ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মুক্তমত

বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে

যদি আরেকটু সময় পেতাম...

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৭
যদি আরেকটু সময় পেতাম... বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৭ ছবি: দীপু মালাকার

বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে আউট। বরাবরের মতো এবারও সবাই এক হয়েছি সপরিবারে এই অনন্য আয়োজনে। ২৪ ঘণ্টার অনলাইন নিউজপোর্টাল, তাই আমরা সবাই ২৪ ঘণ্টার সাংবাদিক। দিনে দুই-তিন ঘণ্টা বা সাড়ে তিন ঘণ্টার সংবাদকর্মী নই যে, ব্যবসা, বিবি আর বান্ধবীকে সময় দেওয়ার পর হাতে দুই-তিন ঘণ্টা সময় থাকে, ওই সময়ে একটা ‘অনলাইন’ সিল-ছপ্পর থাকলে মন্দ কি! তাই আমাদের ব্যস্ততা ২৪ ঘণ্টার, সাংবাদিকতাও তাই। এভাবেই কেটে যায় আমাদের দিন, মাস, বছর। তাই সারাবছর অপেক্ষায় থাকি সবাই মিলে একটা দিনের আনন্দ আয়োজনের।

আমাদের মূল মন্ত্র ‘সংবাদ বিনোদন সারাক্ষণ’। এই দিনে খুঁজে ফিরি সংবাদ-আনন্দ-বিনোদন।

লক্ষ্যণীয়, শত আনন্দ বিনোদনের মাঝেও আমরা সংবাদ থেকে বিচ্যুত হই না। তাই আমাদের ভ্রাম্যমাণ নিউজরুম সবসময় সক্রিয় থাকে।

ভোর ৬টা থেকে ডে আউটের জন্য বেরিয়ে পড়ি আর রাত ১১টায় ঢাকায় ফিরি। এসময়ের মধ্যে আমরা দেশের কোনো জরুরি সংবাদ মিস করিনি। প্রতিটি জরুরি নিউজই আমরা আপ করেছি। গতকাল (১ ফেব্রুয়ারি) আমাদের প্রকাশিত শীর্ষ নিউজগুলোর মধ্যে ছিল, ‘জেএমবির আইটি প্রধানসহ ৪ জঙ্গি আটক’, ‘ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট ঢাকায়’, ‘শুরু হচ্ছে মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলা’, ‘হবিগঞ্জে স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড’, ‘এবার সানি ও তার মায়ের বিরুদ্ধে তরুণীর যৌতুকের মামলা’, ‘গাইবান্ধায় পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার ৪৯’, ‘ট্রাম্পের কার্যকলাপে শংকায় টেক জায়ান্টরা’, ‘হাতিয়া‍য় ঠ্যাংগার চর পাঠানো হবে রোহিঙ্গাদের’, ‘ভারত সফরে মোস্তাফিজ বাদ; ফিরেছেন শফিউল ও লিটন’। এসব সংবাদের মধ্যে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ, মফস্বল ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের সংবাদই রয়েছে। রয়েছে বিনোদন ও ফিচার বিষয়ক লেখাও। গতকাল অফিসের বাইরে থেকেই সকাল ৬টা থেকে রাত এগারটা পর্যন্ত ২৪টি নিউজ আপ হয়েছে।
বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৭ ছবি: দীপু মালাকার
ফ্যামিলি ডের এবারের গন্তব্য ছিল লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। দেশের অন্যতম চিরহরিৎ বন লাউয়াছড়া। এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দেশের অন্যতম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য লাউয়াছড়া। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এ বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর। বিরল প্রজাতির অনেক জীবজন্তু এখানে রয়েছে।

ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ট্রেনে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার ভ্রমণ। শ্রীমঙ্গল থেকে বাসে লাউয়াছড়া আরও ২০-২৫ মিনিট। একদিনের জন্য এতো দূর গিয়ে পিকনিক করে আবার ট্রেনে ফিরে আসা (শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরতি ট্রেন ৫টা ৩০মিনিট) বেশ কঠিনই বটে। কারও মনে হয়তো ভাবনা ছিল, ধারে-কাছে কোথাও গেলে হয় না? কিন্তু যাওয়ার পর সে ধারণা বদলে গেলো সবার। যাওয়ার পর মনে হলো লাউয়াছড়ার চেয়ে ভালো গন্তব্য আর কী হতে পারে? লাউয়াছড়াকে স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছেন এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। স্বজন-শুভানুধ্যায়ীরা তাকে প্রাণী, জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশবান্ধব একজন মানুষ হিসেবেই চেনেন।
বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৭ ছবি: দীপু মালাকার
এবারের ভ্রমণে তিনি এখানে ৪টি পাতিসরালি, ১টি গন্ধগোকুল ও ১টি মেছোভাগ ও একবনবিড়াল অবমুক্ত করেছেন। রোপণ করেছেন একটি বকুলচারা। এর আগেও তিনি লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণী অবমুক্ত করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনাচারে এডিটর ইন চিফ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কাজগুলো পরিহার করে চলার চেষ্টা করেন। যা অধিকাংশ মানুষই গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু পরিবেশ বাঁচাতে হলে, নিজে বাঁচতে হলে পরিবেশবান্ধব জীবনাচারের কোনো বিকল্প নেই। এটি পুরোপুরি উপলব্ধির একটি বিষয়।
বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৭ ছবি: দীপু মালাকার
সেজন্য লাউয়াছড়ার বন্যপ্রাণী ও পরিবেশের প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলানিউজ একটি সচেতনতামূল সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে। যা সবার চোখে পড়বে। এটিও পরিবেশ রক্ষার একটি শুভ উদ্যোগ।

শ্রীমঙ্গল থেকে লাউয়াছড়ার পথ ধরে ক্রমেই আমরা হারিয়ে যাচ্ছিলাম এক গভীর অরণ্যে বুকে। দৃষ্টির পুরোটা জুড়ে শুধুই সবুজ বৃক্ষরাজি। বাস থেকে লাউয়াছড়ায় নেমে মনে হলো যেন সারা বছরের ক্লান্তি বুঝি মুহূর্তেই উবে গেলো। লাউয়াছড়া আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি আমাদের ঐতিহ্য। আমরা হয়তো ঢাকার আশে-পাশে অনেক ঝকঝকে স্পট পেতাম। কিন্তু দেশে লাউয়াছড়া তো একটাই। আমাদের অনেকেই লাউয়াছড়ায় কখনো যাইনি। হয়তো কখনো যাওয়াও হতো না। কিন্তু এডিটর ইন চিফ ‘সপরিবারে’ দেশের এই জাতীয় সম্পদ জাতীয় উদ্যানটির সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আমরা এখন বলতে পারবো, ‘আমিতো লাউয়াছড়ায় গেছি, আপনি এখনও যাননি?’। না গেলে আজই প্লান করুন।
বন্যপ্রাণী অবমুক্তকরেন বাংলানিউজের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন- ছবি: দীপু মালাকার
আনন্দ-আয়োজনের কমতি বাংলানিউজে কখনো কমতি থাকে না। আর ফ্যামিলি ডে’তে তা উপচে পড়ে। ট্রেনের তিনটি বগিতে কমলাপুর থেকে আমরা ২০০ জন সহকর্মী-বন্ধু চেপে বসলাম ভোর ৬টা ২০ মিনিটে (এয়ারপোর্ট স্টেশন থেকেও উঠলো অনেকে)। কিছুক্ষণ পর সকালের নাস্তা। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই শুরু হলো বিরতি দিয়ে একের পর এক খাবার বিতরণ। যা চললো শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত। ফিরতি ট্রেনেও একই অবস্থা। চিপস, পিঠা, ফল, জুস, জিরাপানি, চানাচুর, ডাল, আচার, ডিমসহ আরও অনেক কিছু। ট্রেনে যাওয়া আসার পথে সেকি নাচ-গান-হাসি-আনন্দ-কৌতুক! আর একেক গ্রুপের সে কি নাম, ঘুমকাতুরে-হাসিঠাট্টা ইত্যাদি। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছে আমাদের প্রিয় সহকর্মী-বন্ধুরা, যা আনন্দকে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণ।  

পিকনিক স্পটে গিয়েও সেই একই আয়োজন। স্পটে প্রবেশ করেই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল আনারস, বড়ই, পিঠা, তেতুলসহ আরও কয়েকটি ফল। আমাদের অগ্রবর্তী একটি টিম আগে থেকেই সব কিছু প্রস্তুত করে রেখেছে। তারা মাঠ পরিষ্কার করা থেকে শুরু করে এর সৌন্দর্য বর্ধন, খাওয়া-দাওয়া ও বিনোদনের যাবতীয় ব্যবস্থাই করে রেখেছে। হাতি ঘোড়াও ছিল। তার পিঠে সওয়ার হয়েছে অনেকে। শিশুদের সেকি আনন্দ! তুখোড় শিশুরা মঞ্চে এসে একের পর এক গান, ছড়া আরও কতো কী! সহকর্মী-বন্ধুরা সবাই সবার পরিবারের সঙ্গে মিলেমিশে একাকার। শিশুরা মুহূর্তেই সবাই সবার বন্ধু হয়ে গেলো। সম্পর্কের এ বন্ধন আরও গভীর হলো লাউয়াছড়ায়।
বাংলানিউজ ফ্যামিলি ডে-২০১৭ ছবি: দীপু মালাকার
সময় খবু বেশি ছিল না। তাই যতোটা সম্ভব বনের ট্রেইল ধরে সবাই ঘুরে এলো বনে। ফিরে এসে মহা ভুরিভোজ। বিরিয়ানি, রোস্ট, বোরহানি, মিষ্টি, পানীয় ইত্যাদি। খেলাধুলার সময় খুব বেশি ছিল না। তবে প্রতিবছরের মতো রশি টানাটানি এ বছরও আমাদের আনন্দ দিল।   এ নিয়ে নিউজরুম ও রিপোর্টিং টিমের চিরকালের মধুর বিরোধ এবারেও মীমাংসা হলো না। যদিও এবার জিতলো নিউজরুম। দিন শেষে সবার হাতেই কোনো না কোনো গিফট। লটারিতে নগদ টাকা, ফ্রিজ, ঢাকা টু কলকাতা, ব্যাংকক, কাঠমান্ডুর রিটার্ন টিকেটসহ আরও নানা আকর্ষণীয় পুরষ্কার। সব কিছু মিলিয়ে আমাদের জন্য এ এক মহা-আনন্দযজ্ঞ। যার জন্য আমরা অপেক্ষা করে থাকি পুরো ৩৬৪ দিন।
বাংলানিউজ এক্সপ্রেস ট্রেন, ছবি: বাংলানিউজএডিটর ইন চিফ এ আয়োজনকে সফল করার জন্য একটি টিম করে দিয়েছেন। সফল আয়োজনে তারা দেখিয়েছেন তাদের দক্ষতা-আন্তরিকতা। সেইসঙ্গে এ আয়োজন সফল করতে এগিয়ে এসেছেন টি হ্যাভেন রিসোর্টের পরিচালক আবু সিদ্দিক মু. মুসা, সমাজ সেবক সুলতান মোহাম্মদ ইদ্রিস লেদু, মৌলভীবাজার বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান, লাউয়াছড়ার বাঘমারা ফরেস্ট ক্যাম্পের কর্মকর্তা জুলফু মিয়ার মতো ব্যক্তিত্বরা। তাদের সবার কাছেই আমাদের কৃতজ্ঞতা।

অবশেষে, সেই পুরনো উপলব্ধি, আনন্দের সময়গুলো কেন এতো দ্রুত চলে যায়? হ্যাঁ চলে যায়, আবার ফিরেও আসে। তবু শুধু মনে হয়, যদি আরেকটু সময় পেতাম...দেখিবার, চিনিবার, জানিবার, ভালোবাসিবার..। দেখা হবে আবার, হয়তো অন্য কোথাও। দেখবো আবার প্রিয়মুখ, প্রিয় মানুষগুলোকে অন্য কোনো প্রিয় জায়গায়, প্রিয় মুহূর্তে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৭
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।