ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

ঢের হয়েছে! এবার পুলিশকে থামান

মাহবুব মিঠু, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১
ঢের হয়েছে! এবার পুলিশকে থামান

অনলাইনে বাংলানিউজে চোখ রাখতেই ভেসে উঠল একটা দুঃখজনক খবর- স্কয়ার হাসপাতালে অ্যাডভোকেট এম ইউ আহমেদের মৃত্যু। খবরটা পড়ে এবার আর শিউড়ে উঠলাম না।

কারণ আমাদের পুলিশ যে কাপুরুষ, থানার ভিতর ধরে নিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করে, নির্যাতন করে এটা এখন নিত্যনৈমত্যিক ঘটনা। তাই এখন আর শিউরে উঠি না, রাগে গা ঘিন ঘিন করে ওঠে।

লেখাটা কি দিয়ে শুরু করবো ভেবে উঠতে পারছিলাম না। শেষে ভাবলাম, পুলিশ কর্তৃক সংঘটিত সাম্প্রতিক বীভৎস ঘটনাগুলোকে একখানে আনা। জানি এতে তাদের আচরণের ওপর বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়বে না। তবুও রাগে নিজের কাচের গ্লাস না ভেঙ্গে অন্তত এ কাজটি করে রাগের প্রশমনের মিথ্যা চেষ্টা।

এক: আমিন বাজারে পুলিশের উপস্থিতিতে জনতা কর্তৃক ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা;

দুই: ১৫ জুলাই, খিলগাঁও থানার পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগের মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র আব্দুল কাদেরকে ধরে নিয়ে মিথ্যা ডাকাতি কেসে ফাঁসিয়ে থানার ভিতরে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।

তিন: ২৭ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১ টার মধ্যে পুলিশের সরাসরি সহযোগিতা ও উৎসাহে মিলন নামে ১৬ বছরের একটা ছেলেকে পিটিয়ে মেরে ফেলে গ্রামবাসী। কথিত আছে পুলিশ তাকে প্রথমে গ্রেপ্তার করে গাডিতে ওঠায়। এরপরে জনতাকে ডেকে এনে মিলনকে তাদের হাতে ছেড়ে দেয় এবং পিটিয়ে মেরে ফেলতে জনতাকে আহবান জানায়।

চার: গত কয়েক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রামের ফয়স লেক থেকে প্রেমিক জুটিকে ধরে হোটেলে নিয়ে গিয়ে প্রেমিকাকে পুলিশ কর্মকর্তার ধর্ষণের চেষ্টা।

পাঁচ: রাজশাহীতে পুলিশের এসির নেতৃত্বে ডাক্তার দম্পতির বাসায় হানা দিয়ে তাদের জিম্মি করে এক লাখ টাকা চাঁদা আদায়।

ছয়: ভোলার লালমোহন থানায় মামলার খবর নিতে আসা এক গৃহবধূকে থানার পিছনে মার্কেটে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা

সাত: পালিয়ে বিয়ে করায় এক যুবককে থানায় ধরে এনে স্ত্রী এবং বাবা মায়ের সামনে ন্যাংটো করে ঝুলিয়ে পেটায় পুলিশ।

আট: গত ৩১ জুলাই দয়াগঞ্জ বাজার থেকে তিন যুবককে ডিবি পুলিশের তুলে নিয়ে যাওয়া ও পরে হত্যা।

নয়: তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা আন্দোলনের প্রধান অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ও রেহনুমা আহমেদকে রাজপথে নির্যাতন।

দশ: হরতালের সময় বিরোধী দলের চিফ হুইপকে সংসদ ভবনের সামনে কুরুচিপূর্ণ গালাগালি এবং জঘন্যভাবে শারীরিক নির্যাতন।

এগার: জাতীয় সংসদ সদস্য, সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সৈয়দা আশিফা আশরাফি পাপিয়াকে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় বাথরুমে যাওয়ার সুযোগ না দিয়ে থানার ভিতরে দাঁড় করিয়ে রাখা।

বার: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবু বক্কর সিদ্দিক রাজনকে গ্রেফতারের পরপর পুলিশের গাড়িতে চড় থাপ্পর মারা

তের: স্বর্ণ ছিনতাই করতে গিয়ে পুলিশের কতিপয় সদস্য গ্রেফতার।

এ সবই বিগত দুই মাসের ঘটনা মাত্র এবং শুধুমাত্র সেইগুলো যেগুলো লুকানো যায়নি কিংবা সংবাদপত্রে কোনোওভাবে চলে এসেছে। এর বাইরে যে কতো ঘটনা অহরহ ঘটে চলেছে; বিশেষত পুলিশ হেফাজতে তার হিসেব কে রাখে! পুলিশের বাড়াবাড়ি সব সময়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।   তাই আর কোনও কারণ বিশ্লেষণ কিংবা আর কোনও মন্তব্য নয়। একটাই কথা: ঢের হয়েছে। এবার পুলিশকে থামান!

মাহবুব মিঠু, সমাজ গবেষক
[email protected]
বাংলাদেশ সময় ১৭৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।