সারা বিশ্বের সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে কিভাবে আমেরিকার কয়েকটি এয়ারপোর্টে এই দেশগুলো থেকে আগত মানুষরা আটকা পড়েছেন এবং কিভাবে আমেরিকার নাগরিকরা এই আদেশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছেন। দুটি আদালত এই নির্বাহী আদেশের কিছু অংশের কার্যকারিতা স্থগিতের আদেশ দিয়ে যারা এরই মধ্যে আমেরিকার এয়ারপোর্টগুলোতে পৌঁছে গেছেন তাদেরকে দেশেরভিতরে প্রবেশ করতে দিতে বলেছে।
সবাই বলছেন, এটি মুসালমানদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা। অবশ্য ট্রাম্প প্রশাসন বলছে অন্য কথা। তাঁদের মতে, এটি কোনোভাবেই মুসলমান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা নয়। কেননা বেশির ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশই এই নির্বাহী আদেশের বাইরে। কাগজে-কলমে তা সত্যি হলেওআদর্শিক দিক থেকে এটি আসলেই মুসলমান-বিরোধী নিষেধাজ্ঞা। আমেরিকার অনেক মানুষই এটি অনুধাবন করতে পারছেন এবং বিভিন্নভাবে মুসলমানদের সঙ্গে সহমর্মিতা প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে রাজনীতিবিদ সহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বলেছেন, যদি মুসলমানদের রেজিস্ট্রিকরানোর জন্য কোনো আদেশ জারি করা হলে তাঁরা নিজেদের নাম মুসলমান হিসেবে রেজিস্ট্রিভুক্ত করবেন।
ট্রাম্পের এই আদেশের পর দৃশ্যত মুসলমানদের প্রতি মানুষের সমর্থন অনেক বেড়ে গেছে। আমাদের এলাকার যে মসজিদ (এটি আমাদের বাসা থেকে ১৫ মাইলের মত দূরে) সেটি প্রতিবছর দু'বার করে ওপেন হাউসের আয়োজন করে। যাতে অন্য ধর্মের লোকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়,যাতে করে তাঁরা ইসলামের সত্যিকারের মতাদর্শ আর ধর্ম পালনের রীতিনীতির সাথে পরিচিত হতে পারেন। মুসলমানদের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারির একদিন পরেই(দিনটা ছিল শনিবার) একটি ওপেন হাউসের আয়োজন করা হয়। যদিও তার ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো অনেক আগেই। সাধারণত ওপেন হাউসগুলোতে একশর বেশি লোক না হলেও এই শনিবারের ওপেন হাউসে লোক হয়েছিল এক হাজারের উপরে। ট্রাম্পের এই আদেশ অন্য ধর্মের মানুষদের উদ্বুদ্ধ করেছে মুসলমানদের প্রতি সমর্থন ও সহমর্মিতা জানাতে। সেইসঙ্গে এক কাতারে শামিল হতে। এমনকিঅনেকে নামাজ পড়তেও চেষ্টা করেছেন।
এই সমর্থন এবং সহমর্মিতা আমরা পাচ্ছি আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু, এবং সহকর্মীদের কাছ থেকেও। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট-- যিনি প্রশাসনের ২ য় ব্যক্তি--আমাকে একটি ইমেইল পাঠিয়েছেন। যার বাংলা করলে দাঁড়ায়, "আমি তোমার, তোমার পরিবার এবং তোমার বন্ধুদেরজন্য চিন্তা এবং প্রার্থনা করছি। প্রার্থনা করছি শান্তির জন্য " জবাবে আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছি, এই দেশটি যতটা ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঠিক ততটাই আমার।
এই মুহূর্তে এবং পরিস্থিতিতে একজন মুসলমান হিসেবে যেখানে আমার ভীত থাকার কথা, সেখানে আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে বলার সুযোগ পাচ্ছি যে, আমি একজন মুসলমান, আমি আমার ধর্ম পালন করি অন্য সবার মতই। আর সেই সঙ্গে এ-ও চিন্তা করছি: আমি যে বাংলাদেশ থেকেএসেছি, সেখানে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা কবে এভাবে নির্ভয়ে কথা বলতে পারবে। কবে আমরা নিপীড়িত সংখ্যালঘু মানুষদের পাশে এভাবে সহমর্মিতা নিয়ে দাঁড়াতে পারবো।
# ডঃ মাহফুজুল ইসলাম খোন্দকার: অধ্যাপক ও চেয়ার, ফৌজদারি বিচার বিভাগের, Kutztown ইউনিভার্সিটি, পেনসিলভ্যানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৭
জেএম/