রোজগারের একমাত্র উৎস হিসেবে তালিকার শীর্ষে উঠে আসে ঠিকাদারী। জাতীয় রাজনীতিকেরা ছাত্রনেতাদের এই ’চাহিদার’ সুযোগে ছোটখাটো কালভার্ট-ব্রিজের কাজ ধরিয়ে দিয়ে গড়ে তোলেন পেটোয়া বাহিনী। সাংসদ ও ক্ষমতাসীন নেতাদের পেটোয়া বাহিনী মানেই ছাত্র নেতাদের অর্থ-বিত্ত। কালক্রমে যুব নেতৃত্বও শরীক হয় এই প্রক্রিয়ায়। তদবীর বাণিজ্যকে ছাড়িয়ে সবচেয়ে লাভজনক হয়ে ওঠে ঠিকাদারী ব্যবসা। ছাত্র-যুবকদের পেটোয়া বানিয়ে নেতারা লুটতে শুরু করেন জাতীয় সম্পদ। নিজেরা শুরু করেন খাসজমি ও অন্যের সম্পদ লুট।
ঠিকাদারীর কাজ-কর্ম বাগানো সহজ করে তোলেন দুর্নীতিবাজ সরকারী প্রকৌশলীরা। শহররক্ষা বাঁধগুলো ঠিক করা শুরু হয় ঘোর বর্ষার মরশুমে। কুড়ি বস্তা বালির বিপরীতে বিল লেখা হয় কুড়ি হাজার বস্তা। পাল্লা দিয়ে চলে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। সামান্য একটু মেরামতে বিল বিশ কিলোমিটারের। দরপত্রে উল্লেখ থাকে, ছয় ইঞ্চি কার্পেটিং। হয় আধা ইঞ্চি। শর্ত থাকে এক নম্বর মাল মশল্লা দেবার। দেয়া হয় নয়-দশ নম্বর। সিমেন্ট-বালুর মিশ্রন থাকার কথা এক/পাঁচ। থাকে এক/পঁচিশ। এই দরপত্র গুলো ভাগ-যোগে নেন ক্ষমতাসীন ছাত্র-যুব নেতৃত্ব। প্রকৌশলীরা নেন কুড়ি থেকে চল্লিশ শতাংশ। আর জাতীয় নেতৃত্বের ’সম্মানী’ ’মাত্র পনেরো’। এক কোটি টাকার টেন্ডারের বিপরীতে কাজ হয় মাত্র দশ লাখের। বাকী টাকা হরিলুটে যায়।
ঠিকাদারীর লাভজনক লোভেই ছাত্র-যুব সংগঠনগুলোতে এতো হানাহানি। মারামারি। আউট অব কন্ট্রোল। ক্ষমতাসীন ছাত্র-যুব বাহিনীর যখন পৌষ মাস, বিরোধীদের তখন সর্বনাশ। তাদের দীর্ঘশ্বাস প্রলম্বিত হয় আগামীর প্রত্যাশায়। জাতীয় আর ছাত্র-যুব রাজনীতির লুটপাট আর দুনীতির সম্মিলিত ঐকতানে বাংলাদেশের সড়ক নির্মাণ আর মেরামত চলে। নিদেন পক্ষে বছরে দু’বার। কিন্তু অবস্হা তথৈবচ। কুড়ি বছরের পাল্টাপাল্টি ও ভাগাভাগির সড়ক মেরামতের প্রহসনে রাজার হাসি হাসেন সড়ক ও জনপদের প্রকৌশলীরা। দেশে-বিদেশে পরিবার ও সন্তানের নামে জমা হতে থাকে সম্পদ। বাড়ে জন দুর্ভোগ। অপচয় বাড়তে থাকে। বাড়তি খরচার দোহাইয়ে বাড়ে যানবাহন ভাড়া।
চলাচলের অযোগ্য সড়কগুলো জরুরিভিত্তিতে মেরামতের জন্যে দেয়া বরাদ্দে সড়ক মেরামত হবে বলে মনে হয় না। দুর্দশাগ্রস্ত রাস্তার ওপর সামান্য প্রলেপ পড়বে। ঈদে বাড়ি আসা-যাওয়ার উপযোগী হবে রাস্তাঘাট। কিছুটা প্রশমিত হবে মানুষের ক্ষোভ কিন্তু রাস্তাঘাটের মেকআপ খসে গেলে কী হবে?
সাতদিনে সড়ক মেরামতের বিশেষ নির্দেশ ও বরাদ্দ কোনো কাজে আসবে বিশ্বাস হতে চায় না। মালুম হয়, এটা ছাত্র-যুবলীগের জন্যে বিশেষ ঈদ বোনাস। কারণ দরপত্র ছিনতাইকারীরা এবার বিনা দরপত্রেই কাজগুলো পাবেন।
ইমেলঃ [email protected]