সুভাষ চন্দ্র বসুর ‘আজাদী’ থেকে বঙ্গবন্ধুর ‘স্বাধীনতা’ একই সূত্রে গাঁথা। ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারত স্বাধীন হলেও বাঙালি আবার নব্য ঔপনিবেশিক শাসনচক্রে বন্দী হলো।
বাঙালির ইতিহাসে অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা যেন তার ভাগ্যলিখন। এ অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনাই বাঙালিকে লড়াকু করেছে। তাই আজও আমরা লড়ছি। আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। কিন্তু মু্ক্তির জন্য যে লড়াই আজও শেষ হয়নি। আমাদের লড়াই আজও অসমাপ্ত। স্বাধীনতার লড়াইয়ে মূল শক্তি যেমন ছিল আমাদের পূর্ব প্রজন্ম, তেমনি অসমাপ্ত এ লড়াইয়ের মূল শক্তি তারই উত্তর প্রজন্ম- আমরা। এটাই স্বাভাবিক। কারণ, উন্নত মানবিক মর্যাদা ও কল্যাণরাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম কখনো শেষ হয় না। এটি একটি নিরন্তর লড়াই ও স্বপ্ন। কথায় আছে, রক্ত যখন ঘাম হয়ে ঝরে, তখন সে লোনা পানিতে অঙ্কুরিত হয় সাফল্যের বীজ। রক্ত যাদের দেওয়ার তারা রক্ত দিয়েছেন। এবার আমাদের ঘাম ঝরানোর পালা, দেশ গড়ার পালা।
স্বাধীনতা অর্জনের ফলে আমাদের রক্ত লড়াই হয়তো শেষ হয়েছে। কিন্তু ওই যে অসমাপ্ত মুক্তির লড়াই, সে লড়াই আসলে দেশ গড়ার লড়াই, মানুষ গড়ার লড়াই। রক্তের বিনিময়ে যে জাতি স্বাধীন হয়েছে, নতুন রাষ্ট্র পেয়েছে, সে জাতি সাম্য, মৈত্রী, ভ্রাতৃত্ব ও মানবিক মর্যাদায় অনন্য হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এ লক্ষ্য অর্জনে আমাদের আরও অনেকটা পথ যেতে হবে, হয়তো যাত্রাটা আমরা শুরু করেছি।
একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রথম সাংবিধানিক দলিল হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এখানে জাতি-রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্ম-বৃত্তান্ত উল্লেখ আছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল ‘সাম্য’, ‘মানবিক মর্যাদা’ ও ‘সামাজিক ন্যায়বিচার’। স্বাধীনতার পর আজ এ প্রশ্ন আমাদের সবার, এ লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে?
স্বাধীনতার পথ থেকে বিচ্যুত হলেই আমাদের যতো বিপদ। তা না হলে আমাদের মাঝে বাসা বাঁধবে যতো বিভ্রান্তি ও দুরভিসন্ধি।
গণতন্ত্রের জন্যই আমাদের যতো সংগ্রাম। বাংলাদেশ আজ একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। একটি ঐক্যবদ্ধ ও জাগ্রত জনগণই পারে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে একটি রাষ্ট্র গঠন করতে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল ন্যায়ের যুদ্ধ। একাত্তরে আমরা অন্যায় ও অবিচারকে না বলতে পেরেছিলাম এবং আমরা জয়ী হয়েছিলাম। এটাই ইতিহাস। ইতিহাস সব সময় সত্যের পথে চলে, ন্যায়ের কথা বলে। প্রয়োজন শুধু ইতিহাসের এই ভাষাটিকে বোঝা। ইতিহাসের এ আবেগটি বোঝা খুব জরুরি, অন্তত আবেগের ইতিহাসের চেয়ে!
আমাদের ইতিহাস চর্চার জায়গাটিতে অপূর্ণতা রয়েছে। ফলে, সে জায়গাটিতে বিকৃত ইতিহাস জমাট বেঁধেছে। প্রকৃত ইতিহাসের উষ্ণ রক্তস্রোতেই সে বিকৃত ইতিহাস বিদায় হবে। তাই নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যৎ পথ চলার জন্যই ইতিহাসের জান-অজানা গলির সন্ধান লাভ জরুরি। তা না হলে অন্ধ গলিতেই ঘুরপাক খেতে হবে। ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধে জয়ী হতে হলে সঠিক পথের দেখা জরুরি।
একাত্তরে আমাদের মূল অস্ত্র আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না, ছিল ন্যায়াস্ত্র। সে ন্যায়াস্ত্র আবার নতুন করে শাণিত হোক। ইতিহাসের দায় শোধ করতে, পূর্ব প্রজন্মের ঋণ শোধ করতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উপলব্ধি ও ধারণ করতে হবে। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাঙালি যে স্বপ্নকে ধারণ করে অস্ত্র হাতে নিয়েছিল, ২০১৭ সালের এই দিনে এসে আমাদের আজকের অঙ্গীকার হোক- সেই স্বপ্নকেই ধারণ করা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০১৭
এইচএ/
আরও পড়ুন
** গণহত্যা ‘উপভোগ’ করতে ঢাকায় থেকে গেলেন ভুট্টো
** ‘পূর্ব পাকিস্তানের শ্যামল মাটি লাল করে দেয়া হবে’
** কসাই টিক্কার নির্দেশ, ‘আমি মাটি চাই, মানুষ নয়’
** ২৫ মার্চের গণহত্যার সাক্ষ্য দেন নিয়াজী
** বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন সরকার ও জনগণের বিপরীত অবস্থান
** ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ আগেই বুঝে যায় যুক্তরাষ্ট্র-চীন
** নিক্সন-কিসিঞ্জারের ‘ড্রেস রিহার্সেল’
** ইন্দিরা গান্ধীকে সাফল্যের নিশ্চয়তা জেনারেল মানেক শ’র
** নিক্সনের কাছে ইয়াহিয়ার নালিশ
** টিক্কা বললেন, আমরা আগে গুলি চালাইনি
** ‘টাইগার নিয়াজী’ হয়ে গেলেন ‘বাংলার শৃগাল’
** ইয়াহিয়াকে নিকোলাইয়ের হুমকি, সমর্থন চৌ এনলাইয়ের
** ভারতীয় সংসদে বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ
** স্বাধীনতার রক্ত-কথন
** ২৫ মার্চ অধিবেশন! অন্তরালে অপারেশন সার্চ লাইট
** ‘পাকিস্তান রক্ষা’র জন্য হানাদারদের ভুট্টোর আগাম অভিনন্দন
** শক্তির ভারসাম্য খেলায় দৃষ্টি যখন বাংলাদেশে
** স্বাধীনতার পথের বন্ধুরা